হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে করমর্দনরত নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
প্রাচীন আর বৃহত্তম গণতন্ত্রের সাক্ষাতে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে ভারত আর আমেরিকার গণমাধ্যম চুলচেরা বিশ্নেষণে ব্যস্ত। তবে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক লাভক্ষতির বাইরেও কিছু পেয়েছে বিশ্ব, এমনটাই মনে করছেন এক দল। এত দিনে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘ইয়াংকশেক’এর উপযুক্ত শরীরী ভাষা পাওয়া গিয়েছে। মোদীর ‘বিয়ার হাগ’। মহাআলিঙ্গন। হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে যৌথ বিবৃতি পর্বে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সেই আলিঙ্গনে ট্রাম্প কিঞ্চিত বিব্রত হলেই বা কী!
মোদী-আলিঙ্গন ভারতীয় গণমাধ্যমে যতটা চর্চার বিষয়, ট্রাম্পের হ্যাঁচকা টানের করমর্দনও ততটাই মুখরোচক আলোচনা আমেরিকার গণমাধ্যমে। খবরের কাগজ আর টেলিভিশন চ্যানেলের দৌলতে ট্রাম্পের করমর্দন এখানে ‘ইয়াংকশেক’ নামে পরিচিত। লাইফস্টাইল ম্যাগাজিনগুলো মুখিয়ে থাকে নেতানেত্রীর পোশাক, চুলের স্টাইল, শরীরী ভাষার প্রয়োগ এবম্বিধ নানা খুঁটিনাটির পরিবর্তন সংক্রান্ত নানা চর্চায়। উদ্দেশ্য, রাজনৈতিক বাক্যালাপের সমান্তরাল বা বিকল্প ভাষ্য তৈরি করা। অবশ্য, অনেকাংশেই তা হালকা চালে লেখা এবং মনোরঞ্জনের উপাদান।
মোদীর আলিঙ্গনে হতবাক করমর্দন পটু ট্রাম্প। ফাইল চিত্র।
শরীরী-ভাষা-বিশেষজ্ঞেরা দেখেছেন, করমর্দন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয়ে ওঠে তাঁর ক্ষমতা আর প্রভাব প্রদর্শনের শরীরী মাধ্যম। অন্যের উপর আধিপত্য বিস্তারের শরীরী ভাষা। ট্রাম্পের ‘ইয়াংকশেক’ কাটাছেঁড়া করে দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে তাঁর সম্ভাষণের দৃশ্যত ফারাক থাকলেও হোয়াইট হাউসের বর্তমান সর্বেসর্বার করমর্দনের কতগুলো বিশেষ লক্ষণ রয়েছে। প্রথমেই তাঁর মার্কিন পাঞ্জায় বন্দি করে ফেলেন সম্ভাষণকারীকে। এক দিকে চার আঙুল আর অন্য দিকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের সেই কঠোর নিগড়কে অনেকে তুলনা করেন, বল্ড ইগলের প্রেইরি কুকুর ধরার সঙ্গে।
আরও পড়ুন: বিদেশি নাগরিকত্ব সবচেয়ে বেশি চান ভারতীয়রাই, বলছে সমীক্ষা
উল্টো দিকের মানুষটির প্রাথমিক বিহ্বলতা কাটার আগেই ট্রাম্প তাঁকে হ্যাঁচকা টান মারেন নিজের দিকে। অবচেতনে নিজের শক্তি সম্বন্ধে সচেতন করে দেওয়ার ইচ্ছারই প্রতিফলন কি না, তা নিয়েও কম নাড়াচাড়া হয়নি। তবে এটাই তাঁর বিশেষত্ব। সেই ‘ইয়াংক’ বা হ্যাঁচকা টান থেকেই ট্রাম্পের করমর্দনের অমন নাম।
ফরাসী প্রেসিডেন্ট মাকরঁ-র সঙ্গে করমর্দনের প্রথম দফায় এঁটে উঠতে পারেননি ট্রাম্প। ফাইল চিত্র।
এই ‘ইয়াংকশেক’এর মাধ্যমে কখনও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে কিংবা চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্কের রসায়নটি গড়ে নিয়েছেন তিনি। শিনজো আবে-র সঙ্গে তিনি নাকি ১৯ বার করমর্দন করেছেন সফরের সামান্য পরিসরে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র সঙ্গে করমর্দনরত পদচারণা নিয়েও কিছু কম শব্দ খরচ করেনি খবরের কাগজগুলো। শুধু বিদেশি রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গেই নয়। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স কিংবা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিল গোরসাচের সঙ্গে তাঁর করমর্দনের দৃশ্যেও সেই হ্যাঁচকা টান দেখা গিয়েছে।
তবে ফরাসী প্রেসিডেন্ট মাকরঁ-র সঙ্গে করমর্দনের প্রথম দফায় এঁটে উঠতে পারেননি ট্রাম্প। তরুণ ফরাসী প্রেসিডেন্টের পাঞ্জার ফাঁসে ট্রাম্পের হাতটিকেও মুক্তির জন্য হাঁসফাঁস করতে দেখা গিয়েছে। এ নিয়ে গবেষণাও হয়েছে বিস্তর। তবে নেটো সম্মেলনে পুরনো ‘হার’ নাকি পুষিয়ে নিয়েছেন ট্রাম্প। নেটবন্দি সেই দৃশ্য দেখলে মনে হতে পারে দুই শীর্ষনেতা বুঝি হাত টানাটানির খেলায় মেতেছেন।
২০১৬তে হায়দরাবাদ হাউসে প্রিন্স উইলিয়ামের সঙ্গে করমর্দন করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
অবশ্য বজ্রমুষ্ঠির বদনাম কিঞ্চিত হলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীরও রয়েছে। স্মর্তব্য, প্রিন্স উইলিয়ামের সঙ্গে তাঁর করমর্দনের দৃশ্যটি। গতবছর এপ্রিলে গণমাধ্যমের সামনে রাজপুত্র উইলিয়ামের সঙ্গে করমর্দনের পর দেখা যায় মোদীর পাঁচ আঙুলের চাপে সাদা হয়ে গিয়েছে ওই অংশটি। দেখে কারও কারও মনে হয়েছিল, দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনের পুরো চাপটাই তিনি উশুল করে নিলেন বোধহয়।
যদিও মোদী আরও বিখ্যাত ছাপ্পান্ন ইঞ্চির আলিঙ্গন বা তাঁর ‘বিয়ার হাগে’র জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy