ঘন অরণ্যের পুরু চাদরের তলায় বহু শতক ধরে যে এক আস্ত শহর ঢাকা পড়েছিল, সে কথা অনুমানের স্তরে ছিল এত দিন। আমেরিকার টুলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লুক অল্ড-টমাস কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই মেক্সিকোয় প্রাচীন মায়া সভ্যতার একটি বিশাল শহরের ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পেয়েছেন সম্প্রতি। এই খোঁজে যেমন তিনি আপ্লুত, তেমনই তাঁকে ভাবিয়ে তুলছে শহরটির ধ্বংসের প্রকৃত কারণ। ওই জঙ্গলের কাছে থাকা একটি উপহ্রদের নামে ‘ভ্যালেরিয়ানা’ নাম রাখা হয়েছে শহরটির।
প্রত্নতত্ত্ববিদেরা জানিয়েছেন, ক্যামপেচে শহরের কাছে অবস্থিত এই প্রাচীন মায়া শহরটিতে পিরামিডের অস্তিত্ব মিলেছে। মন্দির, খেলার মাঠ, জলাশয়-সহ আরও নানা স্থাপত্য রয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে অনুমান করা হচ্ছে যে, প্রাচীন শহরটিতে ৩০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। বর্তমানে যে সংখ্যক মানুষ সেখানে বসবাস করেন, তার চেয়ে বেশ কয়েক গুণ বেশিই এই সংখ্যা। অর্থাৎ বলা চলে, শহরটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল মায়া সভ্যতার মানুষজনের কাছে। এ-ও অনুমান করা হচ্ছে যে, তাঁরা একাধিক বিচ্ছিন্ন গ্রামে থাকতেন না। একটা বড় শহরে পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর সাহায্যেই জীবনযাপন করতেন।
অল্ড-টমাস জানিয়েছেন, আনুমানিক ১৫০০ বছর আগে যে সভ্যতার বাস ছিল এই শহরগুলিতে, তা সবই আজ মাটির তলায় বা ঘন জঙ্গলের আস্তরণের তলায় চাপা পড়ে রয়েছে। এক কালে চেষ্টা করা হলেও পায়ে হেঁটে এতটা এলাকা কোনও ভাবেই খোঁজা সম্ভব ছিল না। তাই তিনি আরও উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে করা সমীক্ষার খোঁজ চালাচ্ছিলেন। ইচ্ছে ছিল যাতে লিডার (লাইট ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিং) প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই গবেষণা চালানো যায়। কিন্তু তা বেশ খরচ সাপেক্ষ। এমনই সময়ে হঠাৎই অল্ড-টমাসের হাতে আসে ওই এলাকার বন পর্যবেক্ষণের একটি গবেষণার কাজ। ২০১৩ সালে লিডার প্রযুক্তির ব্যবহারে করা ওই গবেষণাটি নিয়ে পরিবেশবিদেরা কাজ করলেও, প্রত্নতত্ত্ববিদের হাতে সেই সমীক্ষা আসেনি। অল্ড-টমাস সেই সমীক্ষাটি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আবিষ্কারকরেন শহরটির অস্তিত্ব।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)