Advertisement
E-Paper

রং-তুলি, ফুটবলে জীবন জয়ের স্বপ্ন উদ্বাস্তু শিশুদের

বছর আষ্টেক বয়স হবে। এক মুখ হেসে রং-পেন্সিলে আঁকা ছবিটা হাতে ধরিয়ে দিল ছোট্ট মেয়েটি।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৪ ১৪:২৮

বছর আষ্টেক বয়স হবে। এক মুখ হেসে রং-পেন্সিলে আঁকা ছবিটা হাতে ধরিয়ে দিল ছোট্ট মেয়েটি। ক্লাসে ‘যেমন খুশি আঁকায়’ এই ছবিটাই এঁকেছে সে। বিপ্লবীদের পতাকা, ক্ষেপণাস্ত্র নিরোধক যন্ত্র, গুলিগোলা চলছে তার খুদে হাতে এমনই দৃশ্য ধরা পড়েছে ড্রয়িং খাতার পাতায়।

ঘটনাস্থল, তুরস্কের ছোট্ট শহর রেহানলির উদ্বাস্তু-স্কুল। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে সীমান্ত পেরিয়ে এই রেহানলিতে আশ্রয় নিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। বড়দের হাত ধরে সিরিয়া ছেড়েছে ছোটরাও। অনেক ক্ষেত্রেই সে হাত বাবা-মার নয়। যুদ্ধে মারা গিয়েছেন তাঁরা। শেষ মুহূর্তে হাতের কাছে পাওয়া জিনিসগুলো ঝোলায় বেঁধে ঘর-বাড়ি-দেশ ছেড়ে আস্তানা গেড়েছে বিদেশ-বিভুঁইয়ে। সিরিয়ার ত্রাস যদিও পিছু ছাড়েনি। রেহানলিতে পৌঁছনোর পরেই জঙ্গিরা দু-দু’টো গাড়ি-বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। নিহত হন অন্তত ৫০ জন। তুরস্কের মাটিতে এ হেন জঙ্গি হানা প্রথম। স্বাভাবিক ভাবেই অভিযোগের আঙুল ওঠে সেই উদ্বাস্তুদের দিকে। ফলস্বরূপ, অচেনা-অজানা শহরে একঘরে হয়ে যায় উদ্বাস্তু শিবির। ‘এক-ঘরেই’ বটে। এক-একটা খুপরি কামরায় মাথা গোঁজা ৯-১০ জনের।

এতদিনে অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছে খুদেরা। কৃতিত্ব অবশ্যই বর্তায় বড়দের কাঁধে। সিরিয়া থেকে চলে আসা শিক্ষক-শিক্ষিকারা তৈরি করেছেন স্কুল। নাম রাখা হয়েছে ‘আল সালাম’। বা ‘শান্তির’ স্কুল। আর সেখানেই স্বদেশের চেনা ভাষায় চলছে স্কুলের পাঠ। বয়স ২ পেরোলেই স্কুলে প্রবেশ অবাধ। প্রধানশিক্ষিকা হাজার আল মাহানি বলেন, ভেবেছিলাম জনা তিনশো পড়ুয়া হবে। কিন্তু এক সপ্তাহেই সংখ্যাটা গিয়ে ঠেকে ৯০০-তে। ইংরেজি আর আরবি, শেখানো হচ্ছে দুই ভাষাই। তুরস্কে আসার পর স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলাই ঝক্কি হয়ে উঠেছিল। কেউ কারও কথা বুঝত না। তাই সপ্তাহে একটা করে স্থানীয় ভাষার ক্লাসও হয়। যতই হোক, আশ্রয়দাতা দেশের ভাষা।

রেহানলি শহরটা যে প্রদেশে, সেই ‘হাতায়’ এক সময় সিরিয়ারই অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে তা চলে আসে তুরস্কে। আর রেহানলি একেবারে সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্ত ঘেঁষা। সিরিয়ার আলেপ্পো থেকে হাঁটা পথে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। সরকার-বিরোধী সংঘর্ষের জেরে পালানোর জন্য সিরিয়াবাসীর সহজলভ্য আশ্রয় হয়েছিল রেহানলি।

গাজিয়াঁতেপ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের পড়াশোনা শুরু করেছেন বছর কুড়ির সাফি। স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়ার ইচ্ছে তাঁর। দেশে ঘরবাড়ি সব ধ্বংস হয়ে গিয়েছে আসাদ সরকারের গুলিগোলায়। শেষ বার যখন দেশ ছাড়েন, বাড়ির কাঠামোটাই পড়েছিল। গোটা পাড়াটার একই দশা হয়েছিল। ছোটরা অনেকেই বাবা-মা হারিয়ে অনাথ। বড়দের জীবনছবিও কম কষ্টের নয়। মৃত সন্তানকে কোলে করে কবর দিতে হয়েছে। বিষগ্যাসে তার ছোট্ট শরীরটা নীল হয়ে গিয়েছিল। গ্যাঁজলা বেরিয়ে আসা মুখটা এখনও চোখ বুজলেই ভেসে ওঠে সন্তানহারা বহু বাবা-মার। সাফি স্বপ্ন দেখে দেশে ফেরার। বললেন, “স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়ব। ধ্বংসস্তূপে নতুন করে ঘরবাড়ি বানাতে হবে যে!”

আবার আল মাহায়নির মতো লোকও রয়েছে। কানাডার সচ্ছল জীবন ছেড়ে তুরস্কে চলে এসেছেন স্কুলে স্বেচ্ছাসেবী কর্মী হিসেবে কাজ করতে। স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটদের জন্য নানা আয়োজন। ফুটবল ম্যাচ থেকে গল্প লেখার ক্লাস। কিংবা মনের খুশিতে দেওয়াল রাঙানো। তাদের প্রিয় স্কুলের চৌহদ্দিতেই রক্তাক্ত অতীত ভুলে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে ছোটরা।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy