Advertisement
E-Paper

ধানমন্ডির এই বাড়িতেই ৫০ বছর আগে সপরিবারে খুন হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, ধ্বংস করা হল সেই স্মৃতি

গত ৫ অগস্ট হাসিনার সরকারের পতনের পরেই উন্মত্ত জনতা ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দিয়েছিল মুজিবের স্মৃতিবিজড়িত ৩২ নম্বর ধানমন্ডি। বুধবার রাত থেকে শুরু হল সেই ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৪৫
বঙ্গবন্ধু মুজিবের সেই বুলেটবিদ্ধ দেহ।

বঙ্গবন্ধু মুজিবের সেই বুলেটবিদ্ধ দেহ। ছবি— প্রথম আলোর সৌজন্যে।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট বাংলাদেশ সেনার টু-ফিল্ড রেজিমেন্ট আর বেঙ্গল ল্যান্সারের ঘাতকবাহিনীর গুলিতে ৩২ নম্বর ধানমন্ডির এই বাড়িতেই ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর শিশুপুত্র, অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূকেও রেহাই দেননি মেজর ডালিম, মেজর নূর, মেজর হুদা, মেজর শাহরিয়ার রশিদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন, মেজর পাশা, মেজর রাশেদ, রিসালদার মোসলেমউদ্দিন-সহ চক্রান্তকারী সেনারা। পৌনে এক ঘণ্টার অপারেশনে নিহত হয়েছিলেন ১৮ জন! সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি চুরমার হয়ে গেল স্বাধীন বাংলাদেশে। সৌজন্যে, একদল উন্মত্ত বিক্ষোভকারী।

মুজিব-কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়ে ৩২ নম্বর ধানমন্ডির সেই বাড়িটিকে পরিণত করেছিলেন সংগ্রহশালায়। সিঁড়ির মাঝবরাবর রাখা ছিল তাঁর বুলেটবিদ্ধ দেহের সাদা-কালো ছবি। পাঁচ দশক আগে বাংলাদেশে রক্তাক্ত পালাবদলের সময় ওখানেই গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন মুজিব। গত ৫ অগস্ট হাসিনার সরকারের পতনের পরেই উন্মত্ত জনতা ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দিয়েছিল মুজিবের স্মৃতিবিজড়িত ৩২ নম্বর ধানমন্ডি। বুধবার রাতে বুলডোজ়ার, ক্রেন, ভ্যাকুয়ম মেশিন এনে মুজিবের স্মৃতি মুছে দেওয়ার সেই ‘বৃত্ত’ যেন সম্পূর্ণ হল। এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত পুরো বাড়ি ভাঙা না হলেও ৩২ নম্বর ধানমন্ডির সেই বাড়ির অনেকটা অংশই ভাঙা হয়েছে।

মুজিবের পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্টের ভোরে ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, ১০ বছরের শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালও নিহত হয়েছিলেন ঘাতকের বুলেটে। বিদেশে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন মুজিবের দুই কন্যা, হাসিনা এবং রেহানা। হাসিনা জমানায় কয়েক জন খুনি সেনা অফিসারের ফাঁসি হলেও ডালিম, পাশা, নূরেরা বিদেশে নিরাপদে আত্মগোপন করেছিলেন। ঘটনাচক্রে, বুধবার হাসিনার ভার্চুয়াল বক্তৃতার কথা সমাজমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পরেই আওয়ামী লীগ বিরোধী শক্তির রোষ নতুন করে আছড়ে পড়ে ৩২ ধানমন্ডিতে।

পাকিস্তান সরকার এবং সেনা নিপীড়নের প্রতিবাদে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতা ঘোষণা করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘রক্ত দিয়েই রক্তের ঋণ শোধ করতে আমি প্রস্তুত।’’ তাঁর সেই বক্তৃতা সূচনা করেছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের। যার পরিণামে সে বছরের ডিসেম্বরেই বদলে গিয়েছিল এশিয়ার মানচিত্র। কিন্তু স্বাধীনতার পরে মুজিবের শাসন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। যে চেতনাকে ধারণ করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরেই তার উল্টো দিকে পথচলা শুরু হয়েছিল। প্রশাসন থেকে রাজনীতি, সব জায়গায় পাকিস্তানি ভাবধারার প্রভাবে সূচনা সে সময়ই হয়েছিল বলে অভিযোগ।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেনার সমর্থনে প্রেসিডেন্ট হওয়া খোন্দকার মোশতাক আহমেদের সরকার বাংলাদেশ বেতারের নাম পাল্টে রেডিয়ো বাংলাদেশ করেছিল। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বদলে গিয়ে চালু হয়েছিল— ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত প্রায় ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী জেল থেকে বেরিয়ে আসে তার পরবর্তী এক বছরের মধ্যেই। ঘটনাচক্রে, হাসিনার পতনের পরে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের জমানাতেও কয়েকশো কুখ্যাত জঙ্গিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। শুরু হয়েছে ভারত বিরোধী তৎপরতা। পাশাপাশি, ’৭৫-এর মতোই মুক্তিযোদ্ধা ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের সমর্থকদের কোণঠাসা করার কাজ শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ।

মুজিব-হত্যার পরে সেনাপ্রধানের কুর্সিতে বসে ক্ষমতা দখল করা জিয়াউর রহমান, হুসেন মহম্মদ এরশাদ এমনকি, অবাধ ভোটে ক্ষমতা দখলকারী খালেদা জিয়ার আমলেও সেই কট্টরপন্থী ধারা বজায় থাকার অভিযোগ উঠেছে বারে বারে। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদের ভোটে জিতে হাসিনা দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে সেই ধারা কিছুটা বদলেছিল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করেন। এ বার হাসিনা-বিরোধী আন্দোলেন ‘নিষিদ্ধ’ জামাতে ইসলামির সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং অন্তর্বর্তী সরকারে জামাত নেতৃত্বের ‘প্রভাব’ আবার সেই পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। ৩২ ধানমন্ডিতে বুলডোজ়ার এনে বাড়ির অনেকটা অংশ মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার মধ্যে দিয়েই কি সেই প্রক্রিয়ায় সূচনা হল?

Bangladesh Bangladesh Unrest Bangladesh Army Unrest in Bangladesh Sheikh Mujibur Rahman Assassination of Sheikh Mujibur Rahman Sheikh Hasina Bangladesh Awami League awami league
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy