Advertisement
E-Paper

বন্দি কাইলা তাঁর স্ত্রী, জঙ্গিডেরায় গিয়ে বলেছিলেন সিরিয়ার যুবক

সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিল, সিরিয়ার জঙ্গিডেরা থেকে মার্কিন পণবন্দি কাইলা মুলারকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। আপাদমস্তক কালো পোশাকে ঢাকা কাইলা তখনও তাঁর চোখের সামনে দাঁড়িয়ে। সিরিয়ার গোপন ডেরায় জেলের আলো-আঁধারি সেই কুঠুরিতে দাঁড়িয়েও ওমর আলখানি বিশ্বাস করেছিলেন, যে কোনও মূল্যে প্রেমিকাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনবেন! তবে শেষরক্ষা হয়নি।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:০০

সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিল, সিরিয়ার জঙ্গিডেরা থেকে মার্কিন পণবন্দি কাইলা মুলারকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। আপাদমস্তক কালো পোশাকে ঢাকা কাইলা তখনও তাঁর চোখের সামনে দাঁড়িয়ে। সিরিয়ার গোপন ডেরায় জেলের আলো-আঁধারি সেই কুঠুরিতে দাঁড়িয়েও ওমর আলখানি বিশ্বাস করেছিলেন, যে কোনও মূল্যে প্রেমিকাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনবেন! তবে শেষরক্ষা হয়নি।

গত সপ্তাহে সিরিয়ায় বন্দি কাইলার মৃত্যুসংবাদ স্বীকার করে মার্কিন প্রশাসন। ২৬ বছরের ওই তরুণীর পরিবার প্রকাশ্যে এলেও সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেননি ওমর। আজ, একটি ব্রিটিশ সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাইলাকে নিয়ে মুখ খুলেছেন ওমর। বলেছেন কী ভাবে প্রেমিকাকে বাঁচাতে সিরিয়ার জঙ্গিডেরা পর্যন্ত ধাওয়া করেছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, “কাইলার অপহরণের খবর পেয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যে কোনও মূল্যে ওকে ছাড়িয়ে আনব। আমি সিরিয়ার নাগরিক। কাইলাকে আমার স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিলে ওরা হয়তো ওকে ছেড়ে দেবে ভেবেছিলাম। কিন্তু পারলাম না।”

ওমর জানান, সৌদি আরব, তুরস্ক, মিশর ছাড়াও ভারতের অনাথ বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করেছেন কাইলা। তাঁদের চার বছরের সম্পর্কে ওমর বুঝেছিলেন, সর্বহারাদের জন্য সব কিছু ছেড়ে দিতে পারেন কাইলা। সিরিয়ায় কাজ করতে গেলে জীবনের ঝুঁকি যে থেকেই যায়, তা নিয়ে দু’জনের কথাও হয়েছে। বাধা, মতবিরোধও হয়েছে। তবে কাজ চালিয়ে গিয়েছেন কাইলা। ওমরের কথায়, “অপহৃত হওয়ার আগে যে দিন শেষ বার ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, ট্যাক্সিতে বসেই খুব কান্নাকাটি করেছিল।”

কাইলাকে ছাড়িয়ে আনতে সিরিয়ার গোপন জঙ্গিডেরায় পৌঁছে গিয়েছিলেন ওমর। জঙ্গিগোষ্ঠীর শীর্ষ নেতৃত্বের সামনে দাঁড়িয়েই বলেছিলেন, কাইলা তাঁর স্ত্রী। জানিয়েছিলেন, তিনি সিরিয়ার বাসিন্দা। সেনার চর নন। তাঁর বিবাহিত স্ত্রীকে যেন রেয়াত করে জঙ্গিরা। সেই আর্জি কবুলও হয়েছিল। জঙ্গি নেতা জানিয়েছিলেন, কাইলার সঙ্গেও এক বার কথা বলতে চান তিনি। অন্ধকার জঙ্গিডেরার সামনে দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন ওমর। তবে ওই নেতা আর ফিরে আসেননি। বরং মুখ ঢাকা জঙ্গিরা তাঁকে মিথ্যা বলার অপরাধে বন্দি করেছিল। ওমরের কথায়, “তখন বুঝতে পারি, কাইলা বিয়ের কথা স্বীকার করেনি। ও কি বুঝতে পারেনি, আমি ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে এসেছিলাম?”

শেষ বার সেই অন্ধকার কুঠুরিতেই কাইলার সঙ্গে দেখা হয়েছিল ওমরের। একরত্তি এই মিথ্যেতে প্রাণ বাঁচত মেয়েটার। সব জেনেও কেন চুপ করে রইলেন তিনি? তাঁর প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি কাইলা। হাপুস নয়নে কাঁদতে কাঁদতে শুধু বলেছিলেন, “আমি বুঝতে পারিনি!”

দু’মাস বন্দি থাকার পর রেহাই পান ওমর। তার পর বার বার টিভি আর খবরের কাগজে পড়েছেন জঙ্গিদের হাতে মার্কিন পণবন্দিদের শিরশ্ছেদের খবর। তার পর গত সপ্তাহে জানতে পারেন, কাইলার মৃত্যুর খবর স্বীকার করেছেন মার্কিন প্রশাসন। এটাই যে অনিবার্য, মনে মনে জানতেন তিনি। তবে তিনি বলেন, “ওকে আমি এ ভাবে মনে রাখতে চাই না। মনে রাখব, ওই মেয়েটা প্রসাধনের জিনিস না কিনে সেই অর্থে বাচ্চাদের খাবার কিনে দিত। মনে রাখব, অন্যের আনন্দেই ও আনন্দ পেত। জঙ্গিদের বর্বরতা ওকে কেড়ে নেবে কী করে?”

isis syria omar al khani kyla muller
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy