আরও একটি গণহত্যার ভিডিও। এবং প্রত্যুত্তরে ফের বিমান হামলা। জঙ্গিদের ধর্ম-যুদ্ধের আঘাত এবং তার প্রত্যাঘাতে বোমাবর্ষণ অব্যাহত।
জর্ডনের পরে এ বার নাগরিক হত্যার জবাব দিতে লিবিয়ায় বিমান হামলা চালাতে শুরু করল মিশর। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই প্রথম জঙ্গিনিধনে প্রত্যক্ষ ভাবে হামলা চালানোর কথা প্রকাশ্যে আনল মিশরের সরকার। গত কাল মিশরের সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ২১ জনের মুণ্ডচ্ছেদ করে আইএস জঙ্গিরা। রাতের মধ্যেই সেই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয় আইএস-এর প্রচার শাখা আল-হায়াত। পাঁচ মিনিটের ওই ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে, লিবিয়ার একটি সমুদ্রতীরে নিয়ে গিয়ে ২১ জনের মাথা কাটে জঙ্গিরা। আগের ভিডিওগুলির মতো এখানেও নিহতদের সকলেরই পরনে ছিল কমলা জাম্পস্যুট। আর আপাদমস্তক কালো পোশাকে মুখ ঢাকা ছিল জঙ্গিদের। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ভিডিওটিতে ওসামা বিন লাদেনের কথা উল্লেখ করে স্পষ্ট ইংরেজিতে হুমকি দিয়েছে এক জঙ্গি। তার কথায়, “এই যে সমুদ্রে তোমরা ওসামা বিন লাদেনের দেহ লুকিয়ে রেখেছো, ঈশ্বরের নামে বলছি, ওই জলে তোমাদের রক্ত মেশাব আমরা!”
গত কাল এই ভিডিওটি সামনে আসার পরে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফতেহ্ আল-সিসি তড়িঘড়ি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে জঙ্গিদের এই বর্বরতার নিন্দা করে আগামী সাত দিন জাতীয় শোক পালনের কথা ঘোষণা করেন তিনি। মিশরের সরকারি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, গত বছর ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দু’টি আলাদা ঘটনায় লিবিয়ার সমুদ্রতীরবর্তী একটি শহর থেকে মিশরের ওই নাগরিকদের অপহরণ করে জঙ্গিরা।
এই হত্যাকাণ্ডের জবাব দিতে আজ সকাল থেকে লিবিয়ায় লাগাতার বোমাবর্ষণ শুরু করেছে মিশর। সে দেশের সেনার তরফে জানানো হয়েছে, লিবিয়ার সঙ্গে যৌথ ভাবে বিমান হামলা করছে তারা। লিবিয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আইএস-এর ক্যাম্প, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, অস্ত্রাগারে হামলা চলেছে। লিবিয়ার সেনা জানিয়েছে, আজকের হামলায় অন্তত ৪০-৫০ জন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। আগামী দু’তিন দিনও যে মিশরের সঙ্গে যৌথ ভাবে লিবিয়ার সেনা জঙ্গি ঘাঁটিগুলি চিহ্নিত করে হামলা চালাবে, তা-ও আজ জানিয়ে দিয়েছে প্রশাসন।
সপ্তাহ খানেক আগে জর্ডনের বিমানচালক কাসাসবেকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার পর আইএসের বিরুদ্ধে সিরিয়ায় লাগাতার বিমান হামলা চালায় জর্ডন। তার পর আজ থেকে ময়দানে নেমেছে মিশরও। জঙ্গিবিরোধী লড়াইয়ে আরবের দেশগুলির এমন সরাসরি লড়াইয়ে নামার ঘটনা বিরল।
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য অনুমান করছেন, গত কালের হত্যাকাণ্ডে সরাসরি ভাবে যুক্ত না-ও থাকতে পারে আইএস। বরং ওই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে গদ্দাফি-পরবর্তী লিবিয়ার কোনও জঙ্গিগোষ্ঠী। তবে ভিডিওটি খতিয়ে দেখে তাঁদের অনুমান, পোশাক থেকে হত্যার ধরন সবই হয়েছে আইএস-এর আদলে। আইএস না হলেও, তাদের কোনও শরিক গোষ্ঠীই যে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই কারও। তবে প্রশ্ন উঠছে, ওসামা বিন লাদেনের নাম করে হঠাৎ হুমকি দিচ্ছে কেন আইএস-এর জঙ্গি? তবে কি আল কায়দার সঙ্গে হাত মেলানোর সম্ভাবনা রয়েছে পশ্চিম এশিয়ার এই জঙ্গিগোষ্ঠীর?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy