E-Paper

পুতিনের সঙ্গে বৈঠক ইরানের বিদেশমন্ত্রীর

রবিবার রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে রাশিয়া এবং চিন, দু’জনেই আমেরিকার কার্যকলাপের বিরোধিতা করেছিল।

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৫ ০৯:৫৫
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করলেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করলেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। ছবি রয়টার্স।

ইরানের শীর্ষ নেতা আয়াতোল্লা খামেনেইয়ের দূত হয়ে সোমবার মস্কোয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করলেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। ক্রেমলিনে তাঁদের বৈঠক শুরুর আগে পুতিন স্পষ্ট ভাষায় বললেন, ‘‘ইরানকে আক্রমণ করাটা ভিত্তিহীন, বৈধতাহীন কাজ হয়েছে। এটা পৃথিবীকে বিপজ্জনক দিকে ঠেলে দেবে। রাশিয়া ইরানের মানুষের পাশে থাকবে এবং একসঙ্গে এই সঙ্কট থেকে বেরনোর রাস্তা খুঁজবে।’’ যদিও ‘পাশে থাকা’ বলতে কতটা কী বোঝায়, রাশিয়া ঠিক কী ভাবে ইরানকে সাহায্য করবে, সেটা স্পষ্ট নয়।

রবিবার রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে রাশিয়া এবং চিন, দু’জনেই আমেরিকার কার্যকলাপের বিরোধিতা করেছিল। তবে পুতিন নিজে তখনও সরাসরি আমেরিকার আক্রমণ নিয়ে মুখ খোলেননি। সে দিক থেকে এ দিন ক্রেমলিন বৈঠকের আগেই পুতিনকে প্রত্যক্ষ ভাবে তাঁর মত জানাতে দেখা গেল। পুতিনের বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এ কথাও বললেন যে, রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদকে ইচ্ছামতো লঙ্ঘন করা হলে সম্পূর্ণ অরাজকতা তৈরি হবে এবং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।

কিন্তু ইরানকে নৈতিক ভাবে সমর্থন করলেও রাশিয়া সরাসরি এই যুদ্ধে জড়াবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। রাষ্ট্রপুঞ্জে রাশিয়ার প্রতিনিধি ভাসিলি নেবেনজ়িয়া অবশ্য আমেরিকার আক্রমণকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন, বিপজ্জনক এবং উস্কানিমূলক’ বলে অভিহিত করে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এর ফলে ‘প্যান্ডোরার বাক্স’ খুলে যেতে পারে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভও বলেন, আমেরিকার হামলার ফলে সংঘর্ষে যোগদানকারীদের সংখ্যা বাড়ল, সামরিক উত্তেজনা আরও ঘোরালো হল। তার মানে কি ইউক্রেনের পাশাপাশি আরও একটা রণক্ষেত্রে জড়াতে চলেছে রাশিয়া? জল্পনা চলছে। এর মধ্যে নেটো-র সাধারণ সচিব মার্ক রুত্তে সোমবার চড়া সুরে বলেছেন, নেটো-র প্রধান শত্রু রাশিয়াই। ইউক্রেন যুদ্ধে ইরানের ভূমিকা নিয়েও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন তিনি।

তবে পুতিন নিজে এ দিন এই ইঙ্গিতও দিয়েছেন যে, রাশিয়া নিজেকে ইরান সংঘর্ষ থেকে কিছুটা দূরে রাখতে চায়। সেন্ট পিটার্সবার্গের একটি অনুষ্ঠানে তাঁকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, রাশিয়া সরাসরি তার মিত্রদেশ ইরানকে সাহায্য করছে না কেন। জবাবে পুতিন বলেন যে, তাঁকে মনে রাখতে হচ্ছে ইজ়রায়েলে ২০ লক্ষ রুশ বাস করেন। পুতিনের কথায়, ইজ়রায়েল এখন প্রায় রুশভাষী দেশই বলা চলে। সেই কারণেইরাশিয়া কিছুটা নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চাইছে।

কিন্তু পুতিন এ কথাগুলো বলেছেন আরাঘচির সঙ্গে বৈঠকের আগে। বৈঠকের পরে তিনি মত বদল করেন কি না, সে দিকে নজর থাকছে আন্তর্জাতিক মহলের। খামেনেই পুতিনকে চিঠি লিখে প্রত্যক্ষ সামরিক সাহায্যই চেয়েছেন বলে খবর। আরাঘচি সেই চিঠি পুতিনের হাতে তুলে দিয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।

হরমুজ় প্রণালী ইরান বন্ধ করে কি না, সেটাও আন্তর্জাতিক শিবিরের মাথাব্যথার কারণ। বিশ্ব জুড়ে জ্বালানি তেলের প্রায় ২০ শতাংশ বাণিজ্য ইরান ও ওমানের মধ্যে সংকীর্ণ ওই পথ দিয়ে হয়। হরমুজ় প্রণালী বন্ধ করার পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই অনুমোদন করেছে ইরানের পার্লামেন্ট। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপর নির্ভর করছে। আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো এ ব্যাপারে চিনকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। রবিবারই রুবিয়ো বলেছেন, ‘‘আমি বেজিংকে অনুরোধ করছি, তারা যেন ইরানকে হরমুজ় প্রণালী বন্ধ না করার ব্যাপারে বলে।’’ রুবিয়োর দাবি, ওই প্রণালী বন্ধ হলে আমেরিকার চেয়ে ঢের বেশি ক্ষতি অন্যান্য দেশের হবে।

সংবাদ সংস্থা

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Russia Iran

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy