পাকিস্তানে শনিবার রাতে খুন হয়েছেন ভারতের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ লশকর-এ-ত্যায়বার নেতা তথা ২৬/১১ মুম্বই হামলার মূলচক্রী হাফিজ় সইদ-ঘনিষ্ঠ আবু কাতাল। পাকিস্তান সেনার কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকতেন লশকরের এই জঙ্গিনেতা। বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, হাফিজ় সইদ এই জঙ্গিনেতাকে ‘চিফ অপারেশনাল কমান্ডার’-এর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মূলত জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা চালানো, বেছে বেছে তরুণ এবং যুবকদের জঙ্গিদলে নিয়োগ, এমনকি ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশে মদত দেওয়া ছিল কাতালের মূল দায়িত্ব।
পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে জম্মু-কাশ্মীরে হামলার ঘটনা পরিচালনা করতেন কাতাল। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের খুরেটা জঙ্গিশিবিরের কমান্ডার ছিলেন কাতাল। তাঁর নেতৃত্বে এই জঙ্গিশিবিরে প্রশিক্ষণ চলত। শুধু তা-ই নয়, প্রশিক্ষণের পর হামলা চালানোর জন্য জম্মু-কাশ্মীরে সেই সব জঙ্গিকে অনুপ্রবেশে মদত দিতেন বলেও সূত্রের খবর। জঙ্গি অনুপ্রবেশ আর জঙ্গি নিয়োগই নয়, ড্রোনের মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় অস্ত্র পাচারের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন এই লশকর নেতা।
বেশ কয়েকটি সূত্রের দাবি, হাফিজ় সইদের ইশারাতেই জম্মু-কাশ্মীরের রিয়াসি, রাজৌরি-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় হামলা চালান কাতাল। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) সূত্রে খবর, ২০০২-০৩ সালে ভারতে অনুপ্রবেশ করেন কাতাল। প্রথমে পুঞ্চ এবং রাজৌরি থেকে তাঁর জঙ্গি কার্যকলাপ পরিচালনা করতেন। শুধু তা-ই নয়, লশকর জঙ্গিগোষ্ঠীর আড়ালে জম্মু-কাশ্মীরে পিপলস অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট ফোর্স (পাফ) এবং দ্য রেজিস্ট্যান্স ফোরিস (টিআরএফ) নামে দু’টি জঙ্গি সংগঠন তৈরিতেও কাতালের বড় ভূমিকা ছিল। এই দুই সংগঠনকে সামনে রেখেই লশকর এবং জইশ জঙ্গিগোষ্ঠী জম্মু-কাশ্মীরে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। ২০১৯ সাল থেকে এই দুই সংগঠন বেশ কয়েকটি হামলার সঙ্গে জড়িত। ২০২৩ সালে পাফ-কে জঙ্গি সংগঠন হিসাবে ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি রাজৌরির ঢাংরি গ্রামে পর পর দু’দিন জঙ্গি হামলা হয়। সেই হামলায় দুই শিশু-সহ সাত জনের মৃত্যু হয়েছিল। অনেকে আহত হয়েছিলেন। সেই ঘটনার যে চার্জশিট তৈরি করেছে এনআইএ, সেখানে লশকরের তিন জঙ্গির নাম উঠে এসেছে। তাঁরা হলেন আবু কাতাল, সাজিদ জাট। দু’জনেই পাক নাগরিক। তৃতীয় জঙ্গি কাশিম। ২০০২ সালে লশকরে যোগ দেন তিনি। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এই তিন জন জম্মু-কাশ্মীরে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁদের নির্দেশেই নিরাপত্তাবাহিনী, সেনা এবং সাধারণ নাগরিকের উপর হামলা হত।