Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Omicron

Omicron: ডেল্টার বিরুদ্ধে জেতা কঠিন ওমিক্রনের, আগ বাড়িয়ে উদ্বেগ ডাকছে ‘হু’, মত বিশেষজ্ঞদের

ওমিক্রন দক্ষিণ আফ্রিকায় ডেল্টাকে ছাপিয়ে গেলে বিশ্বজুড়েও তা-ই হবে, এমনটা নয়। আলফা রূপ ইউরোপে ছড়িয়ে পড়লেও দক্ষিণ আফ্রিকায় তা হয়নি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২১ ১৮:২৪
Share: Save:

মাত্র দিন তিনেকের মধ্যেই তার সঙ্গে করোনাভাইরাসের ডেল্টা রূপের তুলনা টানতে শুরু করেছেন অনেকে। উদ্বেগের প্রহর গুনতেও শুরু করেছেন কেউ কেউ। কিন্তু করোনার নয়া রূপ ‘ওমিক্রন’ (ভাইরাস বিজ্ঞানের পরিভাষায় বি.১.১.৫২৯) সংক্রমণের হিসেবে আদৌ তার পূর্বসূরি ডেল্টা রূপের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অতিমারি বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই। সে লড়াই রীতিমতো কঠিন! অনেকটা ভোটযুদ্ধে নরেন্দ্র মোদীকে হারানোর মতো।

এখনও পর্যন্ত ওমিক্রনের প্রভাব দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ এবং তার আশপাশের কিছু এলাকাতেই সীমাবদ্ধ। তা ছাড়া হংকং, ইজরায়েল এবং আফ্রিকা-ফেরত কয়েক জন পর্যটকের শরীরেও মিলেছে এই রূপ। গত ১৬ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের নতুন রূপে সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৩০০-র কাছাকাছি। ২৫ নভেম্বর তা বেড়ে ১,২০০-তে পৌঁছয়। সংক্রমণ বৃদ্ধির এই হার উদ্বেগজনক। কিন্তু অতিমারি বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, শুধুমাত্র এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ওমিক্রনের সংক্রমণ ক্ষমতা সম্পর্কে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা সঙ্গত নয়।

অতিমারি পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা বলে, এ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তথ্যসংগ্রহ এবং নির্ভুল বিশ্লেষণের জন্য অন্তত এক সপ্তাহ সময় দেওয়া প্রয়োজন। সেই সময়সীমা এক মাসও হতে পারে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) শুক্রবারই করোনাভাইরাসের এই নয়া রূপকে ‘উদ্বেগের কারণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অতীতে ডেল্টাকেও একই বিশেষণে চিহ্নিত করা হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, ‘হু’ এটিকে ‘উদ্বেগের কারণ’ বলেছে। ‘আতঙ্কের কারণ’ বলেনি। উদ্বেগের কারণ বলেই বিভিন্ন দেশ তড়িঘড়ি আপৎকালীন ব্যবস্থা নিতে ময়দানে নেমে পড়েছে। যা আদতে ‘রুটিন সতর্কতা’। তবে এই ‘রুটিন সতর্কতা’ জারির ক্ষেত্রেও নজিরবিহীন অতি সক্রিয়তা দেখানো হয়েছে বলে অতিমারি বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকে বলছেন। তাঁদের মতে, ডেল্টার ক্ষেত্রে ‘উদ্বেগের কারণ’ ঘোষণা করতে বেশি সময় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ‘হু’-র বিরুদ্ধে। সেই অভিজ্ঞতার ফলেই ওমিক্রনের ক্ষেত্রে এই তড়িঘড়ি।

‘হু’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের শেষ পর্বে ভারতে শনাক্ত-হওয়া করোনাভাইরাসের ডেল্টা রূপ এখনও পর্যন্ত বিশ্বের ১৬৩ দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন বেশ কয়েক কোটি মানুষ। বিশ্ব জুড়ে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী ছিল এই রূপটি। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এখনও পর্যন্ত যতটুকু পরিসংখ্যান পাওয়া গিয়েছে, তাতে ওমিক্রনের পক্ষে ডেল্টার পরিসংখ্যানকে ছোঁয়ার পূর্বাভাস নেই।

ওমিক্রনকে ঘিরে তৈরি হওয়া সাম্প্রতিক উদ্বেগেরমবশ্য অন্য একটি কারণ রয়েছে। করোনাভাইরাসের এই রূপটির আবির্ভাব হয়েছে প্রায় ৫০ বার জিনের বিন্যাস বদলের ফলে। আর তার মধ্যে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বদল হয়েছে ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনের ‘রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেন’-এ। স্পাইক প্রোটিনের এই চরিত্র বদল অনেক ক্ষেত্রেই ভাইরাসকে মানবদেহে অনুপ্রবেশে আরও দক্ষ করে তোলে। অভিযোজন ক্ষমতাও বাড়ায়।

প্রসঙ্গত, ডেল্টার ক্ষেত্রে জিনগত বিন্যাস বদল ঘটেছে দু’বার। সে কারণে ডেল্টাকে ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ (দ্বি-পরিব্যক্ত) হিসেবে চিহ্নিত করেছিল ‘হু’। আর এক রূপ ‘বিটা’-র ক্ষেত্রে জিনগত বিন্যাসের বদল ঘটে তিন বার।

তবে শুধুমাত্র মানবদেহের সহজাত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নয়। ওমিক্রনকে লড়াই করতে হবে করোনা টিকার প্রতিরোধের বিরুদ্ধেও। ডেল্টা রূপের সংক্রমণের সময় বিশ্ব জুড়ে টিকাকরণের সংখ্যা ছিল অনেক কম। এখন বিশ্বে টিকাকরণ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। অন্তত প্রথম টিকাপ্রাপ্তির নিরিখে। ফলে ওমিক্রনের পরীক্ষা আরও কঠিন। তা ছাড়া, গত এক বছরে টিকা সংক্রান্ত গবেষণাও এগিয়েছে অনেকটা। ফাইজার, বায়োএনটেকের মতো সংস্থা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে, করোনাভাইরাসের নয়া রূপ প্রতিরোধী টিকা তৈরির কাজ আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে। ১০০ দিনের মধ্যেই চলে আসবে নতুন টিকা।

সব মিলিয়ে এক বছর আগে ডেল্টার ঢেউয়ের মোকাবিলার জন্য বিশ্ব যতটা প্রস্তুত ছিল, ওমিক্রন প্রতিরোধে প্রস্তুতি তার চেয়ে বেশি।

দক্ষিণ আফ্রিকায় সংক্রমণের হিসাবে ওমিক্রন যদি ডেল্টাকে ছাপিয়ে যায় তবে বিশ্বজুড়েও তা-ই হবে, এমনটা নয়। যেমন করোনাভাইরাসের আলফা রূপ ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়লেও দক্ষিণ আফ্রিকায় খুব একটা সংক্রমণ ছড়াতে পারেনি।

মোদী বনাম বিরোধীদের লড়াই দেখার জন্য ২০২৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ডেল্টা-ওমিক্রন দ্বৈরথের ফল জানা যাবে তার ঢের আগেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Omicron Coronavirus WHO south africa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE