ইন্টার-কন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) তৈরি করছে পাকিস্তান। এমন ক্ষেপণাস্ত্র, যা পাকিস্তান থেকে ছুড়লে সোজা গিয়ে পড়বে আমেরিকায়! এমনটাই দাবি করা হয়েছে একটি মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে। এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তান এক বার তৈরি করে ফেললে দেশটিকে পারমাণবিক প্রতিপক্ষ হিসাবে ঘোষণা করে দিতে হবে ওয়াশিংটনকে। অর্থাৎ, আর পাকিস্তানকে ‘বন্ধু’ বলতে পারবে না তারা। মার্কিন পত্রিকা ‘ফরেন অ্যাফেয়ার্স’-এ এই গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এমন একটি আইসিবিএম তৈরি করছে, যা মহাদেশীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে পারে। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।’’ এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ভবিষ্যতে ভারতের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা। ওই রিপোর্টেই বলা হয়েছে, পাকিস্তান আইসিবিএম তৈরি করলে তাদের পারমাণবিক প্রতিপক্ষ হিসাবে ঘোষণা করা ছাড়া আমেরিকার আর কোনও উপায় থাকবে না।
আরও পড়ুন:
আইসিবিএম কী?
৫,৫০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে থাকা লক্ষ্যবস্তুকে নিখুঁত নিশানা করতে পারে, এমন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে আইসিবিএম বলা হয়। ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল’ বা ‘আন্তঃমহাদেশীয়’ ক্ষেপণাস্ত্র দূরের শত্রুদেশে আঘাত হানতে প্রয়োগ করা হয়। একটি মহাদেশ থেকে আর একটি মহাদেশে ছোড়া যায় এই ক্ষেপণাস্ত্র। সাধারণ ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি এতে পরমাণু অস্ত্রও ব্যবহার করা যায়। পাকিস্তানের হাতে এখনও পর্যন্ত আইসিবিএম নেই। মার্কিন গোয়েন্দারা দাবি করছেন, গোপনে এই শক্তিশালী অস্ত্র তৈরির কাজ চালাচ্ছে ইসলামাবাদ। যে কোনও দিন তারা চমকে দিতে পারে।
আইসিবিএম রয়েছে ভারতের হাতেও। ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অরগ্যানাইজেশন (ডিআরডিও) অগ্নি-ভি তৈরি করেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৭ হাজার কিলোমিটারের বেশি। চিন, আমেরিকা-সহ একাধিক দেশ এই অস্ত্রের পাল্লার অধীনে রয়েছে। এশিয়া, ইউরোপের পাশাপাশি আফ্রিকার কিছু দেশেও ভারত থেকে এই মিসাইল প্রয়োগ করা সম্ভব।
আইসিবিএম দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র (লং রেঞ্জ মিসাইল)। ২০২২ সালে পাকিস্তান ভূমি থেকে ভূমি মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র শাহীন-৩ পরীক্ষামূলক ভাবে সফল উৎক্ষেপণ করে। ওই মিসাইল ২,৭০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। ভারতের একাধিক শহর এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার অধীনে রয়েছে। তবে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের হাতে এলে তা নয়াদিল্লিরও উদ্বেগের কারণ হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। সে ক্ষেত্রে আমেরিকা এবং পাকিস্তানের সম্পর্কের নতুন সমীকরণ কী হবে, তা-ও ভাবাচ্ছে ভূ-রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারত এবং পাকিস্তান সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটিগুলিতে হামলা চালায় ভারত। ধ্বংস করে দেওয়া হয় একাধিক ঘাঁটি। টানা চার দিন ভারত এবং পাকিস্তানের সেনা সংঘাত চলার পর সংঘর্ষবিরতি হয়েছে। তবে দুই দেশের সম্পর্ক এখনও তলানিতে। সূত্রের খবর, ভারতের সঙ্গে সংঘাতের পর অস্ত্রভান্ডার আরও শক্তিশালী করতে সচেষ্ট হয়েছে পাকিস্তান।