জো় বাইডেনের জমানায় চিনা হামলা থেকে তাইওয়ানকে রক্ষা করার জন্য পূর্ব চিন সাগর অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছিল তাকে। কিন্তু সোমবার তাইওয়ান প্রণালী থেকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিমানবাহী মার্কিন রণতরী ইউএসএস নিম্ৎজ় পশ্চিম এশিয়ার উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
ইজ়রায়েল-ইরান সংঘর্ষ পরিস্থিতিতে পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন সেনাঘাঁটিগুলির নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে সঙ্কট তৈরি হওয়ায় মার্কিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ডের অধীনস্থ ‘নিমিৎজ় ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ’ (আদতে ওই বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ এবং তার সহযোগী কয়েকটি ডেস্ট্রয়ার এবং কর্ভেট শ্রেণির রণতরী) ওমান উপসাগরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে বলে প্রকাশিত কয়েকটি খবরে দাবি। গত শুক্রবার ইরানের কয়েকটি পরমাণুকেন্দ্র এবং সামরিক ঘাঁটিতে ইজ়রায়েলি বিমান হামলার (যার পোশাকি নাম, ‘অপারেশন রাইজ়িং লায়ন’) পরেই পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি দেশ থেকে দূতাবাস কর্মীদের ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করেছে আমেরিকা।
পাশাপাশি, তৎপরতা শুরু হয়েছে পশ্চিম এশিয়ার মার্কিন সেনাঘাঁটিগুলির বাড়তি সুরক্ষার জন্য। পরমাণু চুক্তি নিয়ে টানাপড়েনের আবহে গত বুধবার আমেরিকাকে হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদে বলেছিলেন, ‘‘পশ্চিম এশিয়ার সবগুলি মার্কিন সেনাঘাঁটি কিন্তু আমাদের নাগালে রয়েছে।’’ পশ্চিম এশিয়া এবং সন্নিহিত অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে আমেরিকার মোট ১৯টি স্থায়ী এবং অস্থায়ী সেনাঘাঁটি রয়েছে। এর মধ্যে আটটি স্থায়ী ঘাঁটি বাহরিন, মিশর, ইরাক, জর্ডন, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে অবস্থিত। ঘাঁটিগুলিতে মোট প্রায় ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে মার্কিন সেনার সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম)।
পশ্চিম এশিয়ায় কোথায় কোথায় মার্কিন ঘাঁটি?
১৯৫৮ সালের জুলাই মাসে পশ্চিম এশিয়ায় আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রথম মার্কিন সেনাঘাঁটি স্থাপন করা হয়েছিল লেবাননে। তার পর থেকে ধীরে ধীরে আরব দুনিয়ার সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছে পেন্টাগন। বর্তমানে তাদের বৃহত্তম সেনা ও বিমানঘাঁটি কাতারের আল-উদেইদ। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ঘাঁটিতে বিমান এবং ড্রোন বহরের পাশাপাশি প্রায় ১০,০০০ সেনা রয়েছে। অতীত ইরাক, সিরিয়া এবং আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা অভিযান পরিচালিত হয়েছে কাতারের এই ঘাঁটি থেকেই।
একদা বাহরিনের ব্রিটিশ নৌঘাঁটি এইচএমএস জুফায়ার এখন মার্কিন পঞ্চম নৌবহরের (ফিফ্থ ফ্লিট) এনএসএ (ন্যাভাল সাপোর্ট অ্যাক্টিভিটি)-বাহরিন নামে পরিচিত। একাধিক যুদ্ধজাহাজ, বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি সেখানে প্রায় ন’হাজার সেনা মোতায়েন করেছে ‘আঙ্কল স্যাম’। কুয়েতের আরিফজ়ানে উপসাগরীয় সঙ্কটের সময় ১৯৯৯ সালে স্থায়ী সেনাঘাঁটি তৈরি করেছিল ওয়াশিংটন। গোটা পশ্চিম এশিয়ায় সামরিক নজরদারির মূল কার্যকলাপ ওই ঘাঁটি থেকে পরিচালিত হয়।
ইরানে হামলা হতে পারে কোন ঘাঁটি থেকে?
সংযুক্ত আরব আমিরশাহির আল-ধাফরা বিমানঘাঁটিও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। সেখানে এফ-২২ র্যাপটর স্টেল্থ যুদ্ধবিমান এবং গোয়ন্দা নজরদারি বিমান ‘এয়ারবোর্ন ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম’ (অ্যাওয়াক্স) রয়েছে। তবে ইরানের উপর আমেরিকার নজরদারির মূল কার্যকলাপ চলে পড়শি দেশের এরবিল বিমানঘাঁটি থেকে। গত এক দশক ধরে সিরিয়ায় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে ওই ঘাঁটি থেকেই মূলত মার্কিন হামলা হয়েছে। তুরস্কের মদতপুষ্ট বিদ্রোহী বাহিনীর কাছে পরাস্ত হয়ে গত ডিসেম্বরে সিরিয়া ছেড়েছিলেন রাশিয়া এবং ইরানের সমর্থনপুষ্ট আসাদ।