Advertisement
E-Paper

দেড় গুণ খরচ করে কেন সেনাবিমানে করে ফেরত পাঠাচ্ছেন অবৈধবাসীদের? ইঙ্গিত ট্রাম্পের পোস্টেই

বাণিজ্যিক বিমানের পরিবর্তে অতিরিক্ত খরচ করে কেন সেনাবাহিনীর বিমানে চাপিয়ে পাঠানো হল ওই অবৈধবাসীদের? সেই ইঙ্গিত মিলেছিল ট্রাম্পের মন্তব্য এবং তাঁর প্রশাসনের কর্তাদের পোস্টেই।

ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্প। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:২৮
Share
Save

প্রেসিডেন্ট পদে শপথগ্রহণের পরে একে একে অবৈধবাসীদের নিজেদের দেশে ফেরানোর কথা জানিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই মতো প্রথম দফায় ১০৪ জন অবৈধবাসী ভারতীয়কে টেক্সাস থেকে এ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। বুধবার সেই অবৈধবাসীদের নিয়ে অমৃতসর বিমানবন্দরে নেমেছে আমেরিকার সেনাবাহিনীর সি-১৭ বিমান। বাণিজ্যিক বিমানের পরিবর্তে অতিরিক্ত খরচ করে কেন সেনাবাহিনীর বিমানে চাপিয়ে পাঠানো হল ওই অবৈধবাসীদের? সেই ইঙ্গিত মিলেছিল ট্রাম্পের মন্তব্য এবং তাঁর প্রশাসনের কর্তাদের পোস্টেই।

মার্কিন প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, সে দেশে সেনা বিমানের ব্যবহার খুব একটা করা হয়নি। তাতে যাতায়াতের খরচও বাণিজ্যিক বিমানের থেকে অনেক বেশি। সম্প্রতি কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো জানিয়েছেন, আমেরিকা যদি অবৈধবাসীদের নিজেদের সেনাবাহিনীর বিমানে তাঁর দেশে পাঠান, তা হলে তাঁদের গ্রহণ করা হবে না। কেবলমাত্র বাণিজ্যিক বিমানেই পাঠাতে হবে অবৈধবাসীদের। তার পরেও ট্রাম্প আমেরিকা থেকে অবৈধবাসীদের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছেন সেনাবাহিনীর বিমানেই। কেন? এর খরচই বা কত?

এর আগে সাধারণত অবৈধবাসীদের বাণিজ্যিক চার্টার বিমানে নিজেদের দেশে পাঠিয়েছে আমেরিকা। ওই বিমানগুলির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে আমেরিকার শুল্ক এবং অভিবাসন দফতর (আইসিই)। ট্রাম্প সেই পথে হাঁটেননি। মার্কিন সেনাবাহিনীর সি-১৭ বিমানে অবৈধবাসীদের দেশে পাঠাচ্ছেন তিনি। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সেনার ওই বিমানে চাপিয়ে এক এক জন অধিবাসীকে আমেরিকা থেকে গুয়াতেমালায় পাঠানোর জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে গুনতে হয়েছে ৪,৬৭৫ মার্কিন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় চার লক্ষ টাকা। যেখানে বাণিজ্যিক বিমানে আমেরিকা থেকে গুয়াতেমালায় ওই একই পথে এক এক জন অবৈধবাসীকে পাঠাতে খরচ পড়ত ৮৫৩ মার্কিন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৭৪ হাজার টাকা।

২০২৩ সালে বাজেট অধিবেশন আইসিই-র ডিরেক্টর তায়ে জনসন জানিয়েছিলেন, তাদের বিমানে অবৈধবাসীদের নিজেদের দেশে ফেরাতে প্রতি ঘণ্টায় খরচ পড়ে ১৭ হাজার মার্কিন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা। ওই বিমানে চাপতে পারেন সর্বাধিক ১৩৫ জন। পাঁচ ঘণ্টা যাত্রাকাল ধরলে, সেই বিমানে চাপিয়ে নিজের দেশে পাঠাতে গেলে প্রত্যেক অবৈধবাসীর জন্য খরচ পড়বে ৬৩০ মার্কিন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫৫ হাজার টাকা। সে ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয়েছিল, ওই দেশে অবৈধবাসীদের রেখে ফেরার খরচ দেবে ওই চার্টার সংস্থা। রিপোর্ট বলছে, চার্টার বিমানের যেখানে প্রতি ঘণ্টায় খরচ পড়ে ১৭ হাজার মার্কিন ডলার, সেখানে মার্কিন সেনার বিমানে প্রতি ঘণ্টায় খরচ পড়ে ২৮,৫০০ ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা।

আমেরিকা থেকে অবৈধবাসীদের নিয়ে এখনও পর্যন্ত ভারত ছাড়াও গুয়াতেমালা, পেরু, হন্ডুরাস, ইকুয়েডরে গিয়েছে মার্কিনসেনার বিমান। বাকি সব দেশের তুলনায় ভারতে আসতেই সবচেয়ে বেশি দূরত্ব পার হতে হয়েছে ওই বিমানকে। সেই হিসাবে ভারতে অবৈধবাসীদের পাঠাতে খরচও যে বেশি হয়েছে, তা স্বাভাবিক।

আমেরিকার প্রশাসনের একটি সূত্র মনে করছে, এত খরচ করে মার্কিন সেনার বিমানে অবৈধবাসীদের নিজের নিজের দেশে পাঠিয়ে আসলে বেআইনি অভিবাসন নিয়ে কড়া বার্তা দিতে চান ট্রাম্প। তিনি বার বার এই অবৈধবাসীদের ‘অপরাধী’, ‘বহিরাগত’ বলে দাবি করেছেন। এ-ও দাবি করেছেন যে, এই অবৈধবাসীরা ‘আক্রমণকারী’। মার্কিন প্রশাসনের একটা অংশ বলছে, ট্রাম্পের এই দাবিকে ‘প্রতিষ্ঠিত’ করার জন্যই ওই অবৈধবাসীদের হাতকড়া পরিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে তোলা হয়েছে সেনার বিমানে। সম্প্রতি রিপাবলিকানদের একটি বৈঠকে ট্রাম্পকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ইতিহাসে প্রথম বার অবৈধবাসীদের চিহ্নিত করে আমরা সেনার বিমানে তুলেছি। যেখান থেকে তাঁরা এসেছিলেন, সেখানেই ফেরত পাঠাচ্ছি। এত বছর লোকে আমাদের নিয়ে হেসেছে। আবার আমাদের সম্মান করবে।’’

গত ২৪ জানুয়ারি এক্স (সাবেক টুইটারে) হাতকড়া পরানো অবস্থায় অবৈধবাসীদের বিমানে তোলার একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট। তিনি লিখেছিলেন, ‘‘অবৈধবাসীদের ফেরত পাঠানো শুরু হয়েছে। সারা পৃথিবীকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কড়া বার্তা দিতে চাইছেন, বেআইনি ভাবে আমেরিকায় প্রবেশ করলে ভুগতে হবে।’’ এর আগে গত ডিসেম্বরে ট্রাম্পের একটি বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়েছিল যে, খরচ যা-ই হোক, তিনি এই অবৈধবাসীদের আমেরিকা থেকে বার করতে কতটা মরিয়া। বলেছিলেন, ‘‘আগামী ২০ বছর ওই অবৈধবাসীরা শিবিরে থেকে যাবে, এ সব মানব না। আমি তাঁদের বার করে দেবই এবং তাঁদের দেশ তাঁদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য।’’ সেই মতো গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট পদে শপথগ্রহণের পরে একে একে অবৈধবাসীদের সেনার বিমানে চাপিয়ে নিজেদের দেশে ফেরাচ্ছেন ট্রাম্প।

Donald Trump

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}