Advertisement
E-Paper

আওয়ামি প্লাবনে খড়কুটোর মতো ভেসে গেল বিএনপি-জামাত জোট, বাংলাদেশে ইতিহাস

কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে সকাল আটটা বাজা মাত্রই ঢাকায় নিজের বুথে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামি গিগের নেত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৫
ভোটের ফলাফল শোনার পর আওয়ামি লিগ সমর্থকদের উল্লাস। ছবি: সংগৃহীত।

ভোটের ফলাফল শোনার পর আওয়ামি লিগ সমর্থকদের উল্লাস। ছবি: সংগৃহীত।

এমনটা যে হবে কেউ ভাবেননি। হাসিনা নিশ্চিত ছিলেন তাঁর দলই জিতবে। কিন্তু এ ভাবে? না, সম্ভবত তিনিও ভাবেননি। বাস্তবে অভাবিত ফল দিল বাংলাদেশের ভোট। আওয়ামি লিগের বিপুল জয়জয়াকার। প্রায় মুছে গেল বিরোধীরা। বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ভেঙে টানা তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় শেখ হাসিনা। শুধু দল নয়, রেকর্ড করেছেন মুজিব কন্যাও। গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে ২ লা্খ ৩২ হাজার ভোট পেয়ে রেকর্ড গড়েছেন হাসিনা। সেখানে বিএনপি প্রার্থী এস এম জিলানী পেয়েছেন মাত্র ১২৩টি ভোট।

রবিবার সন্ধ্যায় ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পরেই বুথে বুথে ভোট গোনা শুরু হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আওয়ামি লিগ জোট পেয়েছে ২৮৮টি আসন। বিএনপি মাত্র ছয়টি। বাকিরা চারটি আসন পেয়েছে। ফলের আভাস স্পষ্ট হতেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগিরকে পাশে নিয়ে বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান কামাল হোসেন ঘোষণা করেছেন, এই ফল তাঁরা প্রত্যাখ্যান করছেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে দেশে ফের ভোটের দাবি জানাচ্ছেন তিনি।

কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে সকাল আটটা বাজা মাত্রই ঢাকায় নিজের বুথে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামি লিগের নেত্রী শেখ হাসিনা। ভোট দিয়ে আঙুল তুলে বিজয়-চিহ্ন দেখালেন তিনি। বাইরে আসামাত্র ছেঁকে ধরা দেশি-বিদেশি সংবাদিকদের বললেন, ‘‘মানুষ যে রায় দেবে, তা মাথা পেতে নেব। আমি নিশ্চিত সাধারণ মানুষ নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়ী করবেন। বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখবেন।’’

নৌকাডুবির প্রতিজ্ঞায় এ বার জোট বেঁধেছিল বিরোধীদের রামধনু জোট। দুর্নীতির দায়ে কারাবন্দি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ছাড়াই ভোটে নেমে কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকি, আ স ম আব্দুর রবের মতো নামী মুক্তিযোদ্ধাদের হাত ধরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়েছিল বিএনপি। অন্য হাত অবশ্য মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা জামাতের হাতেই ছিল। তাদের ২২ জন নেতাকে নিজেদের প্রতীক ধানের শিস ধার দিয়ে বিএনপি প্রমাণ করেছিল, যে কোনও ভাবে ক্ষমতায় ফিরতে তারা মরিয়া। দলের নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা বর্ষীয়ান নেতা নজরুল ইসলাম বললেন, ‘‘কেউ জামাত নয়, ধানের শিস নিয়ে লড়ছেন যাঁরা—সকলেই বিএনপির প্রার্থী।’’ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে ধানের শিসে ভোট দিন।’’

গণতন্ত্রের উৎসব। বাংলাদেশের ভোটের একটি চিত্র।—ছবি পিটিআই।

ভোটের ফল যদি কোনও বার্তা বয়ে আনে, তা হলে বলতেই হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ চাননি দুর্নীতির দায়ে জেলে যাওয়া খালেদা মুক্তি পান। অর্থাৎ তাঁরা দুর্নীতির বিপক্ষে। টানা তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হতে চলা শেখ হাসিনাও নিশ্চয়ই এই বার্তাকে গুরুত্ব দেবেন। কিন্তু যাদের নিয়ে এত হইচই, সেই জামাত এ দিন দুপুরেই বিবৃতি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়।

বিকেল পাঁচটায় ভোট নেওয়া শেষ হওয়ার পরেই বুথে বুথে শুরু হয় গণনা। প্রথম রাউন্ড থেকেই দেখা যায় তর তর করে এগিয়ে চলেছে নৌকা। ২০২১-এ স্বাধীনতার ৫০ বছর। সেই বছরকে পাখির চোখ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নানা রূপকল্প ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা। এ বার তা বাস্তবায়নের পালা।

বাংলাদেশের সংসদে মোট আসন ৩০০। সরাসরি সাধারণ ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হন এই আসনগুলির প্রার্থীরা। এর বাইরেও আরও ৫০টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। সাধারণ ভোটে রাজনৈতিক দলগুলির প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে এই ৫০টি আসনের প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ৩০০টির মধ্যে ২৩৪টি আসন জিতে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামি লিগ।

আহত বিএনপি প্রার্থী সালাউদ্দিন আহমেদ। ছবি রয়টার্স।

এ দিন হিংসার খবরও মিলেছে বাংলাদেশে। শনিবার রাত থেকে ভোটের দিনের রাত পর্যন্ত সংঘর্ষে মারা গিয়েছেন ১৭ জন। এঁদের মধ্যে শাসক দলের কর্মী বেশি। রয়েছেন পথচলতি মানুষও। এক দিকে বুথগুলিতে উৎসবের মেজাজে ভোটারদের ভিড়, অন্য দিকে বিরোধীদের ‘রিগিং রিগিং’ নালিশ। যে সব প্রার্থীকে এক দিনও প্রচারে বার হতে দেখা যায়নি, তাদের অনেকে শীতের সকালের কুয়াশা কেটে রোদ ওঠার পরে সাংবাদিক ডেকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা করলেন। তত ক্ষণে এক একটি বুথের অর্ধেক ভোটার তাঁদের ভোট দিয়ে আঙুলে কালি মেখে ফেলেছেন। মাঝে মাঝে উড়ে এসেছে বিক্ষিপ্ত গোলমালের খবর, অবাঞ্ছিত মৃত্যুসংবাদ। সব মিলিয়ে এই ভাবেই কাটল ঢাকার রোববার, আরও একটি ভোটের দিন।

আজ সোমবার নতুন দিন শুরু করতে চলেছে বাংলাদেশ। উঠবে নতুন দিনের সূর্য। যে বাংলাদেশ নৌকায় চড়ে আগামী দিনে গণতন্ত্রের সাগরে পাড়ি দেবে। এই আশা শুধু বাংলাদেশবাসীরই নয়, সমগ্র আন্তর্জাতিক দুনিয়ারও।

Bangladesh Election 2018 Dhaka Awami League Sheikh Hasina BNP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy