Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ বার প্রথম সরস্বতী পুজো ঢাকার সংসদে

রীতিমতো ম্যারাপ বেঁধে, প্রতিমা এনে ধুমধাম করে সরস্বতী পুজো হবে এ বার বাংলাদেশের সংসদে। বাংলাদেশে এই প্রথম কোনও পুজোর অনুষ্ঠান হবে খাস সংসদে। সাজসাজ রব পড়ে গিয়েছে। চাঁদা তোলা হচ্ছে সংসদের কর্মীদের কাছ থেকে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও তোড়জোড় চলছে। সে জন্য সংসদের গেট খুলে দেওয়া হবে সাধারণের জন্য।

নিজস্ব সংবাদাদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৪
Share: Save:

রীতিমতো ম্যারাপ বেঁধে, প্রতিমা এনে ধুমধাম করে সরস্বতী পুজো হবে এ বার বাংলাদেশের সংসদে। বাংলাদেশে এই প্রথম কোনও পুজোর অনুষ্ঠান হবে খাস সংসদে। সাজসাজ রব পড়ে গিয়েছে। চাঁদা তোলা হচ্ছে সংসদের কর্মীদের কাছ থেকে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও তোড়জোড় চলছে। সে জন্য সংসদের গেট খুলে দেওয়া হবে সাধারণের জন্য।

বাংলাদেশের সংবিধানে সংশোধন এনে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ ফিরিয়ে এনেছে শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ-জোট সরকার। সম্প্রতি সুরেন্দ্রকুমার সিন্হা সে দেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হয়েছেন। বিরোধী বিএনপি-জামাতে ইসলামি প্রভাবিত আইনজীবীদের সংগঠনও তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কিন্তু তার মধ্যেও বিএনপি-জামাত জোটের অবরোধ-হরতালের সুযোগ নিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কিছু ঘটনা যে বাংলাদেশে ঘটছে না তা নয়। দিন দুয়েক আগেই বরিশালে কিছু দুর্বৃত্ত একটি কুমোরটুলিতে ঢুকে প্রায় ৭০টি নির্মীয়মাণ সরস্বতী প্রতিমা ভাঙচুর করেছে। তবে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈতিক মহল তার সমালোচনায় সরব হয়েছে। প্রশাসনও সক্রিয়। তার মধ্যেই ১৯ তারিখে সংসদে অধিবেশন শুরু হচ্ছে। কিন্তু অধিবেশন চালু থাকাকালীনই সরস্বতী পুজো করার অনুমতি দিয়ে নজির গড়লেন স্পিকার।

প্রস্তাবটি দেন বরিশালের সাংসদ পঙ্কজ নাথ। সেই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী বিবেচনার জন্য পাঠিয়ে দেন স্পিকার শিরিন শরমিন চৌধুরীর কাছে। তিনি এই প্রস্তাবে অনুমতি দেন। পঙ্কজবাবু বলেন, “সংসদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ইস্টার সানডে-ও পালিত হয়। কিন্তু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কোনও পুজো করা হয় না। তাই আমি ওই প্রস্তাবটি দিই।” তাঁর কথায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতার আদর্শ নিয়ে চলেন। সব ধর্মের প্রতি সমান মর্যাদা দেওয়ার কথা বলেন। তাই সংসদে সরস্বতী পুজোর প্রস্তাবে তিনি সঙ্গে সঙ্গে সায় দিয়েছেন।

সরকারের সব শরিক দলও এই প্রস্তাবে রাজি। নির্বাচন বয়কট করে সরকারকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দেওয়া বিএনপি অবশ্য এই প্রস্তাব নিয়ে রা কাড়তে নারাজ। তবে বিরোধী দল হুসেইন মহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি জানিয়েছে, তারা কোনও আপত্তি দেখছে না। দলের মুখপাত্র রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “সব ধর্মের সমানাধিকার থাকাটাই কাম্য।” আওয়ামি ও বিএনপি জোটের বাইরে নতুন জোট গঠনে উদ্যোগী ন্যাশনাল পিপল্স পার্টির চেয়ারম্যান শেখ সাকায়াত হোসেন নিলুও সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেছেন, “মুসলিম ও খ্রিস্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান সংসদে হতে পারলে সরস্বতী পুজো হতেই পারে। এত দিন কেন হয়নি সেটাই প্রশ্ন।”

স্পিকার অনুমতি দেওয়ার পরেই সংসদের অতিরিক্ত সচিব প্রণব চক্রবর্তীকে আহ্বায়ক করে পুজো কমিটি গড়া হয়েছে। সংসদের হিন্দু কর্মকর্তাদের জন্য ১৫০০ টাকা ও সাধারণ কর্মীদের জন্য ৫০০ টাকা করে চাঁদা ধার্য হয়েছে। পুজো উপলক্ষে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজনও হচ্ছে। চলছে শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগের পর্ব। শুধু নিরাপত্তা কর্মীরাই একটু উদ্বেগে রয়েছেন। একে বিএনপি-জামাতের অবরোধে নাশকতা চলছে দেদার। তার ওপর সে সময়ে সংসদে অধিবেশনও চলবে। সংসদের ডেপুটি সার্জেন্ট সাদরুল আহমেদের কপালে তাই ভাঁজ। তবে নিরাপত্তায় কোনও খামতি হবে না বলেই তাঁর আশ্বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saraswati puja dhaka parliament bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE