Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
International News

ঠান্ডা যুদ্ধের দিন ফিরছে? ভেঙে গেল ৩২ বছরের পুরনো রুশ-মার্কিন চুক্তি

৩২ বছর আগে তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগন ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচভকে হাসি হাসি মুখে যে চুক্তিতে সই করতে দেখা গিয়েছিল, এই অগস্টে সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এল আমেরিকা। পরে রাশিয়াও জানিয়ে দিল, তারাও আর থাকছে না সেই চুক্তিতে।

রণং দেহি? -ফাইল ছবি।

রণং দেহি? -ফাইল ছবি।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৯ ১৪:০৬
Share: Save:

আবার কি সেই ‘ঠান্ডা যুদ্ধে’র সময়ের দিনগুলি ফিরে আসতে চলেছে? ক্ষেপণাস্ত্র হানাদারি ও পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কাকে কেন্দ্র করে ফের পেশী প্রদর্শন শুরু করবে আমেরিকা, রাশিয়া?

৩২ বছর আগে তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগন ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচভকে হাসি হাসি মুখে যে চুক্তিতে সই করতে দেখা গিয়েছিল, এই অগস্টে সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এল আমেরিকা। পরে রাশিয়াও জানিয়ে দিল, তারাও আর থাকছে না সেই চুক্তিতে। ফলে, ফের ‘ঠান্ডা যুদ্ধে’র দিনগুলি ফিরে আসার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

১৯৮৭ সালে রেগন ও গর্বাচভ যে চুক্তিতে সই করেছিলেন, তার নাম- ‘ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি (আইএনএফ)’। সেই চুক্তির প্রেক্ষিতে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার (৩১০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ মাইল) পাল্লার মধ্যে থাকা ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে নিষিদ্ধ করেছিল আমেরিকা ও রাশিয়া। ফলে, ওই পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হানার ধাক্কা যে সইতে হবে না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছিল দু’টি দেশ। চুক্তির প্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালে ২ হাজার ৭০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে আমেরিকা ও রাশিয়া।

১৯৮৭। ঐতিহাসিক চুক্তিতে সই করছেন রোনাল্ড রেগন (ডান দিকে) ও মিখাইল গর্বাচভ। ছবি- রয়টার্স

আমেরিকা ও তার বন্ধু ‘ন্যাটো’ জোটের দেশগুলি এ বছরের গোড়ার দিক থেকেই অভিযোগ করতে শুরু করে, রাশিয়া গোপনে সেই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করতে শুরু করেছে। আমেরিকা ও ন্যাটো জোটের দেশগুলিকে পাল্লার মধ্যে রেখে ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র বসাতে শুরু করেছে মস্কো।

আরও পড়ুন- ফের ঠান্ডা যুদ্ধ! আমেরিকার সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেল রাশিয়া​

আরও পড়ুন- ‘চাইলে মধ্যস্থতা করতে পারি’, ফের কাশ্মীর বিতর্ক উস্কে দিলেন ট্রাম্প, উড়িয়ে দিল নয়াদিল্লি​

বিবিসি-র খবর জানাচ্ছে, ওই সময়ই ওয়াশিংটন জানায়, রাশিয়া অনেকগুলি ‘৯এম-৭২৯’ ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র বসিয়েছে বলে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। ওই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ন্যাটো জোটের দেশগুলিতে পরিচিত ‘এসএসসি-৮’ নামে। ওয়াশিংটন তার ওই বক্তব্য জানায় ন্যাটো দেশগুলির বৈঠকেও। তাতে ন্যাটো দেশগুলিও মেনে নেয় ওই মার্কিন অভিযোগ। তার পরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, রাশিয়া যদি চুক্তিটা মেনে চলতে না চায়, তা হলে আমেরিকাও বেরিয়ে আসবে চুক্তি থেকে। আর তার জন্য তিনি ২ অগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন। তাতে যে বিশেষ আপত্তি নেই, ঠারেঠোরে তখনই তা বুঝিয়ে দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

এর ফলে যে পরমাণু যুদ্ধের দিনগুলির আশঙ্কা জোরালো ভাবে ফিরে এল, তা বুঝিয়ে দিতে দেরি করেননি রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিও গুয়েতেরস। বলেছেন, ‘‘পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতায় যে ছেদ পড়েছিল, তা আবার শুরু হতে চলেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হল অনেকটাই। এর ফলে, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হানাদারির আশঙ্কা, ওই সব অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি অবশ্যই বেড়ে যাবে। কমবে না।’’

রাশিয়ার সেই ‘৯এম-৭২৯’ ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন আমেরিকা, ন্যাটো জোট। ছবি- রয়টার্স

পরমাণু অস্ত্র প্রসার রোধে কী কী করণীয়, তা চূড়ান্ত করতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলিকে আলোচনায় বসারও অনুরোধ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব। কারণ, তাঁর উদ্বেগ, এতে আমেরিকা, রাশিয়া ও চিনের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও যুদ্ধের আশঙ্কা উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে যেতে পারে।

গুয়েতেরসের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, রাশিয়ার তরফে তার ইঙ্গিত মিলতেও দেরি হয়নি। রুশ প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ পাভেল ফেলগেনহাওয়ার বলেছেন, ‘‘চুক্তিটা আর থাকল না। এখন আমরা নতুন নতুন অস্ত্রশস্ত্রের নির্মাণ দেখব। দেখব সেই সব অস্ত্র বসানো হচ্ছে একে অন্যকে তাক করে। রাশিয়া এখনই তার জন্য তৈরি আছে।’’

৩২ বছরের পুরনো চুক্তির শেষের দিন যে ঘনিয়ে এসেছে, গত মাসে তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন ন্যাটো জোটের মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ। বলেছিলেন, ‘‘রাশিয়া যে ক্ষেপণাস্ত্র বসিয়েছে সেগুলি পরমাণু অস্ত্র বহন করতে পারে। এক জায়গা থেকে যেতে পারে অন্য জায়গায়, দ্রুত। তাদের গতিবিধি ঠাওর করাও খুব মুশকিল। সেগুলি কয়েক মিনিটের মধ্যে গুঁড়িয়ে দিতে পারে ইউরোপের শহরগুলিকে। বুঝতেই পারছি, চুক্তির দিন ফুরিয়ে এল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE