হামলার পর। ছবি: এএফপি।
বছর তিনেক আগে ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠীর এক মুখপাত্র ‘লোন উল্ফ’-দের (একক আততায়ী) উদ্দেশে একটা বিশেষ বার্তা দিয়েছিল। তার বক্তব্য ছিল, ‘‘আইইডি বা গুলি জোগাড় করতে না পারলে মার্কিন, ফরাসি বা ওদের বন্ধু দেশের নাগরিককে বেছে বেছে বার করো। তার পর পাথর দিয়ে ওদের মাথা গুঁড়িয়ে দাও, না হলে ছুরি মেরে কুপিয়ে দাও অথবা গাড়িচাপা দিয়ে মারো। নয়তো উঁচু জায়গা থেকে ঠেলে ফেলে দাও, গলা টিপে মারো বা বিষ দিয়ে মারো।’’
তবে এত সব পন্থার মধ্যে ক্রমে ক্রমে জঙ্গিদের কাছে সব চেয়ে সহজে ‘নিকেশের পথ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রাক বা গাড়ি নিয়ে হামলা। ‘নিউ আমেরিকা’ নামে একটি গবেষণা সংস্থার দাবি, ২০১৪ সালের পর থেকে পশ্চিমে অন্তত ১৫টি গাড়ি বা ট্রাক হামলা (ম্যানহাটনের হামলা ধরে) চালিয়েছে জঙ্গিরা। সব মিলে তাতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪২ জন। ট্রাক বা গাড়িতে একসঙ্গে অনেককে পিষে মেরে ফেলা সহজ বলে এই কৌশলটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পশ্চিমের জঙ্গিদের মধ্যে। আর এতে ঝামেলাও কম। শুধু কোনওমতে একটা ট্রাক বা গাড়ি ভাড়া করে জমায়েতে ঢুকে পড়লেই হলো। অস্ত্র কেনার ঝক্কি নেই। বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম কিনে সন্দেহে পড়ার ভয় নেই।
যাঁরা ভাড়া গাড়ির ব্যবসা করেন, তাঁদের গত কয়েক বছর ধরে বারবার সতর্ক করেছে নিউ ইয়র্কের পুলিশ। এখানকার পুলিশের গোয়েন্দা এবং সন্ত্রাসদমন বিভাগের ডেপুটি কমিশনার জন মিলার মঙ্গলবার বলেছেন, এ নিয়ে যথেচ্ছ প্রচার চালানো হয়েছে। যিনি গাড়ি বা ট্রাক ভাড়া নিচ্ছেন, তাঁকে এতটুকু সন্দেহজনক মনে হলে সংস্থা ভাড়া দেবেই না। বা দিতে গড়িমসি করে পুলিশকে খোঁজখবর নেওয়ার সুযোগ করে দেবে।
প্রশ্ন উঠেছে, তা সত্ত্বেও হোম ডিপো থেকে এত সহজে পিক আপ ট্রাক কী ভাবে ভাড়া করল ম্যানহাটনের আততায়ী সেফুল্লো হাবিবুলেভিক সাইপভ? হোম ডিপো এখন মুখে বলছে, তারা তদন্তে সহযোগিতা করবে। কিন্তু অতীতে সাইপভের যান-সংক্রান্ত অপরাধের রেকর্ড তাদের চোখ এড়িয়ে গেল কী ভাবে? সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।
ইয়েমেনে আল কায়দা গোষ্ঠী ২০১০ সালে পশ্চিমী দেশগুলোয় গাড়ি বা ট্রাকে হামলার ডাক দেয়। তিন বছর আগে সেটাকেই মূল হাতিয়ারে পরিণত করে আইএস। এই ধরনের হামলা আরও বাড়বে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। কারণ পশ্চিমী শহরগুলোয় ভিড়ের মধ্যে দুম করে কেউ যদি গাড়ি বা ট্রাক নিয়ে ঢুকে পড়ে, তাকে ঠেকানো মুশকিল। গত অগস্টেই স্পেনের বার্সেলোনায় ভ্যান পিষে মারে ১৪ জনকে। জুন মাসে একই কায়দায় হামলা হয় লন্ডন ব্রিজে, নিহত হন ৮ জন। এপ্রিলে স্টকহলমে এমন হামলায় প্রাণ যায় ৫ জনের। মার্চেও লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজে ভ্যানের হামলা কে়ড়ে নেয় ৫ জনের প্রাণ। গত বছর বার্লিনে ক্রিসমাস মার্কেটে ট্রাক পিষে মারে ১২ জনকে। ২০১৬ সালেই জুলাইয়ে ট্রাক-হামলার সব চেয়ে ভয়ঙ্কর নিদর্শন দেখতে হয়েছে ফ্রান্সের নিসকে। ৮৪ জনের প্রাণ যায় তাতে।
পুলিশের মতে, এ ধরনের হামলা এড়াতে জমায়েতের কাছাকাছি বা ভিতরে যান নিয়ন্ত্রণ চালু করা দরকার। যদিও তারাই আবার বলছে, মঙ্গলবার ম্যানহাটনে ভিড়ের মধ্যে হামলা হয়নি। তাই জঙ্গিদের এই কৌশল এখনও চাপেই রাখছে পুলিশকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy