Advertisement
E-Paper

তাণ্ডব, অগ্নিসংযোগের পর এল বুলডোজ়ার! গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে শেখ মুজিবের ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি

ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি ভেঙে দিচ্ছেন হাসিনা-বিরোধীরা! বুলডোজ়ার এনে শুরু হয়েছে বাড়ি ভাঙা।

বুধবার বেশি রাতে ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি ভেঙে দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।

বুধবার বেশি রাতে ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি ভেঙে দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৩:৩১
Share
Save

বাংলাদেশের ঢাকায় শেখমুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বুধবার বাংলাদেশবাসীর উদ্দেশে ভার্চুয়ালি ভাষণ দেন সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর ভাষণ সম্প্রচারের কথা আগেই ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ ও ছাত্র লীগ। তা নিয়ে হাসিনা-বিরোধীদের ক্ষোভও পুঞ্জীভূত হচ্ছিল। বুধবার হাসিনার ভাষণ শুরুর আগেই সেই রোষ গিয়ে পড়ে ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িতে। মুজিবের বাড়িতে প্রথমে তাণ্ডব, ভাঙচুর চালায় জনতা। পরে সেখানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। শেষে বেশি রাতের দিকে বুলডোজ়ার নিয়ে আসা হয়। শুরু হয় মুজিবের স্মৃতি জড়ানো ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি ভাঙা।

বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম 'প্রথম আলো'র প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুধবার রাত প্রায় ১১টা নাগাদ ধানমন্ডিতে মুজিবের বাড়ির সামনে একটি ক্রেন এবং একটি এক্সকাভেটর এনে বাড়ি ভাঙা শুরু হয়। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ভবনের একটি অংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বাকি অংশও ভেঙে ফেলা হচ্ছে।

বুধবার রাতে শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ ধানমন্ডির বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

বুধবার রাতে শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ ধানমন্ডির বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: রয়টার্স।

ধানমন্ডিতে হাসিনারও বাড়ি রয়েছে। সেখানেও আছড়ে পড়ে জনরোষ। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুসারে, ধানমন্ডির ৫/এ-তে আওয়ামী লীগ নেত্রী হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা ‘প্রথম আলো’কে জানান, রাতে সাড়ে ১০টার পরে ধানমন্ডিতে হাসিনার বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেন কয়েক জন। বেশি রাতের দিকে স্থানীয় এক দমকল আধিকারিক জানান, রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাঁরা আগুনের খবর পেয়েছেন।

ঢাকার বাইরেও ক্রমশ ছড়াতে শুরু করেছে হাসিনা-বিরোধী রোষের আগুন। ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, খুলনাতেও ভেঙে দেওয়া হচ্ছে ‘শেখ বাড়ি’। এটি হাসিনার কাকার বাড়ি। বুধবার রাত ৯টা নাগাদ বাড়িতে তাণ্ডব শুরু হয়। ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ভাঙচুর শুরু করেন। পরে সিটি করপোরেশনের দু'টি বুলডোজার নিয়ে বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়া শুরু হয়। কুষ্টিয়াতেও বুলডোজ়ার চলেছে প্রাক্তন সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়িতে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও মুজিব এবং হাসিনার ম্যুরাল একদল পড়ুয়া ভেঙে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে আসছে।

রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ভোলা সদরের গাজীপুর সড়কে ‘প্রিয় কুটির’ নামে একটি বাড়িতে আগুন ধরানো হয়। এটি আওয়ামী লীগ নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ তোফায়েল আহমেদের বাড়ি। রাত ১টা নাগাদ কুমিল্লার মুন্সেফবাড়ি এলাকায় প্রাক্তন সাংসদ বাহাউদ্দীন বাহারের বাড়িতেও ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

বাংলাদেশে বুধবার বিকেল থেকেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বিভিন্ন পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে। সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহও সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, “আজ রাতে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।” বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলির উদ্দেশেও বার্তা দিয়ে রেখেছেন। তাঁদের বক্তব্য, হাসিনার ভাষণ কোনও সংবাদমাধ্যম প্রচার করলে, সেই গণমাধ্যম হাসিনাকে সহযোগিতা করছে বলে ধরে নেওয়া হবে।

গত বছরের ৫ অগস্ট বাংলাদেশে হাসিনার সরকারের পতন হয়। সেই সময়েও জনরোষ আছড়ে পড়েছিল মুজিবের ধানমন্ডির বাড়িতে। তার পর থেকে বাড়িটি দৃশ্যত পরিত্যক্ত অবস্থাতেই পড়েছিল। বুধবার হাসিনার সরকারের পতনের ছ'মাসের মাথায় আবারও বিক্ষোভকারীদের রোষানলে পুড়ল সেই বাড়ি। এই বাড়িতেই পাঁচ দশক আগে বাংলাদেশে রক্তাক্ত পালাবদলের সময় গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের দেহ। মুজিব-কন্যা হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়ে ৩২ নম্বর ধানমন্ডির সেই বাড়িটিকে পরিণত করেছিলেন সংগ্রহশালায়।

বুধবার ধানমন্ডিতে মুজিবের বাড়ি ভাঙার প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণেও। তিনি বলেন, “ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে জাতির পিতা (শেখ মুজিব) স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই ঘটনার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল। তখনও এই বাড়িটিতে তারা লুটপাট করেছিল। কিন্তু আগুন দিয়ে পোড়ায়নি, ভাঙেনি।”

ধানমন্ডির বাড়ির স্মৃতিচারণা করে হাসিনা জানান, শেখ মুজিব কখনও সে দেশের রাষ্ট্রপতি ভবনে বা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে থাকেননি। এই ছোট বাড়িটিতেই ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগ নেত্রী বলেন, “আমার মা অনেক কষ্ট করে এই বাড়িটির প্রতিটি ইট নিজের হাতে গেঁথেছিলেন।”

বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “অনেক রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, বিশ্বের বড় বড় নেতারা এই বাড়িতে এসেছেন। আজ এই বাড়িটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। কেন? বাড়িটির কী অপরাধ? এই বাড়িটিকে কেন এত ভয় পাচ্ছেন?” আওয়ামী লীগের নেত্রীর দাবি, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এর বিচার করবেন।

Bangladesh Unrest Sheikh Mujibur Rahman Bangladesh Sheikh Hasina Muhammad Yunus

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}