মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বাংলাদেশের জামালপুরের তিন জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অপর পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুমের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
সোমবার এ রায় দেন ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মহম্মদ আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ। বেঞ্চের অপর দুই বিচারপতি হলেন শাহিনুর ইসলাম এবং মহম্মদ সোহরাওয়ারদি।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন— আশরাফ হোসেন, আবদুল হান্নান ও মহম্মদ আবদুল বারি। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বা গুলি করে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরা করা যাবে বলে জানিয়েছেন ট্রাইবুনাল।
আর আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন— শামসুল হক, এস এম ইউসুফ আলি, অধ্যাপক শরিফ আহমেদ ওরফে শরিফ হোসেন, মহম্মদ হারুন এবং মহম্মদ আবুল কাসেম।
এই আট আসামি ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সহযোগিতায় গঠিত রাজাকার ও আল-বদর বাহিনীতে যোগ দেন।
রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে শামসুল ও ইউসুফ কাঠগড়ায় ছিলেন। আমৃত্যু সাজার রায়ের বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে আপিল করার সুযোগ পাবেন তারা। বাকিদের পলাতক দেখিয়েই এ মামলার বিচার চলে। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হলে তাদের আত্মসমর্পণ করতে হবে।
মানবতাবিরোধেী অপরাধের ট্রাইব্যুনালের এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ও তাপস কান্তি বল। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী এবং আইনজীবীব এন এইচ তামিম। পলাতক ছয় জনের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবদুস সুবহান তরফদার। গত বছরের ২৬ অক্টোবর এই আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইবুনাল। এর আগে একই বছরের ২৯ এপ্রিল এই আট আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইবুনাল। গত ২২ জুলাই পলাতক জামালপুরের ছয়জনকে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাইবুনাল।
আর চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল এই আট আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট পাঁচটি ঘটনায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। সে সময় জামালপুরের বিভিন্ন এলাকায় তারা যেসব মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড ঘটান, তা এ মামলার বিচারে উঠে এসেছে।
ট্রাইবুনালে এ পর্যন্ত রায় আসা ২৫টি মামলার ৪৪ আসামির মধ্যে মোট ২৬ যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ সাজার আদেশ হল।
আরও পড়ুন