Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ইরাকে চার শিশুর মাথা কাটল জঙ্গিরা

ধর্মের মানে বুঝত না বাচ্চাগুলো। তবে বাবা-মা জঙ্গিদের জারি করা ফতোয়ার কাছে মাথা নোয়াতে রাজি না হওয়ার মূল্য চোকাতে হল সেই খুদেদেরই। ধর্মান্তরণে রাজি না হওয়ায় বাবা-মা-পরিবার এবং তামাম গ্রামবাসীদের সামনেই ইরাকের চার শিশুর মুণ্ডচ্ছেদ করল জঙ্গিরা। রাজধানী বাগদাদের বাসিন্দা কট্টরপন্থী গির্জার এক ধর্মগুরু আজ এ কথা জানিয়েছেন।

সংবাদ সংস্থা
বাগদাদ ও বেইরুট শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১০
Share: Save:

ধর্মের মানে বুঝত না বাচ্চাগুলো। তবে বাবা-মা জঙ্গিদের জারি করা ফতোয়ার কাছে মাথা নোয়াতে রাজি না হওয়ার মূল্য চোকাতে হল সেই খুদেদেরই। ধর্মান্তরণে রাজি না হওয়ায় বাবা-মা-পরিবার এবং তামাম গ্রামবাসীদের সামনেই ইরাকের চার শিশুর মুণ্ডচ্ছেদ করল জঙ্গিরা।

রাজধানী বাগদাদের বাসিন্দা কট্টরপন্থী গির্জার এক ধর্মগুরু আজ এ কথা জানিয়েছেন। ক্যানন অ্যান্ড্রু হোয়াইট নামে ওই ধর্মগুরু তথা ‘ভিকার অব বাগদাদ’ জানান, বাগদাদের খুব কাছের একটি খ্রিস্টান অধ্যুষিত এলাকা দখল করে আইএসআইএস (ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া) জঙ্গিরা ধর্মান্তরণের ফতোয়া জারি করে। অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে যায়, অনেকে মাথা নোয়ায়। তবে অনেকে রুখেও দাঁড়ায় আর তাতেই হামলা চালায় জঙ্গিরা। ক্যাননের কথায়, “এলাকায় এসে প্রচুর মানুষকে খুন করেছে জঙ্গিরা। যাঁরা ধর্মান্তরিত হতে নারাজ, তাঁদের বাচ্চাদের কুচি কুচি করে কেটেছে। কারও মাথা কেটে নিয়েছে, কারও শরীর দু’ভাগ করে দিয়ে গিয়েছে।” ওই ধর্মগুরু আরও জানিয়েছেন, আগেও একাধিক বার গ্রামে এসে ধর্মান্তরিত না হলে সন্তানদের হারানোর কথা বলে শাসিয়ে গিয়েছিল জঙ্গিরা। মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধর্মান্তরণে রাজিও করিয়েছিল জঙ্গিরা। তবে ক্যানন জানান, যে বাচ্চাদের আজ জঙ্গিরা নৃশংস ভাবে খুন করেছে, তারা সকলে বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়েও ঈশ্বর-ত্যাগে বিশ্বাস হারায়নি। তিনি আরও জানান বছর পনেরোর ওই কচিকাঁচারা ধর্ম বুঝত না। তবে ঈশ্বরে বিশ্বাস করতো। বন্দুকধারী জঙ্গিরা ওদের ঈশ্বর কেড়ে নিয়ে এসেছে ভেবে ওরা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আর তার পরেই তাদের মাথা কেটে ‘শাস্তি’ দেয় জঙ্গিরা।

ক্যানন জানান, তিনি বর্তমানে ইজরায়েলে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে তাঁর অনেক অনুগামী এবং গির্জার কর্মীরা এখনও ওই এলাকায় থেকে কোণঠাসা মানুষদের জন্য কাজ করছেন। খুনের হুমকি যে জঙ্গিরা আগেই দিয়েছিল সে কথা জানিয়ে ধর্মগুরু বলেন, “আমার কাছে ফোন আসে। ওখানকার মানুষ ভয় পেয়েছে। ওরা বাধ্য হয়েই অনেকে ধর্ম পরিবর্তনে স্বীকৃতি দেয়।” ক্যানন এই ঘটনার কথা জানানোর পাশাপাশি এ-ও জানিয়েছেন, দেশের বেশিরভাগ মুসলিম বন্ধুই তাঁদের মতো মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জঙ্গি দৌরাত্ম্যে সায় নেই কারও।

সম্প্রতি ইউনিসেফ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে জানিয়েছে, চলতি এই বছরে নজিরবিহীন ভাবে সন্ত্রাসের সাক্ষী থেকেছে শিশুরা। গাজা থেকে দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া-ইরাক থেকে ইয়েমেন অন্ধকার দেখেছে বাচ্চারাই। কোথাও পড়শি দেশের হামলায় মর্গ উপচে পড়ায় আইসক্রিমের ঠান্ডা গাড়িতে শিশুদের মৃতদেহ রাখা হয়েছে, কোথাও ক্ষেপণাস্ত্রে গুঁড়ো হওয়া স্কুলবাড়িতেই লেখাপড়া শেখার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে বাচ্চারা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এ বছরই সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করে শান্তির জন্য নোবেল পেয়েছে পাকিস্তানের কিশোরী মালালা ইউসুফজাই। তবে আঁধার এখনও কাটেনি। এখনও ধর্মের মানে বুঝতে শেখার আগেই ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদের নামে বলি হতে হল ইরাকের নাম না জানা এই শিশুদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

iraq child beheaded canon andrew white isis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE