Advertisement
E-Paper

মুজিবের ‘ধানমন্ডির বাড়িতে পাকিস্তানি হানাদারেরাও এ ভাবে আগুন ধরায়নি’! মনে করিয়ে দিলেন শেখ হাসিনা

হাসিনার অভিযোগ, বর্তমানে বাংলাদেশের ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। তাঁর মতে, যাঁরা এ সব করার চেষ্টা করছেন তাঁরা নিজেদের ‘দুর্বলতা’ এবং ‘হীনম্মন্যতা’ প্রকাশ করেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:১৩
৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি এবং শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি মনে করালেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি এবং শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি মনে করালেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ছ’মাসের মাথায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ফের মুখ খুললেন সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের উদ্দেশে ৫২ মিনিটের অডিয়ো বার্তায় উঠে এল বাংলাদেশবাসীর বিরুদ্ধে ‘চক্রান্তের’ অভিযোগ। আওয়ামী লীগের সমাজমাধ্যমের পাতায় যখন হাসিনার এই অডিয়োবার্তা সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে, তখন ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িতে তাণ্ডব চালাচ্ছেন হাসিনা-বিরোধীরা। শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র একটি ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, ভবনের উপরের তলায় অগ্নিসংযোগও করা হয়েছে। বুধবার হাসিনার অডিয়োবার্তাতেও উঠে আসে ধানমন্ডির বাড়ির কথা।

হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পরেও এক বার হামলা হয়েছিল এই বাড়িতে। হাসিনা বলেন, “ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে জাতির পিতা (শেখ মুজিব) স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই ঘটনার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল। তখনও এই বাড়িটি তারা লুঠপাট করেছিল। কিন্তু আগুন দিয়ে পোড়ায়নি, ভাঙেনি।” ধানমন্ডির বাড়ির স্মৃতিচারণা করে হাসিনা জানান, শেখ মুজিব কখনও সে দেশের রাষ্ট্রপতি ভবনে বা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে থাকেননি। এই ছোট বাড়িটিতেই ছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগ নেত্রী বলেন, “আমার মা অনেক কষ্ট করে এই বাড়িটির প্রতিটি ইট নিজের হাতে গেঁথেছিলেন।” তাঁর অভিযোগ, বর্তমানে বাংলাদেশের ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। তবে এই অভিপ্রায় সফল হবে না বলেও জানান তিনি। হাসিনার মতে, যাঁরা এ সব করার চেষ্টা করছেন তাঁরা নিজেদের ‘দুর্বলতা’ এবং ‘হীনম্মন্যতা’ প্রকাশ করেছেন।

হাসিনার স্মরণ করিয়ে দেন, ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি পরবর্তী সময়ে মুজিবের পরিবার ব্যক্তিগত ভাবে ব্যবহার করেনি। সেটি একটি সংগ্রহশালা করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “অনেক রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, বিশ্বের বড় বড় নেতারা এই বাড়িতে এসেছেন। আজ এই বাড়িটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। কেন? বাড়িটির কী অপরাধ? এই বাড়িটিকে কেন এত ভয় পাচ্ছেন?” আওয়ামী লীগের নেত্রীর দাবি, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এর বিচার করবেন। তিনি বলেন, “আমরা দুই বোন যে স্মৃতিটুকু নিয়ে বেঁচেছিলাম, আজ সেই স্মৃতিটুকুও ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এর আগে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। আজ ভেঙে ফেলা হচ্ছে।” কথাগুলি বলতে বলতে হাসিনার গলা শুনে মনে হল, ঈষৎ ফুঁপিয়ে উঠলেন তিনি।

‘পাকিস্তানিদের পদলেহনে’র অভিযোগ

বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে সংবিধান, স্বাধীনতা, পতাকা পেয়েছি— তা কয়েক জন বুলডোজ়ার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে পারবে না। এ শক্তি তাঁদের এখনও হয়নি। এটি তাঁদের দুর্বলতার প্রকাশ। তাঁরা দালান ভাঙতে পারে, কিন্তু ইতিহাসকে ধ্বংস করতে পারে না। ইতিহাস যে প্রতিশোধ নেয়। এ কথা তাঁদের মনে রাখতে হবে। যাঁরা এ সব করছেন, তাঁরা হীনম্মন্যতার পরিচয় দিচ্ছেন। তাঁদের হয়তো বাংলাদেশের স্বাধীনতা পছন্দ নয়। পাকিস্তানিদের অধীনে থাকা এবং পদলেহন করাটাই হয়তো তাঁদের পছন্দ।”

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘চক্রান্তে’র অভিযোগ

হাসিনার কথায়, “বাংলাদেশকে নিয়ে ধ্বংসের খেলা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল ছিল, উন্নয়নের বিস্ময় ছিল। সেই বাংলাদেশকে চরম ভাবে ধ্বংস করে জঙ্গি, সন্ত্রাসীদের দেশ হিসাবে পরিণত করা হয়েছে। এটিই হল সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়।” তাঁর অভিযোগ, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত করা হয়েছে। গোটা বাংলাদেশ আজ সেই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, “কেউ রেহাই পাচ্ছেন না। এদের ধ্বংসের খেলা, রক্তের খেলা বাংলাদেশকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে।” বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনও আসলে একটি ‘ষড়যন্ত্র’ ছিল বলে মনে করছেন তিনি।

সরাসরি ‘দুর্নীতি’র নিশানা ইউনূসকে

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকেও আক্রমণ শানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেত্রী। হাসিনার দাবি, ইউনূসকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা তিনিই করেছিলেন। কিন্তু ইউনূস তৎকালীন সরকারের আমলে ‘আর্থিক দুর্নীতি’ করেছেন বলে অভিযোগ হাসিনার। অডিয়োবার্তায় ইউনূস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “১৯৯০ সালে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের পদে ৬০০০ টাকার বেতনের চাকরি পেয়েছিলেন। আমি ১৯৯৬ সালে সরকারে আসার পরে এই গ্রামীণ ব্যাঙ্ককে ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিই। গ্রামীণ ফোনের ব্যবসাও ইউনূসকে দিয়েছিলাম। আমার কাছে বার বার ধর্না দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সেখান থেকে লাভের অংশ গ্রামীণ ব্যাঙ্কে যাবে। কিন্তু তা যায়নি। তিনি আর্থিক দুর্নীতি করেছেন। তাঁর ক্ষমতার লোভ আজ বাংলাদেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে এসেছে।”

ছাত্রসমাজের উদ্দেশে বার্তা

আওয়ামী লীগ নেত্রীর ৫২ মিনিটের এই অডিয়োবার্তা ছিল মূলত ছাত্রসমাজের উদ্দেশে। বাংলাদেশের ছাত্রদের উদ্দেশে হাসিনা বলেন, “সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আমাদের কোনও রাগও নেই, অভিযোগও নেই। আমি জানি তোমাদের বয়সটাই এই রকম।” তবে এই গোলমালের মধ্যে ছাত্রদের সকলে প্রবেশ করেননি বলেও জানান তিনি। হাসিনা বলেন, “সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের এ সবের থেকে দূরে থাকা উচিত। তারা যেন এই ধ্বংসযজ্ঞে অংশ না নেয়।” ছাত্রীদের উদ্দেশে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর আমলে শিক্ষার জন্য ‘চমৎকার পরিবেশ’ তৈরি করা হয়েছিল। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে ‘জঙ্গিদের হাতে’ তুলে না দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

Sheikh Hasina Bangladesh Mujibur Rahman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy