Advertisement
E-Paper

সতর্কতা সত্ত্বেও বাঘের ঘরেই ঘোগের বাসা

বাবা শাসক দলের নেতা, ছেলে গুলশনের রেস্তোরাঁয় হামলাকারী। জুনের ২৬ তারিখ থেকে ছেলেকে খুঁজে না-পেয়ে আওয়ামি লিগের এই নেতা পুলিশে জানাননি, বরং ছেলের ফেসবুক পেজেই আবেদন জানিয়েছিলেন— ফিরে আয় বাবা!

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ১১:২৪

বাবা শাসক দলের নেতা, ছেলে গুলশনের রেস্তোরাঁয় হামলাকারী।

জুনের ২৬ তারিখ থেকে ছেলেকে খুঁজে না-পেয়ে আওয়ামি লিগের এই নেতা পুলিশে জানাননি, বরং ছেলের ফেসবুক পেজেই আবেদন জানিয়েছিলেন— ফিরে আয় বাবা! ঘটনার পর থেকে ওই নেতার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।

অনেকেই বলবেন, এ যেন বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা। অনেকে আবার এমন ঘটনায় একটুও অবাক হচ্ছেন না। তাঁদের মতে, সরষের মধ্যে ভূত ঢুকতে শুরু করেছে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই।

বছর দুয়েক আগে জামাত-জঙ্গি দমনে রাজশাহি, সাতক্ষীরা ও চট্টগ্রামে পুলিশ ও র‌্যাব (র‌্যাপিড অ্যাকশন ব‌্যাটেলিয়ন) যখন যৌথ অভিযান চালাচ্ছে, ভারতীয় গোয়েন্দারা তখনই ঢাকাকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছিল। পরেও এ বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রমাণ দিয়ে একাধিক বার সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু কাজ বিশেষ হয়নি বলে আক্ষেপ করছেন ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা।

জামাত-জঙ্গিদের টাকার একটি বড় সূত্র ভারতে চোরাচালান ও পাকিস্তানের দেওয়া জাল ভারতীয় মুদ্রা চালান। বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে নরেন্দ্র মোদী সরকার জাল নোট পাচারের তদন্তের দায়িত্ব তুলে দিয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র হাতে।

কয়েক মাস তদন্ত করে এনআইএ জাল নোট পাচারের অন্যতম মাথা হিসেবে বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার এক ব্যবসায়ীকে চিহ্নিত করে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এত দিন জামাতের সঙ্গী এই নেতা এখন আওয়ামি লিগে যোগ দিয়েছেন। একটি ইউনিয়ন বোর্ডের জনপ্রতিনিধিও নির্বাচিত হয়েছেন। দিল্লির পক্ষে তার নাম-ধাম সরকারি ভাবে ঢাকাকে জানানোর সত্ত্বেও এখনও তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।

বাংলাদেশে সব চেয়ে ধনী দল হিসেবে পরিচিত জামাতে ইসলামি। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করা এই দলই যে বাংলাদেশে জঙ্গি শক্তির মূল পালক-পোষক— এ বিষয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। রাজনৈতিক ভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়া এই দলের অনেক নেতা টিকে থাকার জন্য শাসক দল আওয়ামি লিগের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বোঝাপড়া করে নিয়েছে বলে অভিযোগ।

শুধু ভারতীয় গোয়েন্দারাই নয়, সরকারের জোট শরিক একটি বামপন্থী দলের নেতাও বলছেন, ‘‘রাজশাহি, বগুড়া, সাতক্ষীরা বা চট্টগ্রামে বরাবরই জামাত শক্তিশালী। এই সব এলাকায় আওয়ামি লিগের এমন এক জনও স্থানীয় নেতা খুঁজে পাওয়া কঠিন, যাঁরা জামাতের সঙ্গে ডিল করে চলেন না।’’ তাঁর কথায়— আওয়ামি লিগের নেতাদের টাকা দিয়ে তারা গ্রেফতারি এড়ায়। ধরা পড়লে আওয়ামি নেতারাই তাদের ছাড়িয়ে আনে।

বছর দেড়েক আগে বাংলাদেশের সর্বত্র দলীয় কর্মী-সদস্যদের মধ্যে নির্বাচন করে নেতৃত্ব বাছাই করেছে আওয়ামি লিগ। অভিযোগ, জামাত-অধ্যুষিত জেলাগুলিতে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের অনেকেই মৌলবাদীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে প্রচারের কাজে ব্যবহার করেছেন। জামাতের এই বিনিয়োগ যে এমনি নয়, তা দেখা গিয়েছে নির্বাচনের পরে। দিকে দিকে জামাতের নেতা কর্মীদের রীতিমতো মালা পরিয়ে আওয়ামি লিগে বরণ করে নেওয়া শুরু হয়। তাদের অনেককে সাংগঠনিক পদও দেওয়া হয়েছে।

সরকারের শরিক দলের ওই নেতা বলেন, তাঁরাও বিষয়টি নিয়ে আওয়ামি লিগ নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে উদ্বেগ জানিয়েছেন। হাসিনা তাঁদের ১৪ দলের জোটেরও নেত্রী। তাঁর কথায় হাসিনা সব শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তার পরেও জামাতের নেতাদের আওয়ামি লিগে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

আওয়ামি লিগের এক নেতা অবশ্য দাবি করেছেন, স্থানীয় স্তরে এমন ছোটখাটো ঘটনা হয়েই থাকে। শীর্ষ স্তর থেকে নির্দেশ দিয়ে জামাতের নেতাদের দলে নেওয়া এখন বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু যাঁদের ইতিমধ্যেই দলে নেওয়া হয়ে গিয়েছে, তাঁদের বাদ দেওয়া সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নেতা।

Dhaka Massacre Terrorist Awami League Leader's Son
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy