পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ এবং সে দেশের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকে ফলপ্রসূ! দাবি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের। বৈঠকে কারা ছিলেন, তা নিয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। তবে বৈঠক নিয়ে ‘চুপ’ হোয়াইট হাউস। এমনকি ‘প্রথা’ মেনে শাহবাজ়-ট্রাম্পের বৈঠকের কোনও ছবিও প্রকাশ করেনি হোয়াইট হাউস। আমেরিকার এই পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার অধিবেশনের জন্য আমেরিকাতেই রয়েছেন শাহবাজ়। সেই সফরের মধ্যে নিউ ইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন এসে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা ছিল তাঁর। সঙ্গে ছিলেন মুনিরও। ট্রাম্পের সঙ্গে এই বৈঠকের কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে পাকিস্তানের তরফে প্রথম জানানো হয়। তবে এখনও পর্যন্ত হোয়াইট হাউসের তরফে বৈঠক নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে দাবি, হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে শাহবাজ় ও মুনিরের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন ট্রাম্প। ৮০ মিনিটের বৈঠক হয়েছে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তরফেও ওই বৈঠক নিয়ে একই বার্তা দেওয়া হয়।
পাক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তরফে জানানো হয়, ট্রাম্প ছাড়াও হোয়াইট হাউসের বৈঠকে ছিলেন আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স এবং বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো। মনোরম পরিবেশেই বৈঠক হয়েছে। অর্থাৎ বৈঠক যে ফলপ্রসূ, তা একপ্রকার দাবি করছে পাকিস্তান। তবে এ-ও জানানো হয়, হোয়াইট হাউসের বৈঠকে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকার ছিল না! শুধু তা-ই নয়, পাক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তরফে আরও দাবি করা হয়, নির্ধারিত সময়ের থেকে অন্তত আধ ঘণ্টা দেরিতে বৈঠক শুরু হয়েছিল। কারণ, ট্রাম্প কোনও নির্বাহী আদেশে সই করছিলেন। সেই জন্য শাহবাজ় এবং মুনিরকে অপেক্ষা করতে হয়।
পাকিস্তান বৈঠক ফলপ্রসূ বলে দাবি করলে হোয়াইট হাউসের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। এমনকি দুই রাষ্ট্রনেতার ছবিও প্রকাশ করেনি তারা। সাম্প্রতিক সময়ে যা ব্যতিক্রমী বলে মত কূটনৈতিক মহলের। কোনও দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা কোনও মন্ত্রীর সঙ্গে ট্রাম্প বৈঠক করলে, তা ঢালাও প্রচার করে হোয়াইট হাউস। ছবি, ভিডিয়ো প্রকাশ করা হয়। এমনকি বৈঠকের সময় সাংবাদিকদের জন্য হোয়াইট হাউসের দরজাও খুলেও দেওয়া হয়। বৈঠকের পর যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন ট্রাম্প। কিন্তু শাহবাজ়ের সঙ্গে বৈঠকে সে সব কিছুই দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন:
কেন হোয়াইট হাউসের এই গোপনীয়তা, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। শাহবাজ়ের সঙ্গে বৈঠক করলেও তা নিয়ে কি বেশি প্রচার চাইছেন না ট্রাম্প? কিন্তু কেন? ট্রাম্প-শাহবাজ়ের বৈঠকের ছবি প্রকাশ না-করে হোয়াইট হাউসকে কি নয়াদিল্লিকে কোনও বার্তা দিল? এমন নানা প্রশ্ন ঘুরছে। শুল্ক এবং বাণিজ্য টানাপড়েনের পর ভারত-আমেরিকার সম্পর্ক বর্তমানে বেশ কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথাও হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। আবার নতুন করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছে। সেই আবহে শাহবাজ় ও মুনিরের সঙ্গে বৈঠক যে ভারত ভাল ভাবে নেবে না, তা বুঝতে পেরেই কি প্রচারের পথ থেকে সরে দাঁড়াল হোয়াইট হাউস?
বিভিন্ন সূত্রে খবর, ট্রাম্প এবং শাহবাজ়ের মধ্যে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, বাণিজ্য, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, পশ্চিমি দেশগুলির ইসলাম-ভীতি এবং সন্ত্রাস-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের আগেই শাহবাজ়কে ‘মহান নেতা’ এবং মুনিরকে ‘মহান মানুষ’ বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।