Advertisement
০৩ মে ২০২৪

অস্থিরতা বাড়াও! একের পর এক হত্যাকাণ্ডে যোগসূত্র কি এটাই?

১৯৪৭-এ ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাকিস্তানের অঙ্গদেশ হিসেবে স্বাধীনতা লাভ। ১৯৭১-এ পূর্ণ স্বাধীনতা। স্বাধীন বাংলাদেশর জন্ম। এই গোটা পর্ব জুড়েই বাংলাদেশের রাজনীতির ওঠাপড়া বড্ড চোখে পড়ার মতো। কখনও সামরিক শাসন, কখনও ইসলামাবাদের ষড়যন্ত্র, কখনও দেশের মধ্যে থাকা উগ্র মৌলবাদের বিষ বারবার জর্জরিত করেছে বাংলাদেশকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ১৪:৩৭
Share: Save:

১৯৪৭-এ ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাকিস্তানের অঙ্গদেশ হিসেবে স্বাধীনতা লাভ। ১৯৭১-এ পূর্ণ স্বাধীনতা। স্বাধীন বাংলাদেশর জন্ম। এই গোটা পর্ব জুড়েই বাংলাদেশের রাজনীতির ওঠাপড়া বড্ড চোখে পড়ার মতো। কখনও সামরিক শাসন, কখনও ইসলামাবাদের ষড়যন্ত্র, কখনও দেশের মধ্যে থাকা উগ্র মৌলবাদের বিষ বারবার জর্জরিত করেছে বাংলাদেশকে। সেই ভয়ঙ্কর পিচ্ছিল আর দুর্গম পথে হাঁটতে হাঁটতেই কিন্তু বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। গণতন্ত্রের পক্ষে, সর্বধর্ম সহিষ্ণুতার পক্ষে। এমন এক জেগে ওঠার, উঠে দাঁড়ানোর সন্ধিক্ষণেই আবার যেন সব উল্টেপাল্টে, লন্ডভন্ড করে দিতে চাইছে কেউ কেউ। শুধু গণতন্ত্রের পথেই নয়, এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক বিকাশেও উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনার দরজায় দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। এমন সময়েই, গত দেড় বছর ধরে ঘটে চলেছে একের পর এক হত্যাকাণ্ড, যা আঘাত করছে মতপ্রকাশ ও ধর্মাচরণের স্বাধীনতাকে। এক বার তাকিয়ে নিই সেই তালিকার দিকে।

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫: একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকার রাস্তায় মৌলবাদীদের হাতে খুন হন মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিত্ রায়। তাঁর স্ত্রী রফিকা আহমেদ বন্যার সামনেই কুপিয়ে খুন করা হয় তাঁকে। কেটে নেওয়া হয় বন্যার হাতের বুড়ো আঙুল।

৩০ মার্চ, ২০১৫: ঢাকার বেগুনবাড়ি অঞ্চলে নিজের বাড়ির কাছেই ধর্মান্ধদের ধারালো ছুরির শিকার হন ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু। ধর্মকারী ও ইস্টিশন নামে দু’টো ব্লগে নিয়মিত কলম লিখতেন বাবু।

২১ মে, ২০১৫: সিলেটে চার মৌলবাদী কুপিয়ে হত্যা করে নাস্তিক ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে। মুক্তমনা ব্লগে নিয়মিত লেখার পাশাপাশি গণজাগরণ মঞ্চের সদস্য ছিলেন অনন্ত বিজয় দাশ।

সস্ত্রীক ব্লগার অভিজিত্ রায়

৭ অগাস্ট, ২০১৫: মু্ক্তমনা, ইস্টিশন, ফেসবুকে নিজের মতামত নিয়মিত প্রকাশ করতেন ব্লগার নিলয় নীল। ১৫ মে অনন্ত বিজয় দাশের স্মরণসভায় থেকে ফেরার পথে দুষ্কৃতীরা অনুসরণ করেছিল তাঁকে। পুলিশের কাছে নিজের জীবনশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন নিলয়। কিন্তু লাভ হয়নি। তিন মাসের মধ্যেই মৌলবাদীদের চাপাতিতে খুন হন তিনি।

৩১ অক্টোবর, ২০১৫: শাহবাগের জাগৃতি প্রকাশনীর দফতরে ভর দুপুরে হামলা চালায় মৌলবাদীরা। কুপিয়ে হত্যা করা হয় প্রকাশক ফয়সল আরফিন দীপনকে। একই দিনে এর পরই লালমাটিয়া এলাকার শুদ্ধস্বর প্রকাশনার দফতরে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। গুরুতর জখম হন প্রকাশক আহমেদ রশিদ টুটুল, রণদীপম বসু ও তারেক রহিম।

৬ এপ্রিল, ২০১৬: ঢাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক পা দূরে জঙ্গিদের হাতে খুন হন আইনের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদ। মু্ক্তমনা ব্লগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সামাদ। হত্যার দায় স্বীকার করে আল কায়দা।

ব্লগার নিলয় নীল

২৩ এপ্রিল, ২০১৬: প্রকাশ্য রাস্তায় ইসলামি চরমপন্থীদের হাতে খুন হন রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকি।

১৪ মে, ২০১৬: বান্দারবনের বৌদ্ধ বিহারে ৭০ বছর বয়সী বৌদ্ধ ভিক্ষু উ গাইন্দ্যাকে গলা কেটে হত্যা করে দুষ্কৃতীরা।

৫ জুন, ২০১৬: একই দিনে দুই হত্যাকাণ্ড। ভোর ৬টা নাগাদ চট্টগ্রামের রাস্তায় পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানুম মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে দুষ্কৃতীরা। বাবুল আক্তার জঙ্গি বিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। একই দিনে দুপুর ১২টা নাগাদ নাটোরের এক খ্রিস্টান ব্যবসায়ী ৬০ বছরের সুনীল গোমেজকে তাঁর মুদির দোকানে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকি

৭ জুন, ২০১৬: ঝিনাইদহের মন্দিরের পুরোহিত ৭০ বছর বয়সী আনন্দগোপাল গঙ্গোপাধ্যায়কে গলা কেটে খুন করে খুন করে জঙ্গিরা। দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট।

১০ জুন, ২০১৬: পাবনার হেমায়েতপুরে অনুকুল চন্দ্র ঠাকুর সেবাশ্রমের সেবক নিত্যরঞ্জন পান্ডেকে কুপিয়ে হত্যা করে দুষ্কৃতীরা।

১ জুলাই, ২০১৬: ঝিনাইদহের শ্রী শ্রী রাধা মদনগোপাল মঠ মন্দিরের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

২ জুলাই, ২০১৬: সাতক্ষীরার ব্রহ্মরাজপুরের ইসকন মন্দিরের পুরোহিত ভবসিন্ধু বরকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে দুষ্কৃতীরা। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তিনি।

গুলশন রেস্তোরাঁর সামনে

এত দিন পর্যন্ত মৌলবাদী দুষ্কৃতী বা জঙ্গিদের টার্গেট ছিলেন হয় মুক্তমনা মানুষেরা, নয়ত দেশের সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীরা! ঢাকায় শুক্রবার রাতের হামলাটা কিন্তু একেবারে অন্য রকম। গুলশন এলাকা জুড়ে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস। যে স্প্যানিশ রেস্তোরাঁতে হামলা হল, তাতে বিদেশিরাই বেশি যান! এই বিশেষ টার্গেট বাছার পিছনে কি ষড়যন্ত্রকারীদের বিশেষ কোনও উদ্দেশ্য আছে? ঢাকা তথা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আন্যান্য দেশের কাছে ব্ল্যাকলিস্টেড করে তোলাই কি উদ্দেশ্য? তাই যদি হয়, হাসিনা সরকারের সামনে কিন্তু এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

আরও পড়ুন: জেএমবি নেতা খালেদের মুক্তি চাইছিল ওরা, উঠছে আইএস-এর নামও

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh Attack Gulshan Restaurant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE