হিংসার খণ্ডচিত্র। সোমবার ঢাকায় এএফপি-র ছবি।
দশম জাতীয় নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনটিতে লাগামছাড়া হিংসায় জনজীবন কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেল বাংলাদেশের। রাজধানী ঢাকা-সহ দেশের সর্বত্র শাসক আওয়ামি লিগ ও বিরোধী বিএনপি-জামাতে ইসলামির কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ মোকাবিলায় পুলিশকে গুলি-লাঠি-কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে হয়েছে। রাজশাহি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিন জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন দেড়শোর বেশি। ভাঙচুর, আগুন লাগানো ও বোমা ছোড়ার ঘটনায় যুক্ত থাকার দায়ে অন্তত পাঁচশো জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিএনপি-জামাত জোটের নেত্রী খালেদা জিয়া লাগাতার অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করায় এই বিস্ফোরক অবস্থা আরও দু-এক দিন চলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই এ দিন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় বিএনপি-জামাত জোটকে হিংসা বন্ধ করে পরের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য তৈরি হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, গত বছর এই দিনের নির্বাচনে অংশ না নেওয়াটা যে ভুল হয়েছিল, বিরোধীরা তা বুঝুন। অসংসদীয় পথে ক্ষমতা দখলের চক্রান্ত ছেড়ে ভোটে লড়ার জন্য প্রস্তুত হোন। সেই ভোটের জন্য অপেক্ষা করুন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-র বয়কটের মধ্যেও সফল ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পেরে তাঁর সরকার বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিজয় পতাকা উড়িয়েছেন। বেআইনি আন্দোলনের মাধ্যমে সেই পতাকা আর টেনে নামানো যাবে না। মানুষই তা আটকাবেন।
বিএনপি জোটের নেত্রী খালেদা জিয়াকে শনিবার রাত থেকেই তাঁর গুলশনের দফতরে কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছিল পুলিশ। সেই অবরোধ ভেঙে আজ দুপুরে দলের বিক্ষোভ সভায় যোগ দেবেন বলে জানিয়েছিলেন খালেদা। কিন্তু তার আগেই ওই কার্যালয়ের বাইরের গেটে তালা লাগিয়ে দেয় পুলিশ। পুলিশকর্মীরা তিনটি স্তরে দাঁড়িয়ে পড়েন সেই গেটের সামনে। তার পরেই খালেদা ঘোষণা করেন সরকার ইস্তফা না দেওয়া পর্যন্ত দেশজুড়ে অবরোধ চলবে।
রবিবার বিকেল থেকে রাজধানী ঢাকায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধ করে পুলিশ। কিন্তু, এ দিন সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় আওয়ামি লিগের নেতা-কর্মীরা সভা, সমাবেশ, মিছিল সবই করেছেন। তবে কি নিষেধাজ্ঞা শুধু বিরোধীদের জন্য? মন্ত্রী জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা সকলের জন্যই। ৫ জানুয়ারি উপলক্ষে আগে থেকেই দলের কিছু পরিকল্পনা ছিল। সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ যে করা হয়েছে, সে খবর হয়তো সকলের কাছে পৌঁছয়নি বলে তাঁর দাবি।
‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে এ দিন নাটোরের তেবাড়িয়ায় মিছিলের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তাদের দুই কর্মীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ তোলে বিএনপি। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার সেখানে ১২ ঘণ্টা হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, এ দিন সকালে বিএনপি কর্মীরা তেবাড়িয়া মোড়ে জড়ো হয়ে মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেই সময় এক দল যুবক মোটরসাইকেলে এসে তাঁদের উপর গুলি চালায়। রাজশাহির কাটাখালিতে আওয়ামি লিগের সভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময়ে স্থানীয় সাংসদ আয়েনুদ্দিন খাঁকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। দু’টি বোমা মঞ্চের সামনে পড়ে বিস্ফোরিত হয়। রাজশাহি শহরে আওয়ামি লিগের একটি দফতরে লুঠপাট চালিয়ে জ্বালিয়েও দেয় বিএনপি কর্মীরা।
পুলিশের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই এ দিন রাজধানীতে মিছিল বের করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিএনপি-জামাতের কর্মীরা। তারা বেশ কিছু বোমাও ফাটায়। ওই সময়েই পল্টন টাওয়ারের সামনে ছাত্র শিবিরের একটি মিছিলের লোকজন পুলিশের একটি মোটরবাইক পুড়িয়ে দেয়।
নারায়ণগঞ্জে আওয়ামি লিগ ও বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষ থামাতে এসে আক্রান্ত হয় পুলিশ। পরিস্থিতি সামলাতে তারা গুলি ছোড়ে। অন্তত ২৫ জন তাতে আহত হয়েছে। সংঘর্ষ হয়েছে ফেনি, চট্টগ্রাম, যশোর, নড়াইল, বরিশাল, রংপুর ও মাগুরাতেও। তবে খালেদা জিয়া অনিদিষ্ট কাল অবরোধের ডাক দিলেও দু’এক দিনের বেশি তা গড়াবে না বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা শুরু হচ্ছে ৯ তারিখে। ৭ তারিখ থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সমবেত হবেন লাখ লাখ মুসলিম তীর্থযাত্রী। বিএনপি সেই সময়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে পারে বলেই ইঙ্গিত মিলেছে। তবে আজকের পরে আরও দু’এক দিন এই অশান্তি চলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy