সময় মতো ট্রিম না করলে গোলাপ গাছও টিকবে না। কাঁটা বাড়বে, ফুল ফুটতে গিয়ে ঝরবে, মরেও যেতে পারে। চারপাশ আগাছায় ছাইবে। পাতা, ডালপালার বেপরোয়া বৃদ্ধি সব শক্তি শুষবে। কোরক থেকে পাপড়ি মুখ তুলতেই পারবে না। গাছ ছেঁটে কেটে সুবিন্যস্ত রাখাটা অবশ্য কর্তব্য। অর্থনীতির জনক অ্যাডাম স্মিথ কথাটা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, অর্থনীতিও গাছের মতো। চারা পুঁতে ছেড়ে দিলে চলবে না। নিয়মিত পরিচর্যা দরকার। সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, বৃদ্ধি যেন সঠিক মাত্রায় হয়। এক দিকে বাড়লে, অন্য দিকে কমলে বিশৃঙ্খলা। সামঞ্জস্য রাখতে নিয়মিত সংস্কার জরুরি। সেটা মনে রেখেই সতর্ক বাংলাদেশ। অর্থনীতি আর আগের মতো নেই। ঘর আগলে রাখাটা সহজ নয়। হু হু করে বাইরের আলো, বাতাস, ঝড় ঢুকছে। বেসামাল হলেই সব ওলটপালট। বাজার অর্থনীতিতে সবই খোলামেলা। পাহারা জোরদার না হলে চলে না।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্র ছাড়াচ্ছ। সে তো গর্বের কথা। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বহর বাড়ছে। তাই বলে, চুপ করে থাকলে হবে না। সব দিকে সতর্কতা না বাড়ালে চলবে কী করে। বিশ্ববাজারের অবস্থা ভাল নয়। তার প্রভাব পড়ছে কমবেশি সব দেশে। পণ্যের দাম লাগাম ছাড়া। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। অর্থ বেশি পণ্য কম। চাহিদা বাড়ছে, জোগান কমছে। যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি মুদ্রাস্ফীতি। এটা এমন একটা ভয়ঙ্কর রাক্ষস যা যে কোনও দেশের অর্থনীতি মুহুর্তে গিলে ফেলতে পারে। তার থেকেই সাবধান বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক। ছ'মাসের জন্য বিশেষ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, যাতে মুদ্রাস্ফীতি থেকে আত্মরক্ষা সম্ভব।
সব থেকে কড়া নজর ঋণদানে। ছোট বড় যে কোনও সংস্থা টাকা চাইলেই দিতে হবে, তার কোনও মানে নেই। টাকাটা কাজে লাগাতে না পারলে সমূহ ক্ষতি। তাতে ঋণ সদ্ব্যবহারে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি শুধু নয়, বাজারেও তার খারাপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। মুদ্রাস্ফীতি রোখাও অসাধ্য। আবার ব্যাঙ্কগুলো যদি না ভেবেচিন্তে শেয়ার বাজারে টাকা ঢালে, তার ফলও ভাল হয় না। সেটাই হচ্ছে। একেক দিন অবিশ্বাস্য পতন শেয়ারবাজারে। এমনও দেখা গেছে, স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক কমেছে ১১৮ পয়েন্ট। লেনদেনও কমেছে অনেক। শেয়ার বাজারের টাকা বিনিয়োগে না ঢুকে আটকে থাকলে এমনটাই হবে।
বিনিয়োগ থামান যাবে না। উৎপাদনের সঙ্গে ঋণের সামঞ্জস্য রাখাটা জরুরি। যেখানে উৎপাদন কম সেখানে টাকা ছড়িয়ে কী লাভ। নজর দেওয়া দরকার কর্মসংস্থানে। কর্মহীনরা যেখানে বেশি মাত্রায় কাজ পায় সেখানেই টাকার মূল্য বেশি। কর্মসংস্থানের জোরে অর্থনীতির ভিত শক্ত হবে। এখন যা অবস্থা জুন পর্যন্ত ঋণের জোগান অপরিবর্তিত থাকছে। ঋণ বৃদ্ধি ১৬.৫০-এর নীচে নামছে না। ২০১০ থেকে শেয়ার বাজারের যে মন্দা চলছে তা অনেকটা কাটিয়ে ওঠা গেছে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স যাতে না কমে সে দিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। পাঠানো টাকা যাতে কোনও মতেই ব্যাঙ্ক ছাড়া হুন্ডিতে না আসে সে দিকেও সতর্ক সরকার।
আরও পড়ুন: বিদেশি বিনিয়োগে গতি আনতে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ছে বাংলাদেশ
সব থেকে আশ্বাসের কথা, রিজার্ভ চুরির টাকা ধীরে ধীরে হলেও ফিরতে শুরু করেছে। দেড় কোটি ডলার ফেরত পাওয়ার পর আরও ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। এ নিয়ে ফিলিপিন্সের আদালতে মামলা চলছে। তার নিষ্পত্তি হলেই টাকা হাতে আসবে। আপাতত বাংলাদেশের অর্থনীতির ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত না থাকার কোনও কারণ নেই।
তত্থ: বিশ্বব্যাঙ্ক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy