Advertisement
E-Paper

হঠাৎই বিপরীত হাওয়া, সিরিয়ায় ‘মুখোমুখি সমরে’ আমেরিকা আর রাশিয়া

আজ যে বন্ধু, কাল সে শত্রু হতেও পারে। রাজনীতির এই চিরাচরিত সূত্রটি এ বার ট্রাম্প আর পুতিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কি খেটে যাবে? আমেরিকা ও রাশিয়া ফিরে যাবে পরিচিত বৈরিতায়?

রত্নাঙ্ক ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৭ ১৪:১৪
এই যুদ্ধজাহাজ থেকেই ছোড়া হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: এপি।

এই যুদ্ধজাহাজ থেকেই ছোড়া হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: এপি।

আজ যে বন্ধু, কাল সে শত্রু হতেও পারে। রাজনীতির এই চিরাচরিত সূত্রটি এ বার ট্রাম্প আর পুতিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কি খেটে যাবে? আমেরিকা ও রাশিয়া ফিরে যাবে পরিচিত বৈরিতায়?
এত দিন ধরে রাশিয়া ও বিশ্বের বেশ কয়েকটি জায়গায় পুতিনের বজ্রমুষ্ঠির প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন ট্রাম্প। নিজের নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন মুক্তকণ্ঠে পুতিনের প্রশংসা করেছেন। এমনকী তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার থেকে পুতিনকে এগিয়ে রেখেছিলেন তিনি। পুতিনও প্রশংসাতে প্রত্যুত্তর দিয়েছেন। এবং পুতিন সেখানেই থেমে থাকেননি। তাঁরই গোপন নির্দেশে এ বারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ট্রাম্পের অনুকূলে প্রভাবিত করতে উদ্যোগী হয়েছিল রাশিয়ার গুপ্তচর বিভাগ। ক্রমেই আমেরিকা জুড়ে এই অভিযোগ জোরালো হচ্ছে। এই অভিযোগ নিয়ে তদন্তও শুরু হয়েছে। রাশিয়া-যোগের কারণে এর মধ্যেই ট্রাম্পের ক্যাবিনেট থেকে পদত্যাগ করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন। ট্রাম্পের ক্যাবিনেটের আরও কয়েক জনের নাম এই তদন্ত সূত্রে উঠে আসছে। তবে সব কিছুই পাল্টে গেল আজ, শুক্রবার সকালে। যখন সিরিয়ার বিমান ঘাঁটিতে আছড়ে পড়ল ৫৯টি টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র। সরাসরি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানোর আদেশ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সিরিয়ার ইদলিবে রাসায়নিক গ্যাসের হামলার এই জবাব। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আবার অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল। আসাদ পুতিন লালিত, ইরান পালিত। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রায় পদচ্যূত আসাদের জমি শক্ত করতে সেনা পাঠিয়েছিলেন পুতিন। সরাসরি পাশে দাঁড়িয়েছিল ইরান।ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত আচমকা এবং বেশ হিসেব বহির্ভূত। ইদলিবে আসাদ অনুগত সেনা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের পরেই সুর চড়াতে থাকে আমেরিকা। রাষ্ট্রপুঞ্জে আমেরিকার স্থায়ী প্রতিনিধি নিকি হেলি সরাসরি রাশিয়ার দিকে আঙুল তোলেন। তার পরেই এই হামলা। কয়েক মাস আগেই সিরিয়ায় আসাদ বিরোধী শক্তির অন্যতম ঘাঁটি আলেপ্পোর পতন হয়েছিল। আলেপ্পো দখল করতে সিরিয়ার সেনা, ইরানের শিয়া মিলিশিয়া এবং রাশিয়ার সেনা যৌথ ভাবে অভিযান চালিয়েছিল। দীর্ঘ দিন অবরুদ্ধ ছিল আলেপ্পো। ক্ষুধায়-তৃষ্ণায় কাতর সাধারণ বাসিন্দাদের বার বার আবদনেও তখন বিশেষ সাড়া দেয়নি আমেরিকা। একের পরে এক যুদ্ধাপরাধের অভিযোগেও নীরব ছিল। আলেপ্পোর পতন যেন খানিকটা মেনেই নিয়েছিল আমেরিকা। যা প্রচ্ছন্নে সিরিয়ায় আসাদের অবস্থানকেই দৃঢ় করে। আমেরিকার এই মনোভাব মধ্য এশিয়ায় তাদের চিরাচরিত বন্ধু সুন্নি-প্রধান দেশগুলির কাছে বড় ধাক্কা ছিল। কিন্তু আজ সব কিছুই এক ধাক্কায় পাল্টে গেল। যাতে স্বভাবতই খুশি সৌদি আরবেব মতো দেশ। পাশাপাশি আমেরিকা-ইরান সম্পর্ক আবার প্রশ্ন চিহ্নের সামনে পড়ে গেল। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উদ্যোগে পারমাণবিক সমঝোতার মধ্যে দিয়ে দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতির যে দুয়ার খুলেছিল, তার বিরোধিতায় ট্রাম্প সরব ছিলেন। আজ যেন সরাসরি দুয়ারটি বন্ধ করে দিলেন।


ছোড়া হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: রয়টার্স।

স্বভাবতই রাশিয়া এই হামলার নিন্দা করেছে। যদিও এই হামলার আগে রাশিয়ার সেনাকে জানিয়েছিল আমেরিকা। আলেপ্পোর পতনের পরে সেনা ফেরাতে শুরু করেছিল রাশিয়া। এর পরে আসাদকে বাঁচাতে আবার সামরিক ভাবে সক্রিয় হতে দেখা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সম্মুখ সমরেও আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তবে ট্রাম্প অনেক ধোঁয়াশা বজায় রেখেছেন। তিনিও কি ওবামা-র প্রশাসনের মতো সিরিয়ার প্রধান পদে আসাদকে মেনে নেবেন না, না কি কোনও সমঝোতায় যাবেন, তা পরিষ্কার নয়। এমনকী এই গৃহযুদ্ধের অবসানে এর পর ঠিক কোনও পথে আমেরিকা চলতে চায় তাও পরিষ্কার নয়। সব মিলিয়ে এই হামলার পরে মধ্য এশিয়া জুড়ে অস্থিরতা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা।

আরও পড়ুন: ট্রাম্পের নির্দেশে ৫৯টি টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র গুঁড়িয়ে দিল সিরিয়ার বিমানঘাঁটি

পাশাপাশি অনেকে উত্তর কোরিয়া বিষয়েও আশঙ্কিত। কারণ, এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, চিন কোনও ব্যবস্থা না নিলে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে একাই ব্যবস্থা নিতে পারে আমেরিকা। সেখানেও সামরিক অভিযানের আশঙ্কা রয়েছে। যার জবাব দিতে তৈরি উত্তর কোরিয়াও। এবং চিনও চুপ করে বসে থাকতে পারবে না। একই সঙ্গে রাশিয়া ও চিনের সঙ্গে লড়াই-এর জন্য কি প্রস্তুত ট্রাম্প? ভবিষ্যতের গর্ভে তার উত্তর লুকিয়ে আছে।

Donald Trump Vladimir Putin Syria USA Russia Chemical Attack Missile Attack
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy