Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অন্য ওসামার খোঁজ দিচ্ছে নয়া মার্কিন নথি

তামাম দুনিয়ার আতঙ্ক বাড়ানোর জন্য শুধু নামটাই যথেষ্ট ছিল। ওসামা বিন লাদেন। তবে এই নামের পেছনের মানুষটার ব্যক্তিগত জীবনেও কম আতঙ্ক ছিল না। প্রতি মুহূর্তেই পশ্চিমী দুনিয়ায় হামলা চালানোর নতুন নতুন ষড়যন্ত্রের ছক ঘুরত মস্তিষ্কে, আর প্রতি মুহূর্তেই হৃদয় কেঁপে উঠত তাঁর বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া কোনও ষড়যন্ত্রের আশঙ্কায়। তাই স্ত্রীকে চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘তুমি আমার চোখের মণি। আমার মৃত্যুর পর কিন্তু তুমি ফের বিয়ে কোরো।’’ অবিরাম তাড়া করা মৃত্যুচিন্তাই হয়তো এই চিঠির উৎস।

নতুন ওসামা। পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদের বাড়ি থেকে পাওয়া নথিপত্রের সঙ্গেই মিলেছে এই ছবিটি। ছবি: এএফপি।

নতুন ওসামা। পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদের বাড়ি থেকে পাওয়া নথিপত্রের সঙ্গেই মিলেছে এই ছবিটি। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৫ ০৩:৩১
Share: Save:

তামাম দুনিয়ার আতঙ্ক বাড়ানোর জন্য শুধু নামটাই যথেষ্ট ছিল। ওসামা বিন লাদেন। তবে এই নামের পেছনের মানুষটার ব্যক্তিগত জীবনেও কম আতঙ্ক ছিল না। প্রতি মুহূর্তেই পশ্চিমী দুনিয়ায় হামলা চালানোর নতুন নতুন ষড়যন্ত্রের ছক ঘুরত মস্তিষ্কে, আর প্রতি মুহূর্তেই হৃদয় কেঁপে উঠত তাঁর বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া কোনও ষড়যন্ত্রের আশঙ্কায়। তাই স্ত্রীকে চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘তুমি আমার চোখের মণি। আমার মৃত্যুর পর কিন্তু তুমি ফের বিয়ে কোরো।’’ অবিরাম তাড়া করা মৃত্যুচিন্তাই হয়তো এই চিঠির উৎস।

এই একই আতঙ্কের ছাপ দেখা যায় আর এক জন স্ত্রীকে লেখা চিঠিতে। ইরান থেকে অ্যাবটাবাদে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন স্ত্রী। তখনই লাদেন তাঁকে লিখে পাঠান, ‘‘কিচ্ছু সঙ্গে করে আনবে না তুমি। জামাকাপড়, বই এমনকী একটা ছুঁচও নয়।’’ ষড়যন্ত্রের আশঙ্কায় সর্ব ক্ষণ ত্রস্ত ওসামার ভয় ছিল, প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তাঁর স্ত্রীয়ের জিনিসপত্রের মধ্যে দিয়ে তাঁর অন্দরমহলকে নজরদারির আওতায় ধরে ফেলবে আমেরিকা। এমনকী ইঞ্জেকশন নিতেও ভয় পেতেন ওসামা। সিরিঞ্জের মধ্যে দিয়েও তো শরীরে ঢুকে যেতে পারে ‘মাইক্রোচিপ’!

ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার বছর চারেক পরে অ্যাবটাবাদের আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া নথিপত্র প্রকাশ করেছে মার্কিন সরকার। সেখানেই পাওয়া গিয়েছে ওসামার বহু লেখা, চিঠিপত্র, সংগঠনের কাগজপত্র ইত্যাদি। তা থেকেই উঠে আসা হরেক অজানা তথ্যে সরগরম সংবাদমাধ্যম। সেখানে যেমন আছে ওসামার পরিবারের কথা, তেমনই আছে তাঁর বই পড়তে ভালবাসার কথা। জানা গিয়েছে, তিনি গুলে খেয়েছিলেন ফ্রান্সের ইতিহাস ও অর্থনীতি বিষয়ক নানান বই। পড়ে ফেলেছিলেন মার্কিন সাংবাদিক বব উড ওয়ার্ড ও বামপন্থী নোয়াম চমস্কির লেখাও।

চিন্তা ছিল সংগঠন নিয়েও। আল কায়দার কাজকর্মে যেমন খুশি ছিলেন, তেমনই দুশ্চিন্তাও ছিল সংগঠনের ভবিষ্যৎ নিয়ে। ২৬/১১-র হামলা তার ভাষায় ছিল ‘‘নায়কোচিত’’, পুণের জার্মান বেকারি ছিল ‘‘চমৎকার’’। আবার সেই সন্তুষ্ট মানুষটাই এক সময় চিন্তিত হয়েছিলেন দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে। দলের উদ্দেশে বার্তাও দিয়েছিলেন, আমেরিকার মেরুদণ্ড ভাঙাটাই সংগঠনের প্রধান লক্ষ্য। আর তাতে পৌঁছনোর জন্য নিজেদের মধ্যে লড়াই করলে চলবে না। তাঁর উদ্দিষ্ট ছিল ইরাক। এক সময় এ-ও বলেছিলেন, ‘‘আমাদের দলে পৃথক ভাবে একটা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ দরকার।’’

আর ছিল সব চেয়ে প্রিয় পুত্রসন্তান হামজাকে নিজের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে তৈরি করার স্বপ্ন। ছেলেকে অ্যাবটাবাদের বাড়িতে নিয়ে এসে নিজে হাতে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিতেন ওসামা।

অ্যাবটাবাদের বাড়ির নথি থেকে মেলা এ সমস্ত তথ্য নেড়েঘেঁটেই ওসামা বিন লাদেন সম্পর্কে নতুন নতুন দিক খুলছে রোজ। আর তাতেই সামনে আসছেন এক জন অচেনা ওসামা বিন লাদেন। শুধু মূর্তিমান ত্রাস পরিচয়েই নয়, একই সঙ্গে এক জন অভিজ্ঞ দলনেতা ও ষড়যন্ত্রের আশঙ্কায় সিঁটিয়ে থাকা মানুষ হিসেবেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

washington Osama bin Laden US
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE