Advertisement
E-Paper

চুরমার সংস্কৃতি, বই পুড়িয়ে এ বার হাতুড়ির ঘা জাদুঘরে

গ্রন্থাগারের পর এ বার হামলা মসুলের জাদুঘরে। একের পর এক বিস্ফোরণে ১০ হাজারেরও বেশি বই ও পুড়িয়ে গত সপ্তাহেই শহরের সরকারি গ্রন্থাগারে তাণ্ডব চালিয়েছিল ইসলামিক স্টেট (আইএস)। সেই পোড়া গন্ধের মধ্যেই এ বার জঙ্গিদের হাতুড়ির আঘাতে ধুলোয় মিশল কয়েক হাজার বছরের পুরনো বেশ কিছু স্থাপত্য-মূর্তি ও প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন।

ইরবিল (ইরাক)

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:১৯

গ্রন্থাগারের পর এ বার হামলা মসুলের জাদুঘরে। একের পর এক বিস্ফোরণে ১০ হাজারেরও বেশি বই ও পুড়িয়ে গত সপ্তাহেই শহরের সরকারি গ্রন্থাগারে তাণ্ডব চালিয়েছিল ইসলামিক স্টেট (আইএস)। সেই পোড়া গন্ধের মধ্যেই এ বার জঙ্গিদের হাতুড়ির আঘাতে ধুলোয় মিশল কয়েক হাজার বছরের পুরনো বেশ কিছু স্থাপত্য-মূর্তি ও প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন।

নিনেভে জাদুঘরের ভয়াবহ এই ধ্বংসলীলার ভিডিও আজই প্রকাশ করেছে জঙ্গিরা। সমাজ থেকে পৌত্তলিকতা মুছে ফেলতেই যে এই হামলা, পাঁচ মিনিটের এই ভিডিও ক্লিপে সেই বার্তাও দিয়েছে জঙ্গিরা। বিশাল আকারের হাতুড়ির সঙ্গে বেশ কিছু পাওয়ার-ড্রিলার নিয়েও জাদুঘরের ভিতরে ঢোকে জঙ্গিরা। তার পর ফুটেজ জুড়ে শুধুই এলোপাথাড়ি তাণ্ডব। সেই সঙ্গেই পরনে কালো পোশাক, দাড়িওয়ালা এক জঙ্গিকে বলতে শোনা গিয়েছে, “এই সব মূর্তি, স্থাপত্য আমাদের ধর্মের পরিপন্থী। আল্লার নির্দেশেই তাই আজ আমরা এ সব ভাঙতে এসেছি। হতে পারে এ সবের বাজার-মূল্য কয়েক লক্ষ কোটি ডলার, কিন্তু আমাদের কাছে নেতাহই মূল্যহীন।”

অবশ্য জঙ্গিদের হাতে ধ্বংস হওয়া শতাধিক স্থাপত্য ও মূর্তির সবই আসল কিনা, তা ফুটেজ থেকে স্পষ্ট নয়। তবু জাদুঘরে এই হামলার নিন্দা করে তীব্র প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। জঙ্গি-তাণ্ডবের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার হয়েছেন বিশ্বের একটা বড় অংশ। ইউনেস্কোর সংস্কৃতি বিষয়ক অধিকর্তা ইরিনা বকোভা জানান, “এই হামলা সাংস্কৃতিক ট্র্যাজেডির চেয়েও বেশি কিছু। জঙ্গি হামলায় দেশ জুড়ে বাড়ছে সঙ্কট, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে গোটা একটা দেশ।”

ধর্মের জিগির তুলে দেশের শতাব্দীপ্রাচীন স্থাপত্য কিংবা প্রত্নসামগ্রীর উপর এর আগেও কব্জা করেছে জঙ্গিরা। সে সব কালোবাজারে বিক্রি করে মুনাফা কামানোর অভিযোগও উঠেছে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। তবে, সরাসরি জাদুঘরে ঢুকে হামলা এ বারই প্রথম। এই প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে দেশের পর্যটন মন্ত্রকের জাদুঘর বিষয়ক দফতরের অধিকর্তা কোয়াইস হুসেন রশিদ বলেন, “দেশ জুড়ে যে সন্ত্রাস ছড়িয়েছে আইএস, তাতে কিছুই আর অস্বাভাবিক নয়।” জাদুঘরে অন্তত ১৭৩টি আসল মূর্তি ও অন্যান্য স্থাপত্য কীর্তি ছিল বলে দাবি তাঁর। অনুমান, জঙ্গি-তাণ্ডবে ধ্বংস হয়েছে প্রাচীন অটোমান সাম্রাজ্যের বেশ কিছু দুর্মূল্য মূর্তিও। ধুলোয় মিশেছে সপ্তম ও অষ্টম খ্রিস্টপূর্বাব্দের কিছু ঐতিহাসিক নির্দশন। এই মুহূর্তে শহরে প্রায় ১৭০০টি ঐতিহাসিক স্থান আছে বলে জানান রশিদ। পরবর্তী জঙ্গি হামলার আশঙ্কা রয়েছে তার সব ক’টিতেই।

স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, এই মুহূর্তে ইরাক ও সিরিয়ার প্রায় এক তৃতীয়াংশ জঙ্গিদের কবলে। ক্ষমতা যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে আগ্রাসন। মনে করা হচ্ছে, সেই ক্ষমতার জানান দিতেই শহরের সরকারি গ্রন্থাগারে রবিবার হামলা চালায় জঙ্গিরা। পুড়ে ছাই হয় ১০ হাজারেরও বেশি বই। লোপাট হয় শতাব্দীপ্রাচীন ৭০০টি দুর্লভ পুঁথির অস্তিত্বও। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিস্তারিত জানা না গেলেও, গ্রন্থাগারের নির্দেশক গানিম আল-তানের দাবি গত একশো বছরের ইরাকি সংবাদপত্রের পুরো সংগ্রহটাই শেষ। পুড়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক মানচিত্র। ঘটনার পর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও, হদিস মেলেনি অটোমান সাম্রাজ্য থেকে পাওয়া শতাধিক মূল্যবান বইয়েরও।

সেই হামলার প্রতিক্রিয়ায় মসুলেই বেড়ে ওঠা তরুণ রায়ান আল-হাদিদি তাঁর ব্লগে লেখেন, “প্রায় ন’শো বছর আগের একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। আরব দেশের বিখ্যাত দার্শনিক ইবনে রুশদের চোখের সামনেই তাঁর সমস্ত বই এনে পোড়ানো হয়েছিল। রুশদ নির্বিকারই ছিলেন। কিন্তু চোখের জল সামলাতে পারেননি তাঁর এক শিষ্য। শান্ত ভাবে গুরু তাঁকে একটাই পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘বই পুড়ে গেলেও, আদর্শ ডানা মেলবেই।’ আজ আমারও কান্না পাচ্ছে। শুধু বই পুড়েছে বলে নয়, নিজেদের অসহায় অবস্থার কথা ভেবেই আরও বেশি কান্না পাচ্ছে।”

গ্রন্থাগারের পর এ বার জাদুঘরের হামলায় জঙ্গিদের সামনে দেশের নাগরিকদের সেই অসহায়তাই আরও প্রকট হল বলে মত মসুলের একাংশের। প্রশাসনের অবশ্য দাবি, জঙ্গিদের পাল্টা জবাব দেওয়া জারি রেখেছেন তাঁরা।

is vandalism
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy