বর্ষবরণের আনন্দের রেশটা প্রতি বছরই থাকত আরও বাড়তি দু’টো দিন। বছরের গোড়াতেই যে জন্মদিন মেইজি থেজাকুসুমা-র। এই ৩ জানুয়ারি ৪৫-এ পা দেওয়ার কথা ছিল সুরাবায়ার ওই বাসিন্দার। তাই ছুটি কাটাবেন বলে মা, স্বামী, তিন সন্তান ও ভাবী জামাইকে সঙ্গে নিয়ে গত ২৮ ডিসেম্বর এয়ার এশিয়ার কিউজেড-৮৫০১-এ চেপে পাড়ি দিয়েছিলেন সিঙ্গাপুর।
নতুন জায়গায় জন্মদিন কেমন করে কাটাবেন, বেড়াতে যাওয়ার আগে মেইজিকে প্রশ্ন করেন অনেকে। হাসতে হাসতে জবাব দিয়েছিলেন, ওই দিনটা ভাবছি একা একাই কাটাব সমুদ্রে। তাঁর সেই কথা যে এই ভাবে ফলে যাবে, এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না আত্মীয়রা! সাগরের বুকে প্রমোদ তরীর আনন্দ সফর নয়, জন্মদিনের আগেই যে জাভা সাগরের তলায় চিরকালের মতো ঘুমিয়ে পড়েছেন মেইজি থেজাকুসুমা। নিয়তির পরিহাস বোধ হয় একেই বলে। ক’দিন আগে উদ্ধারকারীরা খুঁজে পেয়েছেন তাঁর দেহ। পাওয়া গিয়েছে ছোট মেয়ে স্টিভি-র লাশও। তবে ওই পরিবারের বাকি সাত জনের সন্ধান মেলেনি দুর্ঘটনার দশ দিন পরও। মেইজির এক ভাইপোর কথায়, “দেহগুলো চেনার মতো অবস্থায় থাকবে কিনা জানি না, এই ক’দিন শুধু একটাই প্রার্থনা করেছি সকলের দেহই যেন পাওয়া যায়। তাঁদের শেষ মুহূর্তটা যে কী ভাবে কেটেছিল, কেউ জানি না আমরা। শেষ কাজটা যেন অন্তত ভাল ভাবে করতে পারি এইটুকুই শুধু চাওয়া।”
এ দিকে এই ক’দিনের তাণ্ডবের পর ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে সমুদ্র। উদ্ধারকারী দলের প্রধান বামবাং সোয়েলিস্টিও জানিয়েছেন, আবহাওয়ার সামান্য উন্নতি হওয়ায় মঙ্গলবার সমুদ্রের তলায় নামতে পেরেছিলেন কয়েক জন ডুবুরি। তবে খোঁজ মেলেনি বিমানের ব্ল্যাক বক্সের। এ দিন জাপান ও মালয়েশিয়ার দু’টো জাহাজ আরও দুই যাত্রীর দেহ উদ্ধার করেছে। সব মিলিয়ে ১৬২ জন সওয়ারির মধ্যে এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে মোট ৩৯টি মৃতদেহ।
আজ একটি রুশ জাহাজ লাল, কমলা ও সাদা রঙের বড় একটা টুকরো খুঁজে পেয়েছে। সেটা সম্ভবত এয়ারবাস ৩২০-২০০-রই কোনও অংশ। ইন্দোনেশিয়ার সংবাদমাধ্যম আবার জানিয়েছে, মিলেছে কালো চৌকো একটা জিনিসও। গত কাল তদন্তকারী একটি জাহাজ দলের সদস্যরা দাবি করেছিলেন, বিমানের লেজের দিকের একটা বড় টুকরো দেখতে পেয়েছেন তাঁরা। বিমানের পিছনের ওই অংশেই থাকে ব্ল্যাক বক্স। সত্যি সত্যিই তা পাওয়া গেলে দুর্ঘটনার তদন্তের কাজ এগোত অনেকটা। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পরও এ নিয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছুই জানাতে পারেনি ইন্দোনেশিয়া।
সোয়েলিস্টিও জানান, দু’টি লক্ষ্য নিয়ে তল্লাশি চলছে। যাত্রীদের দেহ ও মালপত্র বা বিমানের টুকরো সংগ্রহ। তাড়াতাড়ি ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা। ব্ল্যাক বক্সের ব্যাটারির মেয়াদ বড়জোর ২০ দিনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy