Advertisement
E-Paper

ট্রাম্প-মাস্ক ‘ব্রোম্যান্স’ একটি বিলেই টলে গেল! শুরুটা কেমন ছিল? মধুর থেকে অম্ল হয়ে কী ভাবে তিক্ততায় মার্কিন ‘জুটি’

কিছু দিন আগেও মাস্ককে ‘দুর্দান্ত’ বলেছিলেন ট্রাম্প। গলায়-গলায় ভাব ছিল দু’জনের। হঠাৎ কেন সম্পর্কের এই ‘ইউ টার্ন’? কেমন ছিল শুরুটা? ঠিক কখন, কিসের প্রেক্ষিতে তাঁদের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২৫ ১১:৪১
ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইলন মাস্কের সম্পর্ক তিক্ততার চরমে পৌঁছে গিয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইলন মাস্কের সম্পর্ক তিক্ততার চরমে পৌঁছে গিয়েছে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ধনকুবের ইলন মাস্কের সম্পর্ক এখন তিক্ততার চরমে। যে মাস্ককে কিছু দিন আগে জড়িয়ে ধরেছিলেন ট্রাম্প, যাঁর জন্য হোয়াইট হাউসে গড়ে দিয়েছিলেন আলাদা দফতর, সেই তিনিই হয়ে উঠেছেন তাঁর সরকারের পথে অন্যতম ‘কাঁটা’। মাস্কের সংস্থার ভর্তুকি বাতিল থেকে শুরু করে সরকারি চুক্তি বাতিল— একের পর এক কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কিন্তু মাস্ক থামছেন না। উল্টে আক্রমণের সুর চড়াচ্ছেন সপ্তমে। যে আক্রমণ পৌঁছে যাচ্ছে ব্যক্তিগত স্তরে। ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির ফলে এক ধাক্কায় মাস্কের সংস্থার শেয়ার পড়ে গিয়েছে। লোকে টেসলার শেয়ার বিক্রি করে দিতে দু’বার ভাবছে না। কিন্তু সেই আর্থিক ক্ষতির মুখে দাঁড়িয়েও নিজের অবস্থানে অনড় স্পেসএক্সের কর্ণধার। বুক বাজিয়ে বলছেন, ‘‘আমি সাহায্য না করলে ট্রাম্প আমেরিকার কুর্সিতেই বসতে পারতেন না।’’

কিন্তু ট্রাম্প-মাস্কের সম্পর্কে কেন এই ‘ইউ টার্ন’? গলায়-গলায় বন্ধুত্ব কেন কাদা ছোড়াছুড়িতে পর্যবসিত হল? কেমন ছিল তাঁদের ‘ব্রোম্যান্স’-এর (দুই পুরুষের মধ্যে যৌনতা ব্যতিরেকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হিসাবে ধরে নিয়ে আমেরিকার সংবাদমাধ্যমগুলি ট্রাম্প-মাস্কের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে এই শব্দ ব্যবহার করেছে) শুরুটা?

সুখের সে দিন

২০২৪ সালের ১৩ জুলাই। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চার মাস আগে পেনসিলভ্যানিয়ায় একটি সভা করতে গিয়েছিলেন রিপাবলিকান পদপ্রার্থী ট্রাম্প। সেখানে প্রকাশ্য সভায় ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলি চালান এক যুবক। গুলি ট্রাম্পের কান ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। রক্ত ঝরে মঞ্চে। ওই ঘটনা আমেরিকায় আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। সেখানেই মাস্কের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্কের সূত্রপাত। ট্রাম্পের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন মাস্ক। লেখেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আশা করছি উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।’’ এর পর একাধিক জনসভায় ট্রাম্পের পাশে দেখা যেতে থাকে মাস্ককে। পরনে ট্রাম্পের স্লোগান ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’ সম্বলিত টুপি। ট্রাম্পের হয়ে ঢালাও প্রচারও করেছিলেন নির্বাচনে।

‘আমি ট্রাম্পকে ভালবাসি’

ট্রাম্প দ্বিতীয় বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে মাস্কের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। মাস্ককে প্রথমে প্রেসিডেন্টের বিশেষ পরামর্শদাতা (অবৈতনিক) পদে নিয়োগ করেছিলেন ট্রাম্প। পরে তাঁর জন্য গড়ে দেন সরকারি দক্ষতা বিষয়ক দফতর (ডিওজিই)। সেই দফতরের কাজই ছিল ‘অপ্রয়োজনীয়’ খরচ কাটছাঁট করে ট্রাম্প প্রশাসনকে সাহায্য করা। দায়িত্ব বুঝে নিয়েছিলেন মাস্ক। তখন লিখেছিলেন, ‘‘আমি ট্রাম্পকে ভালবাসি সে ভাবেই, যে ভাবে এক জন বিসমকামী পুরুষ আর এক জন পুরুষকে ভালবাসতে পারে।’’ সেই সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ হয়ে উঠেছিলেন মাস্ক। খরচ কমাতে একাধিক সাহসী পদক্ষেপও করে ফেলেছিলেন তিনি।

‘বড় ও সুন্দর বিল’

আমেরিকার জনস্বার্থে সম্প্রতি একটি বিলে স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প। নিজে সেটিকে ব্যাখ্যা করেছেন ‘বড় ও সুন্দর বিল’ হিসাবে। কিন্তু সেই বিলেই ট্রাম্প-মাস্ক তিক্ততার বীজ বোনা হয়। একটি সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট বলছেন, নতুন বিলটি বড় এবং সুন্দর। কিন্তু কোনও বিল একই সঙ্গে বড় এবং সুন্দর হতে পারে বলে আমি মনে করি না। হয় সেটি বড় হবে, নয়তো সুন্দর।’’ ট্রাম্পের ওই বিলের ফলে এত দিন ধরে ডিওজিই যে কাজ করে এসেছে, তা ব্যর্থ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মাস্ক। পর দিনই ট্রাম্প প্রশাসন থেকে ইস্তফা দেন এই ধনকুবের।

‘আমার সময় ফুরোল’

পদত্যাগের কথা সমাজমাধ্যমেই ঘোষণা করেন মাস্ক। লেখেন, ‘‘আমার নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’’ পর দিন প্রস্থানরত মাস্ককে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন ট্রাম্প। সে দিনও দু’জনের সম্পর্কের তিক্ততার আঁচ দেখতে পাওয়া যায়নি। মাস্ককে ‘দুর্দান্ত’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। মধুর কথায় বিদায় দিয়েছিলেন। মাস্কও বিতর্ক বাড়াননি শেষ দিনে। জানিয়েছিলেন, এ বার ব্যবসায় মনোনিবেশ করতে চান। সেই কারণেই ইস্তফা।

কাদা ছোড়াছুড়ি

পদত্যাগের পর মাস্ক অবশ্য আর রাখঢাক করেননি। প্রকাশ্যেই ট্রাম্পের বিলের সমালোচনা করতে শুরু করেন। জানান, ওই বিল মার্কিন প্রশাসনকে ‘দেউলিয়া’ করে দেবে। ব্যর্থ করবে ডিওজিই-র যাবতীয় সাশ্রয়ের চেষ্টা। মাস্ক বলেন, ‘‘কংগ্রেসের এই বিশাল সাংঘাতিক বিল জঘন্য, শূকরের মাংসে ভরা (পর্ক ফিল্‌ড)।’’ মাস্ক মুখ খোলার পর নীরব থাকেননি ট্রাম্পও। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সরাসরি অভিযোগ করেন, বৈদ্যুতিক গাড়ির ট্যাক্স ক্রেডিট বাতিল করায় টেসলার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তাই মাস্ক চটেছেন এবং পরিকল্পনা করেই ওই ‘সুন্দর’ বিলটির বিরোধিতা করছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘‘ইলনের সঙ্গে আমার খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। জানি না আগামী দিনে আর তা থাকবে কি না। ওর আচরণে আমি খুব হতাশ। এই বিলের খুঁটিনাটি ও জানত। অন্য যে কোনও লোকের চেয়ে বেশি জানত। এটা নিয়ে প্রথম থেকে ওর কোনও সমস্যা ছিল না।’’ ট্রাম্পের সেই অভিযোগ উড়িয়ে মাস্ক পাল্টা বলেন, ‘‘এই বিল আমাকে এক বারের জন্যেও দেখানো হয়নি। গভীর রাতে লুকিয়ে এই বিল পাশ করানো হয়েছে। কংগ্রেসের কাউকে বিলটা পড়ে দেখারও সুযোগ দেওয়া হয়নি।’’

ব্যক্তিগত আক্রমণ

কাদা ছোড়াছুড়ির মধ্যেই আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসেন মাস্ক। দাবি করেন, যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত জেফরি এপস্টাইনের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আমেরিকায় নতুন একটি রাজনৈতিক দল শুরু করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন মাস্ক। ইমপিচমেন্ট পদ্ধতিতে ট্রাম্পের অপসারণের দাবি তোলেন তিনি। পরিবর্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের প্রতি সমর্থন জানান। রাখঢাক না করে মাস্ক এ-ও বলছেন যে, ট্রাম্প যে শুল্কনীতি অনুসরণ করছেন, তা অদূর ভবিষ্যতে গোটা বিশ্বকে অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ঠেলে দেবে। অন্য দিকে, ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মাস্কের সংস্থার ভর্তুকি বাতিল করার। তাতে এক দিনের মধ্যে টেসলার শেয়ার পড়ে গিয়েছে ১৪ শতাংশ। ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, মাস্কের ব্যক্তিগত ক্ষতি হয়েছে ৮৭৩ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকা)! ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, মাস্ক তাঁর বিপক্ষে গিয়েছেন বলে তিনি চিন্তিত নন। তবে এটা আরও আগেই করা উচিত ছিল তাঁর।

ট্রাম্প-মাস্কের ‘দ্বৈরথ’ কোথায় গিয়ে থামবে, প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারির মুখে পিছিয়ে গিয়ে মাস্ক থামবেন, না কি শেষমেশ ট্রাম্পকেই ‘নত’ হতে হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আপাতত আমেরিকা তথা সারা বিশ্ব দেখছে তাঁদের টকে-যাওয়া ‘ব্রোম্যান্স’!


Donald Trump Elon Musk US White House
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy