অবৈধবাসী ভারতীয়দের যে ভাবে হাতকড়া পরিয়ে সেনা বিমানে চাপিয়ে এ দেশে পাঠিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী নেতারা। তার মাঝেই ওই অবৈধবাসীদের বিমানে তোলার একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন আমেরিকার বর্ডার পেট্রল (ইউএসবিপি)-র প্রধান। সেই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘বেআইনি ভাবে আমেরিকায় প্রবেশ করলে তাড়িয়ে ছাড়ব।’’
ইউএসবিপি প্রধান মাইকেল ডব্লিউ ব্যাঙ্কস ২৪ সেকেন্ডের ভিডিয়োটি পোস্ট করেছেন। ভিডিয়োর শুরুতে দেখা গিয়েছে, মার্কিন সেনার বিমান সি-১৭-এর দরজা খুলে গেল। রাতের অন্ধকারে হাতকড়া পরে সারিবদ্ধ ভাবে তাতে উঠছেন অবৈধবাসী ভারতীয়েরা। তাঁদের পায়েও দড়ি বাঁধা। ‘দাগী অপরাধী’ বা ‘যুদ্ধবন্দি’-দের যে ভাবে জেলে ঢোকানো হয়, তার সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছেন সমাজমাধ্যমের কয়েক জন ব্যবহারকারী। বিমানের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বন্দুকধারীরা। এর পরে দেখা যায়, বিমানের আসনে বসে রয়েছেন তাঁরা। ভিডিয়োর প্রেক্ষাপটে বাজছে জোরালো যন্ত্রসঙ্গীত। সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের একাংশের দাবি, আমেরিকানদের ‘দেশপ্রেম’ জাগিয়ে তুলতেই এই যন্ত্রসঙ্গীত।
এই ভিডিয়ো পোস্ট করে ব্যাঙ্কস লিখেছেন, ‘‘ইউএসবিপি এবং সহকারীরা সফল ভাবে অবৈধবাসী বহিরাগতদের ভারতে ফেরত পাঠিয়েছে। সেনার যানে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দূরত্ব পার করে অবৈধবাসীদের ফেরানো হয়েছে। অভিবাসন আইন এবং অবৈধবাসীদের দেশ থেকে অপসারণের বিষয়ে আমরা কতটা বদ্ধপরিকর, তার প্রমাণ এই অভিযান।’’ তার পরেই ব্যাঙ্কসের হুঁশিয়ারি, ‘‘যদি আপনি বেআইনি ভাবে এ দেশে আসেন, তা হলে তাড়িয়েই ছাড়ব।’’
আরও পড়ুন:
বুধবার ১০৪ জন অবৈধবাসী ভারতীয়কে নিয়ে অমৃতসরে নেমেছে মার্কিন সেনার বিমান। বাণিজ্যিক বিমানের পরিবর্তে কেন দেড়গুণ বেশি খরচ করে সেনার বিমানে পাঠানো হয়েছে এই অবৈধবাসীদের, তার ইঙ্গিত মিলেছে ট্রাম্পের মন্তব্য এবং তাঁর প্রশাসনের আধিকারিকদের টুইটে। আমেরিকার প্রশাসনের একাংশ মনে করছেন, বেআইনি ভাবে সে দেশে প্রবেশ নিয়ে কড়া বার্তা দিতেই সেনার বিমানে অবৈধবাসীদের পাঠানো হয়েছে। কারণ, অতীতে ট্রাম্প বার বার এই অবৈধবাসীদের ‘অপরাধী’, ‘বহিরাগত’ বলে দাবি করেছেন। প্রশাসনের ওই অংশের মতে, ট্রাম্পের এই দাবিকে ‘প্রতিষ্ঠিত’ করার জন্যই ওই অবৈধবাসীদের হাতকড়া পরিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে তোলা হয়েছে সেনার বিমানে। সম্প্রতি রিপাবলিকানদের একটি বৈঠকে ট্রাম্পকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ইতিহাসে প্রথম বার অবৈধবাসীদের চিহ্নিত করে আমরা সেনার বিমানে তুলেছি। যেখান থেকে তাঁরা এসেছিলেন, সেখানেই ফেরত পাঠাচ্ছি। এত বছর লোকে আমাদের নিয়ে হেসেছে। আবার আমাদের সম্মান করবে।’’
এই নিয়ে বৃহস্পতিবার সংসদে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিরোধীরা। সেই বিক্ষোভের জেরে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর রাজ্যসভায় বলেন, ‘‘এটা নতুন কোনও ঘটনা নয়। বিতাড়িত অবৈধবাসীদের সঙ্গে যাতে কোনও দুর্ব্যবহার না করা হয়, তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকার আমেরিকার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল।’’ যদিও সংবাদ সংস্থা পিটিআই প্রকাশিত খবর জানাচ্ছে, অমৃতসরে ফেরত আসা অবৈধবাসীদের কয়েক জন জানিয়েছেন, পুরো বিমানযাত্রাতেই তাঁদের হাত-পা বাঁধা ছিল।