Advertisement
E-Paper

বাইকে এসে হুমকি চিঠি, ছবি পুলিশকে

বুধবার তখন বেলা দেড়টা। বৃষ্টিটা একটু কমেছে। ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান ফটকের বাইরে এসে থামল লাল রঙের একটি মোটরসাইকেল। হাতে একটি খাম নিয়ে হেঁটে ভেতরে ঢুকলেন চালক। প্রশস্ত চত্বরের শেষে মিশনের ‘অনুসন্ধান’ বিভাগে এসে খামটি জমা দিয়ে সটান বেরিয়ে গেলেন।

কুদ্দুস আফ্রাদ

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ০৮:৫৭

বুধবার তখন বেলা দেড়টা। বৃষ্টিটা একটু কমেছে। ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান ফটকের বাইরে এসে থামল লাল রঙের একটি মোটরসাইকেল। হাতে একটি খাম নিয়ে হেঁটে ভেতরে ঢুকলেন চালক। প্রশস্ত চত্বরের শেষে মিশনের ‘অনুসন্ধান’ বিভাগে এসে খামটি জমা দিয়ে সটান বেরিয়ে গেলেন।

চিঠিটি লেখা মিশনের প্রধানের উদ্দেশে। কিন্তু প্রধান মহারাজ ঢাকার বাইরে। অথচ খামের ওপর লেখা ‘অত্যন্ত জরুরি’। অনুসন্ধান বিভাগের কর্মীরা পড়লেন মহা ফাঁপরে। এক কর্মী চিঠিটি নিয়ে জানতে গেলেন মিশনের সহ-সম্পাদক মৃদুল মহারাজের কাছে— কী করা যায়! মৃদুল মহারাজ ওরফে স্বামী সেবানন্দ তাঁদের বলেন, ‘‘জরুরি যখন খুলেই দেখা যাক! ব্যক্তিগত চিঠি তো নয়।’’

সে চিঠি খুলে পড়তেই কপালে ভাঁজ মৃদুল মহারাজের। আইএস-এর নামে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে মিশনের প্রধান মহারাজকে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে যেতে। নিমেষে মিশনে নেমে আসে অস্বস্তির আবহ। স্থানীয় ওয়ারি থানায় ফোন করে বিষয়টি জানান মৃদুল মহারাজ। পুলিশ তাঁকে চিঠিটি নিয়ে থানায় আসতে বলে। সেখানে গিয়ে ডায়েরি করেন সহ-সম্পাদক। বৃহস্পতিবার জানান বেলুড়ে সঙ্ঘের সদর দফতরে। পাঠানো হয় চিঠির প্রতিলিপিও।

শুক্রবার কিন্তু সেই অস্বস্তি কাটিয়ে অনেকটাই স্বাভাবিক ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন। মৃদুল মহারাজ জানালেন, আর পাঁচ দিনের মতোই সব কাজকর্ম হয়েছে। এমনকী কর্মীরাও যে খুব ভীত-সন্ত্রস্ত, তা মনে করেন না তিনি। তবে পুলিশি পাহারা বেড়েছে। নিরাপত্তার কড়াক্কড়ি বা তল্লাশির নামে মিশনে আসা মানুষজনকে হেনস্থা করা হোক, তা তিনি চান না।

অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কি শুরু করেছে পুলিশ? মিশনের সহ-সম্পাদক জানালেন, পুলিশের তৎপরতায় তাঁরা সন্তুষ্ট। বুধবার তাঁরা ফোন করার পরই গোয়েন্দা পুলিশ মিশনে এসে খোঁজখবর করে গিয়েছিল। যে বাহক চিঠিটি দিয়ে গিয়েছিল, মিশনে লাগানো সিসিটিভিতে তার ছবি উঠেছে। পেনড্রাইভ এনে পুলিশ সেই ফুটেজ নিয়ে গিয়েছে।

মহারাজ জানান, গত ডিসেম্বর থেকেই মিশনের কোনও না কোনও দফতরে আইএস-এর নামে হুমকি চিঠি দেওয়া শুরু হয়েছে। কখনও বা অজানা নম্বর থেকে ফোন করে সন্ন্যাসীদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ সবের পর ঢাকার মিশনে নিরাপত্তার কিছু বাড়তি বন্দোবস্ত করতে হয়েছে। লাগানো হয়েছে সিসিটিভি। তিনি বলেন, ‘‘জীবন-মৃত্যু তো কারও হাতে নয়! পুলিশ বাড়িয়ে হামলা আটকানোও সম্ভব নয়। তবু যতটুকু করা যায়!’’

কিন্তু এ দিনের চিঠিটির সঙ্গে আগের চিঠিগুলির বয়ানের স্পষ্ট ফারাক রয়েছে। এক কর্মী বললেন, ‘‘এই চিঠিটি কোনও পাগলের কাজ বলে মনে হয়। কারণ নিজের বাবা গরু চুরি করলে— কেউ ফলাও করে বলে? হুমকি চিঠির লেখক সে কথা জানিয়েছে।’’ মহারাজেরও ধারণা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতেই এই চিঠি পাঠানোর কৌশল।

তবে মিশনে অবশ্য একেবারেই উল্টো ছবি। ছেলেমেয়েকে নিয়ে কেউ এসেছেন স্কুলে ভর্তির খোঁজখবর নিতে। কেউ অন্য কাজে। কেউ বা সপরিবারে এসেছেন নেহাতই বেড়াতে। ছোটরা দিব্যি দৌড়োদৌড়ি করছে, জায়গায় জায়গায় গল্পে মেতেছেন মেয়েদের দল। চলছে খাওয়া-দাওয়াও। আতঙ্কবাদীদের দশ গোল দিয়ে দিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

ramkrishna mission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy