তাইওয়ানকে ঘিরে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চিন। এই মহড়ার জন্য স্থলবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীকে প্রস্তুত রেখেছে বেজিং। যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত বলে জানিয়েছে তাইওয়ান প্রশাসনও।
চিন এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’। বেজিঙের বক্তব্য, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বার্তা’ দিতেই এই মহড়া চালাচ্ছে তারা। সোমবার সকাল থেকে মহড়া শুরু হলেও মঙ্গলবার ৮টা থেকে (স্থানীয় সময় অনুসারে) ‘আসল মহড়া’ শুরু করবে চিনের সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড। চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
চিনের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের এই মহড়া বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলির জন্য বড় শাস্তি। চিন এবং তাইওয়ানের ঐক্যের পথে বাধা তৈরি করা হলে, তার ফল ভাল হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে শি জিনপিঙের প্রশাসন।
তাইওয়ানের তরফে চিনের এই সামরিক অভিযানের নিন্দা করে বলা হয়েছে, এটি আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির বিরোধী। তাইপেই (তাইওয়ানের রাজধানী)-এর তরফে বলা হয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই মহড়ায় অংশ নেওয়া চিনের বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমানকে শনাক্ত করেছে। সেগুলির বেশ কয়েকটি দু’পক্ষের নির্ধারিত সীমাকে অতিক্রম করছে বলেও অভিযোগ করেছে তাইওয়ান। তারাও নিজেদের সেনাবাহিনী এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাকে প্রস্তুত রেখেছে।
চিনের সঙ্গে সংঘাতের আবহেই চলতি মাসে তাইওয়ানকে ১১১০ কোটি ডলারের (প্রায় ১ লক্ষ ২৬৩ কোটি টাকা) অস্ত্র সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। আমেরিকা-তাইওয়ান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাসে এটিই বৃহত্তম সামরিক সহযোগিতা। আমেরিকার এই পদক্ষেপের খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেজিং। শি জিনপিং সরকারের বিদেশ দফতরের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, ‘‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করার জন্য আমেরিকা বলপ্রয়োগ করলে হিতে বিপরীত হবে। তাইওয়ানকে ব্যবহার করে চিনকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল একেবারেই সফল হবে না।’’ সামরিক মহড়ার মাধ্যমে চিন আসলে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি’ আমেরিকাকেই বার্তা দিতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে ২০২২ সালের অগস্টে চিনের আপত্তি খারিজ করে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজ়েনটেটিভসের তৎকালীন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরে গিয়েছিলেন। তার পরেই নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়। সে সময় ধারাবাহিক ভাবে তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করতে শুরু করেছিল চিনা যুদ্ধবিমান। চিন-তাইওয়ান সঙ্কটের আবহে সে সময় আমেরিকার সপ্তম নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ তাইওয়ান প্রণালীতে ঢুকেছিল।
চিন বরাবরই তাইওয়ানকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে। কখনওই তাইওয়ানের ‘স্বাধীনতা’ স্বীকার করেনি চিনের কমিউনিস্ট সরকার। তবে ‘স্বাধীন’ তাইওয়ানকে সামনে রেখে বহু বার চিনের উপর কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধির কৌশল নিয়েছে আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলি।