Advertisement
E-Paper

বিমানের লেজের অংশ কি মিলল, জোরদার জল্পনা

ভেঙে পড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে কী হয়েছিল জানা নেই। কিন্তু আকাশে ওড়ার আগে যাত্রীরা যে খোশমেজাজেই ছিলেন, তার প্রমাণ দিল নিজস্বী। হাসি মুখে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন চার তরুণ-তরুণী। টেক অফের কিছু আগে এমনই এক ছবি তুলে বন্ধুকে পাঠিয়েছিলেন হেন্ড্রা গুনাওয়ান স্যাওয়াল। নতুন বছরের ছুটি কাটাতে সিঙ্গাপুর যাচ্ছিলেন বছর তেইশের হেন্ড্রা। বন্ধুকে পাঠানো তাঁর শেষ ছবির কথা আজ সামনে এল। তাঁর দাদার কথায়, কোথাও যাওয়ার আগে তাঁদের জানাতে ভুলত না হেন্ড্রা।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৪১
উদ্ধার হওয়া আপৎকালীন জানলার অংশ। ছবি: এপি

উদ্ধার হওয়া আপৎকালীন জানলার অংশ। ছবি: এপি

ভেঙে পড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে কী হয়েছিল জানা নেই। কিন্তু আকাশে ওড়ার আগে যাত্রীরা যে খোশমেজাজেই ছিলেন, তার প্রমাণ দিল নিজস্বী। হাসি মুখে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন চার তরুণ-তরুণী। টেক অফের কিছু আগে এমনই এক ছবি তুলে বন্ধুকে পাঠিয়েছিলেন হেন্ড্রা গুনাওয়ান স্যাওয়াল। নতুন বছরের ছুটি কাটাতে সিঙ্গাপুর যাচ্ছিলেন বছর তেইশের হেন্ড্রা। বন্ধুকে পাঠানো তাঁর শেষ ছবির কথা আজ সামনে এল। তাঁর দাদার কথায়, কোথাও যাওয়ার আগে তাঁদের জানাতে ভুলত না হেন্ড্রা। কিন্তু সেই ভাইয়েরই এখন ঠিকানা কোথায়, কিছুই জানেন না তাঁরা। স্মৃতির সম্বল কেবল ছবিটুকুই।

অন্য দিকে জাভা সাগরের গভীরে এয়ারবাস ৩২০-২০০-র লেজের দিকের কিছুটা অংশ সম্ভবত দেখতে পাওয়া গিয়েছে বলে জানাল ইন্দোনেশিয়ার নৌ সেনার একটি জাহাজ। সত্যি সত্যিই তা উদ্ধার হলে দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটবে অনেকটা। কারণ বিমানের ব্ল্যাক বক্স থাকে পিছনের দিকেই।

নজরদারি জাহাজের ক্যাপ্টেন ইয়াইয়ান সোফিয়ান জানিয়েছেন, “ওটা বিমানের লেজের অংশ বলেই আমাদের ধারণা।” সোমবার ওই জাহাজটি সুরাবায়ায় ফিরেছে। গত কাল পর্যন্ত শোনা গিয়েছিল, জলের তলায় পাঁচটি বিশাল টুকরো দেখেছেন উদ্ধারকারীরা। সোফিয়ানরা যে অংশের কথা বলছেন, তা ওই পাঁচটি টুকরোর মধ্যে কোনও একটা কিনা, তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়।

১৫৫ জন যাত্রীর দায়িত্ব নিয়ে আকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন তাঁরা বাবা ইরিয়ান্তো। অভিশপ্ত বিমানের চালক ছিলেন যে তিনিই। তাঁর পরিবারের উপর দিয়ে কম ঝড়-ঝাপটা যায়নি এই ক’দিন। যাত্রীদের অধিকাংশের সঙ্গেই এখনও সাগরের জলেই রয়ে গিয়েছে তাঁর দেহ। অভিশপ্ত আকাশ যাত্রার পিছনে কি চালকের কোনও ভুলও ছিল? নানা মহলে এখনও উঠছে সেই প্রশ্ন। আজ দেশের জাতীয় টিভি চ্যানেলে মুখ খুলেছেন ইরিয়ান্তোর মেয়ে অ্যাঞ্জেলা অ্যাঙ্গি। তাঁর কথায়, “এখনও পুরোটা বিশ্বাস করে উঠতে পারছি না। তবে কোনও চালক কি ইচ্ছে করে যাত্রীদের ক্ষতি করতে পারেন! বাবার দেহও তো আমরা এখনও দেখতেই পাইনি।”

বিমান দুর্ঘটনার পর পেরিয়ে গিয়েছে ন’দিন। কিন্তু এখনও যাত্রীদের অধিকাংশেরই দেহ জলের তলায় থাকায় জোরদার করা হয়েছে তল্লাশি অভিযান। উদ্ধারকাজ যেখানে চলছে, বাড়ানো হয়েছে তার পরিধি। নজরদারি বিমান ও জাহাজের পাশাপাশি গভীর জলে তল্লাশিতে দক্ষ এমন ৮০ জন ডুবুরিকে নামানো হয়েছে। সোমবার জাভা সাগর থেকে মিলেছে আরও তিনটি লাশ। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া দেহের সংখ্যা ৩৭।


হেন্ড্রা গুনাওয়ান স্যাওয়ালের তোলা সেই নিজস্বী।

জাভা সাগরের গভীরতা খুব বেশি না হওয়ায় প্রথমে মনে হয়েছিল উদ্ধারকাজ বোধহয় কষ্টসাধ্য হবে না। কিন্তু প্রবল ঝোড়ো হাওয়া, বৃষ্টি, উঁচু ঢেউয়ের চোটে গত এক সপ্তাহে বারে বারেই বাধা পেয়েছে তল্লাশি। দৃশ্যমানতা ভীষণ কম থাকায় অসুবিধেয় পড়তে হয়েছে বায়ুসেনার বহু বিমানকে। সমুদ্রের তলায় খোঁজ চালানোর জন্য যে ডুবুরিদের নামানো হয়েছে তাঁদের সমস্যা অন্য জায়গায়। তাঁরা জানিয়েছেন, জলের স্রোত এতটাই বেশি যে সমুদ্রের তলদেশে কাদা জল ঘুলিয়ে উঠছে। দূরের কোনও জিনিস নজরে এলেও কাদা জল ঘুলিয়ে ওঠায় মুহূর্তের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে তা। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই চালিয়েই এগোচ্ছে উদ্ধার অভিযান। মৃতদেহের পাশাপাশি যাত্রীদের স্যুটকেস, পিঠের ব্যাগ, আপতকালীন জানলার কিছু অংশও জল থেকে তোলা গিয়েছে এ দিন।

এ দিকে ইন্দোনেশিয়ার পরিবহণ মন্ত্রক সোমবার জানিয়েয়েছে, বিমান দুর্ঘটনার সময় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ও বিমানবন্দরের যে অপারেটররা দায়িত্বে ছিলেন, তদন্ত শেষ হলে অন্য দায়িত্বে সরানো হবে তাঁদের।

রবিবার সকালে ইন্দোনেশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর বিমান চালানোর অনুমতি এয়ার এশিয়ার কাছে ছিল কিনা, তা নিয়ে এই ক’দিন কম টানাপড়েন হয়নি। ইন্দোনেশিয়ার দাবি, এয়ার এশিয়ার ওই অনুমতি ছিল না। আবার সিঙ্গাপুর জানায়, তারা ওই উড়ানে সায় দিয়েছিল। এই বিতর্কের মধ্যে এ দিন ইন্দোনেশিয়া জানিয়েছে, যাত্রীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত বিমান সংস্থারই। প্রাথমিক ভাবে শোনা যাচ্ছে, পরিবারপিছু প্রায় পনেরো লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ভাবছে এয়ার এশিয়া। এখনও উদ্ধার হয়নি প্রিয়জনের দেহ। হয়তো জাভা সাগরের ওই এলাকায় হারিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। খোঁজ আর মিলবে কিনা, জানা নেই। তাই শোকের ভার কমাতে যেখানে তল্লাশি চলছে, সেই পাঙকালান বান-এ সেনার বিমানে করে নিখোঁজ যাত্রীদের পরিজনকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া।

qz 8501 plane accident indonesia hendra gunawan syawal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy