Advertisement
E-Paper

জঙ্গি বলতে ‘দ্বিধা’ কিসের? উঠছে প্রশ্ন

তাকে জঙ্গি বলতে এত ‘দ্বিধা’ কেন— প্রশ্নটা তুলে দিলেন নেটিজ়েনেরই একাংশ।

স্নেহাংশু অধিকারী

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৯ ০৫:৪২
ব্রাজিলীয় রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্রী কার্লোস লাটুফের এই ছবিও ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়

ব্রাজিলীয় রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্রী কার্লোস লাটুফের এই ছবিও ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়

প্রথমে বলা হচ্ছিল ‘বন্দুকবাজ’— নিউজ়িল্যান্ডের মসজিদে ঢুকে মেরে ফেলেছে ৫০ জনকে। শুক্রবার হামলার পরে পরেই অনলাইন এবং তার দেখাদেখি সোশ্যাল মিডিয়া, এ ভাবেই দেগে দিয়েছিল অস্ট্রেলীয় যুবক ব্রেন্টন ট্যারান্টকে। কিন্তু নিউজ়িল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন মুখ খুলতেই বদলে গেল একাংশের বয়ান। আর্ডের্ন বললেন, ‘‘নিঃসন্দেহে এটা জঙ্গি হামলা।’’ এবং তার পরেই পশ্চিমী অনলাইন মিডিয়ার একাংশ লিখল— জঙ্গি। কেউ সরাসরি, কেউ আবার সতর্ক ভাবেই উদ্ধৃতি চিহ্ন দিয়ে। ঘটনার দিনেই জানা গিয়েছিল হামলার আগে ব্রেন্টনের সেই ইস্তাহারের কথা। তাতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল শ্বেত সন্ত্রাসের চেহারা। বোঝা গিয়েছিল মুসলিম আর বহিরাগতদের প্রতি তাঁর বিদ্বেষ কতখানি। তবু তাকে জঙ্গি বলতে এত ‘দ্বিধা’ কেন— প্রশ্নটা তুলে দিলেন নেটিজ়েনেরই একাংশ।

টুইটারে প্রথম সারির এক মার্কিন দৈনিকের একটি পুরনো শিরোনাম পোস্ট করে পাক তরুণী মরিয়ম মহসিন দেখালেন, ২০১৫-য় প্যারিসে ব্যঙ্গ-পত্রিকা শার্লি এবদোর দফতরে হামলাকে ‘জঙ্গি হামলা’ বলা হলেও, নিউজ়িল্যান্ডে শুধুই ‘বন্দুকবাজের হানা।’ ভারতের কিছু কাগজ ‘শ্বেত সন্ত্রাস’-এর কথা বললেও, অনেক নেটিজ়েনই দেখাচ্ছেন— এখনও কিছু কাগজ লিখছে ‘হানাদার’, ‘বন্দুকবাজ’-ই। কেন?

ফোনে কাঠ-কাঠ উত্তর দিলেন পাক সাংবাদিক বিলাল মুঘল— ‘‘ব্রেন্টন মুসলিম হলে বোধ হয় জঙ্গি বলতে সুবিধা হত! কেউ কেউ সুর পাল্টালেও ব্রিটিশ কয়েকটি কাগজ ‘বন্দুকবাজ’-ই লিখে যাচ্ছে।’’

কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে হামলাকারীর ‘কষ্টের অতীত’-এর কথা বলে পাঠককে প্রভাবিত করা হচ্ছে বলেও মত বিলালের। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কই! যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের জঙ্গিদের তো কেউ নরম মনোভাব দেখায় না! অতীতের কাঁদুনি গেয়ে বর্তমানের নৃশংসতাকে খাটো করা যায় না।’’

অথচ বিশ্ব জুড়ে এমনই এক চক্রান্ত চলছে বলে জানালেন কলকাতার মনঃসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ। তাঁর দাবি, ‘‘নিউজ়িল্যান্ডের হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ধর্মের জিগির তুলে সন্ত্রাসের পাশাপাশি ধেয়ে আসছে চরম দক্ষিণপন্থীদের আগ্রাসনও। অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, আমেরিকা থেকে শুরু করে ভারতেও ‘বহিরাগত’ জুজু দেখানো হচ্ছে। বোঝানো হচ্ছে, বাইরে থেকে এসে ওরা তোমার সব কেড়ে নেবে। তাই রুখে দাঁড়াও।’’

ভারতে ‘এনআরসি’ থেকে মায়ানমারে ‘রোহিঙ্গা খেদাও’, মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর কিংবা ব্রিটেনের ‘ব্রেক্সিট’— সব এক সুতোয় বাঁধা বলে অভিমত মোহিতের। তাঁর কথায়, ‘‘জঙ্গিকে জঙ্গি বলার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের এই দ্বিধা বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এটা বিপজ্জনক।’’

তা হলে উপায়? উত্তর দিতে গিয়ে হতাশাই উঠে এল পোলান্ডের ওয়ারস বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অতিথি শিক্ষক সৌরভকুমার শাহির কথায়। তিনি বললেন, ‘‘শ্বেত সন্ত্রাস চেপে যাওয়াটা পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমের ট্র্যাডিশন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও এটা বহু বার করেছেন। ২০১৬-য় ফ্লরিডার অরল্যান্ডোয় নাইটক্লাবে হামলায় ৫০ জনকে খুনের দায় নিল আইএস। কিন্তু এখনও ওটাকে বন্দুকবাজের হামলা বলে লেখা হয় ওদের বহু কাগজে।’’

যেন দেখানোর চেষ্টা— সেই হামলাকারী ওমর মতিন আর অস্ট্রেলীয় ব্রেন্টন ‘লোন উলফ’ বা ‘নিঃসঙ্গ নেকড়ে’। সমকামী কিংবা মুসলিমদের উপর রাগটা তার তার একার। পিছনে কোনও সংগঠনের হাত নেই। শাহি যদিও বললেন, ‘‘লোন উলফ-কে যে ভাবে তৈরি করা হয়, সেটাই রহস্যের। সামনে আসে না বলে হামলার আসল মাথাটাকেই তো চেনা যায় না।’’ তবু জঙ্গি ব্রেন্টনের দীর্ঘদিনের পুষে রাখা ‘বহিরাগত-আতঙ্ক’ ছাপ রেখে যায় তার ইস্তাহারে, কোর্টে মুচকি হাসি আর হাতের ‘শ্বেত সন্ত্রাস’ মুদ্রায়। আর পড়ে থাকে ওই মেশিনগানটা। যাতে লেখা তার ‘নায়কদের’ নাম। যাদের কেউ ছাত্র— সুইডেনে গুলি করে মেরেছিল দুই শরণার্থী শিশুকে। কেউ বা পাক্কা জঙ্গি, কানাডার মসজিদে মেরেছিল ছ’জনকে। এক জন ভেনিসের সেনাকর্তা, যে চুক্তি ভেঙে নির্বিচারে হত্যা করেছিল যুদ্ধবন্দি তুর্কিদের। এদের কেউ পঞ্চদশ শতাব্দীর, কেউ আবার একেবারে হালফিলের।

‘শিক্ষা-দীক্ষায়’ এতটাই ব্যাপ্তি ব্রেন্টনের!

Christ Church Attack New Zealand Brenton Tarrant White Supremacy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy