Advertisement
E-Paper

শুধুই ইউক্রেন যুদ্ধ, না কি রুশ প্রেসিডেন্টের মাথায় অন্য ছক? ট্রাম্পের সঙ্গে মুখোমুখি বসতে কেন উৎসাহ দেখালেন পুতিন

দ্বিতীয় বার হোয়াইট হাউস ‘দখল’ করার পর থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প বহু বার বিশ্বের সামনে নিজেকে ‘শান্তির দূত’ হিসাবে তুলে ধরেছেন। তিনি মনে করেন, সংঘাত বা যুদ্ধ বন্ধ করার ক্ষমতা তাঁর চেয়ে ভাল আর কারও নেই!

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৫ ১৭:১৭
Why Vladimir Putin wants to meet Donald Trump in Alaska

(বাঁ দিকে) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

যুদ্ধবিরতি-প্রশ্নে মিলবে কি কোনও সদুত্তর? নতিস্বীকার করবেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন না কি নতুন কোনও শর্ত চাপিয়ে চাপ বৃদ্ধির কৌশল নেবেন? পুতিনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক কার পক্ষে লাভজনক? শুক্রবার আলাস্কার বৈঠকের আগে এমন নানা প্রশ্নই ঘুরছে।

দ্বিতীয় বার হোয়াইট হাউস ‘দখল’ করার পর থেকেই ট্রাম্প বহু বার বিশ্বের সামনে নিজেকে ‘শান্তির দূত’ হিসাবে তুলে ধরেছেন। তিনি মনে করেন, সংঘাত বা যুদ্ধ বন্ধ করার ক্ষমতা তাঁর চেয়ে ভাল আর কারও নেই! মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথাতে, ‘‘গত ছ’মাসে আমি ছ’টি যুদ্ধের সমাধান করেছি। এতে আমি খুব গর্বিত। শুধু সমস্যার সমাধান করিনি, শান্তি স্থাপন করেছি।’’ নিউ ইয়র্ক টাইম্‌সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলাস্কার বৈঠক নিয়ে ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখছেন কূটনৈতিক মহলের একাংশ! ট্রাম্প নিজে এবং তাঁর সহযোগীরাও আলাস্কার বৈঠক নিয়ে প্রত্যাশা কমিয়ে ফেলেছেন। মার্কিন প্রশাসনের একাংশের দাবি, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি স্থাপন করা ট্রাম্পের কাজ নয়। কেউ কেউ আবার এ-ও বলছেন, পুতিনের সঙ্গে বৈঠক ট্রাম্পের কাছে শুধুমাত্র ‘শ্রবণ অনুশীলন’।

আলাস্কার বৈঠকের আগে বিশ্বের প্রায় সকলের মনে একটাই প্রশ্ন, থামবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ? ট্রাম্পের মতে, আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে! আলাস্কার বৈঠকের আগে পুতিনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, দ্বিতীয় বৈঠকই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্প আশা করছেন, ওই বৈঠকে পুতিনের সঙ্গে এক টেবিলে থাকতে পারেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কিও। তবে সেই বৈঠক কবে হবে, আদৌ তা হবে কি না— তা অনেকটা নির্ভর করছে শুক্রবার আলাস্কার বৈঠকের উপর।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বৈঠক নিয়ে উত্তেজনার পারদ চরমে উঠেছে। তৈরি হয়েছে কৌতূহলও। তবে অতীতে এই দুই রাষ্ট্রপ্রধানের দেখা করা, বৈঠক হওয়া খুবই স্বাভাবিক ছিল। যদিও এখন দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠক ‘বিরল’ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে! আলাস্কার বৈঠকে কে লাভবান হবেন? ট্রাম্প, পুতিন না কি জ়েলেনস্কি— তা নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে। ট্রাম্প নিজেকে এক জন ‘শান্তি রক্ষক’ হিসাবে দেখেন। তিনি মনে করেন, এই ধরনের কাজের জন্য তাঁর নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত। বিশ্ব জুড়ে চলমান সংঘাত থামানো নিয়ে ট্রাম্প নিজেই প্রচার করেছেন। তবে এখনও পর্যন্ত তিনি ‘অসফল’ ইজ়রায়েল-হামাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ক্ষেত্রে।

২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে ট্রাম্প এক সময় ঘোষণা করেছিলেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধ থামাবেন! কিন্তু সময় গড়িয়েছে, মেলেনি রফাসূত্র। যা ভেবেছিলেন, যে ছকে পরিকল্পনা করেছিলেন, তা না-হওয়ায় হতাশ ট্রাম্প। অনেকের মতে, সেই কারণে এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে অনেক বেশি ব্যক্তিগত!

আলাস্কার বৈঠক থেকেও যদি রাশিয়া-ইউক্রেন নিয়ে কোনও রফাসূত্র না বার হয়, তবে ট্রাম্পের নিজেকে ‘জয়ী’ হিসাবে চিত্রিত করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে মত কূটনৈতিক মহলের একাংশের। অনেকে এ-ও মনে করছেন, শুধু যুদ্ধবিরতি যথেষ্ট নয়! বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে অনেকের দাবি, সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা দেশটি হল ইউক্রেন এবং তার প্রেসিডেন্ট জ়েলেনস্কি। তার পরেই রয়েছেন ট্রাম্প এবং তাঁর আমেরিকা। এ ছাড়াও নেটোর সদস্য দেশগুলির চাপ কম নয়।

ইউক্রেনের কাছে কেন ঝুঁকি? অনেকের মতে, সংঘাত থামানোর লক্ষ্যে ট্রাম্প পুতিনের ‘তোতাপাখি’ হয়ে যেতে পারেন! আর তা হলে সমস্যায় পড়বে ইউক্রেন। কারণ, ট্রাম্প ‘জমি ছাড়ার’ বিষয়ে চাপ তৈরি করতে পারেন। দিন কয়েক আগেই ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের শান্তিচুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে জমি ছাড়ার প্রসঙ্গটি। সে ক্ষেত্রে রাশিয়াকে কিছু এলাকা ছেড়ে দেবে ইউক্রেন। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সহমত পোষণ করেননি জ়েলেনস্কি। ফলে এই নিয়ে জট তৈরি হতে পারে।

অনেকের মতে, পুতিনের মাথায় অন্য কোনও পরিকল্পনা চলতে পারে। শুধু ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘাত থামানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা করাই রুশ প্রেসিডেন্টের মূল লক্ষ্য না-ও হতে পারে। তিনি এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পুতিন চাইবেন রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা কতটা শিথিল করা যায়। পুনরায় বাণিজ্য শুরু করার প্রস্তাবও আসতে পারে পুতিনের থেকে। কারও মনে এ-ও প্রশ্ন জাগছে, পুতিন এই বৈঠককে ট্রাম্প এবং নেটো সদস্যদের মধ্যে ফাটল তৈরি পথ হিসাবে দেখছেন না তো?

বিশেজ্ঞদের মতে, পুতিন হয়তো এমন কিছু বিষয় বৈঠকে উত্থাপিত করতে পারেন, যা ট্রাম্পকে ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে বিরত করবে! পুতিন আলাস্কায় তাঁর সঙ্গে একটি বাণিজ্যিক প্রতিনিধি দল নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকের মতে, ট্রাম্পের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পুতিনের এই পদক্ষেপ হতে পারে। পুতিন ট্রাম্পের কাছে একটি সম্ভাব্য বিনিয়োগ চুক্তির প্রস্তাব দিতে পারেন। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ বা বিরল মৃত্তিকা সম্পর্কিত কোনও চুক্তির কথা বলতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট। শুধু তা-ই নয়, রাশিয়া এবং আমেরিকার মধ্যে হওয়া দ্বিপাক্ষিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবও দিতে পারেন তিনি।

শুক্রবারের বৈঠকের আগে জ়েলেনস্কি এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে একপ্রস্থ কথা সেরে রেখেছেন ট্রাম্প। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জানান, আলাস্কা-বৈঠক নিয়ে বন্ধুরাষ্ট্রগুলি এককাট্টা রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই ইতিবাচক ফলাফলের আশাবাদী। তবে জ়েলেনস্কি চান, পুতিনের সঙ্গে এক টেবিলে বসে রফাসূত্রে পৌঁছতে। সব মিলিয়ে, আলাস্কার বৈঠক নিয়ে সব পক্ষই নিজেদের অবস্থান থেকে কৌতূহলী।

Donald Trump Vladimir Putin Alaska
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy