Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বই নয়, কালাশনিকভ হাতে ইয়েমেনি খুদে

ছোট্ট শরীরটা ঝুঁকে পড়েছে কালাশনিকভের ভারে। তবু কোনও মতে জিনিসটাকে কাঁধে করে পুরনো সানা শহরের চেক পয়েন্টে দাঁড়িয়ে রয়েছে সাত বছরের খুদে। কোন গাড়ি ঢুকছে-বেরোচ্ছে, স্থির দৃষ্টি সে দিকে।

সংবাদ সংস্থা
সানা শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

ছোট্ট শরীরটা ঝুঁকে পড়েছে কালাশনিকভের ভারে। তবু কোনও মতে জিনিসটাকে কাঁধে করে পুরনো সানা শহরের চেক পয়েন্টে দাঁড়িয়ে রয়েছে সাত বছরের খুদে। কোন গাড়ি ঢুকছে-বেরোচ্ছে, স্থির দৃষ্টি সে দিকে।

হাসান। আর পাঁচটা বাচ্চার মতো সে-ও ক’দিন আগে পর্যন্ত স্কুলে যেত। ফুটবল খেলত। কিন্তু এখন সেই সবের পাঠ চুকেছে। ‘‘স্কুল তো বন্ধ...’’, বলতে বলতেই একটা সাদা টয়োটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নজর বুলিয়ে নিল সে। দেশের প্রেসিডেন্ট আবেদাব্বো মনসুর হাদি ইয়েমেন ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই সানা শহরটা শিয়া হুথি বিদ্রোহীদের দখলে। আর তারাই ছোটদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ধরিয়েছে। দৃপ্ত কণ্ঠে হাসান বলল, ‘‘শত্রুদের হাত থেকে দেশটাকে রক্ষা করতে হবে যে...।’’

শত্রু কারা? শিয়া হুথিদের বিদ্রোহে দেশছাড়া প্রেসিডেন্টকে সমর্থন জানিয়ে ইয়েমেনে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে সৌদি আরব। নিশানা করছে হুথিদের, কিন্তু সাধারণ মানুষই প্রাণ হারাচ্ছে বেশি। হাসানের শত্রু এরাই। পরিস্থিতিটা এ রকম যে, শুধু গত কয়েক সপ্তাহে সাতশোরও বেশি ইয়েমেনি নিহত হয়েছেন সৌদি আরবের রকেট-হানায়। যার মধ্যে একটা বড় অংশ শিশু। আহত হয়েছে হাজার খানেক। রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, যুদ্ধ থেকে বাঁচতে দেশ ছেড়ে পড়শি দেশগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে অন্তত দেড় লক্ষ মানুষ। এ দিকে শোনা যাচ্ছে, তলে তলে বিদ্রোহীদের সমর্থন করছে শিয়া-প্রধান দেশ ইরাক। এর মধ্যে পরিস্থিতির ফায়দা তুলছে আল কায়দা। দেশের রাজনৈতিক অবস্থানে যে শূন্য স্থান তৈরি হয়েছে, সেখানে জাঁকিয়ে বসতে চাইছে তারা। এ-ও শোনা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই আল কায়দার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

হাসানদের ওই পরিণতির জন্য দেশটার এই ক্ষতবিক্ষত অবস্থাই দায়ী, বললেন জামাল আল শামি। তিনি স্থানীয় ডেমোক্র্যাসি স্কুলের চেয়ারম্যান। — ‘‘ছোটদের বন্দুক ধরাচ্ছে হুথিরাই। তা ছাড়া আল কায়দা তো রয়েইছে। আর এটা সব চেয়ে সহজ হয়েছে স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায়।’’

হাসানের মতো আরও লক্ষাধিক শিশু রয়েছে। পেন-পেন্সিল ছেড়ে যারা বিদ্রোহীদের নির্দেশে হাতে তুলে নিয়েছে কালাশনিকভ। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বহু বার অনুরোধ জানানো হয়েছিল হুথিদের, ছোটদের অন্তত এই যুদ্ধ থেকে রেহাই দেওয়া হোক। কিন্তু জঙ্গি-প্রধান আব্দুল মালিক আল-হুতি সগর্বে জানিয়েছেন, ‘‘এ লড়াই শত্রুদের বিরুদ্ধে। আমি লড়ছি, আমার পরিবারও লড়ছে।’’

হাসান যেমন বলল, ‘‘বাবাই আমাকে কালাশনিকভ চালানো শিখিয়েছে।’’ আর এক খুদে, ১১ বছরের আসিফের কথায়, ‘‘স্কুলে যেতে ভাল লাগে না। বরং লড়াই করতেই ভাল লাগে। বাবা-মা আমার জন্য গর্বিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE