—ফাইল চিত্র।
নির্বাচন কমিশন সব সময়েই বিরোধীদের টার্গেট। হারলে তো কথাই নেই। লোকসমক্ষে সাফাই, নির্বাচন কমিশনের কারসাজিতে হারতে হল। পরাজয়ের লজ্জা থেকে রেহাই পাওয়ার এমন সহজ রাস্তা আর কোথায়। যেন জেতা গেম জোচ্চুরি করে হারাল রেফারি। রাজনীতিতে সত্যি-মিথ্যে এমন ভাবে মিশে থাকে, আলাদা করা কঠিন। অ্যাডলফ হিটলারের সাগরেদ গোয়েবলস বলতেন, একটা মিথ্যে তিন বার বললে সত্যি হয়ে যায়। মানুষকে বোকা বানানো খুব একটা কঠিন নয়। সত্যিই কি তাই? তাঁরা মিথ্যের মোড়কে বাঁচতে পেরেছেন কত দিন? জার্মানিতে হিটলারের স্বৈরতন্ত্রে যা চলেছে, গণতন্ত্রে তা অচল। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচন কমিশন গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ। তাকে আঘাত করে ভাঙার চেষ্টা অমার্জনীয় অপরাধ। তবু একজোট হয় বাংলাদেশে আর পশ্চিমবঙ্গে। ভারতের আর কোথাও এমনটা দেখা যায় না। বাঙালির কি নির্বাচন কমিশনে অ্যালার্জি? জনপ্রিয়তা হারিয়ে ভোটে ছিটকে গেলে নির্বাচন কমিশন কী করবে— ভোটে অবৈধ কাজ যে হয় না এমন নয়। অনেক জায়গায় ছাপ্পা ভোট চলে। পুলিশ নীরব দর্শক হয়ে থাকে। সেই অনিয়ম বন্ধ করার যৌথ দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। যে দল যে এলাকায় শক্তিশালী সেখানে জুলুম চালালেই এটা হয়। সব দল যদি নিজেদের নেতা-কর্মীদের সংযত রাখতে পারে তা হলেই ল্যাটা চুকে যায়। এখানে নির্বাচন কমিশন কী করবে। ভোটে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে তাদের ভরসা করতে হয় নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর।
শেখ হাসিনা তিন বার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন কি নীতিবহির্ভূত নির্বাচনে? তাই যদি হত তা হলে দেশের মানুষ কি ছেড়ে কথা বলত? তীব্র আন্দোলনে হাসিনা সরকারকে উল্টে দিতে সময় নিত না। বিরোধী দলগুলোর খুব একটা পরিশ্রমের দরকার ছিল না। বিক্ষোভের আগুন দাউদাউ করে জ্বলত। ছড়িয়ে পড়ত আপনা থেকেই। দেশটার নাম যে বাংলাদেশ সেটা ভুললে তো চলবে না। এ দেশে স্বৈরতন্ত্রী সামরিক শাসকরা মৌরসিপাট্টা করে ক্ষমতা আগলে বসে থাকতে গিয়েও সফল হননি। গণআন্দোলনে হুড়মুড় করে ভেঙে মাটিতে মিশেছেন।
আরও পড়ুন: দাউদ মার্চেন্টকে কি দেশে ফেরানো হচ্ছে? জল্পনা ভারত-বাংলাদেশে
হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলি গণতন্ত্রের স্তম্ভ। রাজনৈতিক লড়াইয়ের ঊর্ধ্বে। রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব তাদের সযত্নে রক্ষা করা। না করলে গণতন্ত্র বিপর্যস্ত হবে। বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। সব রাজনৈতিক দলের মত নিয়েই সেটা করা হয়। রাজনৈতিক কারণে কমিশনারকে যদি বিতর্কে জড়ান হয়, নির্বাচনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে। শাসক দল যদি ক্ষমতার জোরে নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করতে চায়, ফল ভাল হয় না। বিরোধী দলের দাবি, সুষ্ঠু নির্বাচনে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সেটা করা দরকার তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিরোধীরা নির্বাচন কমিশন গঠনে বিশেষ অবদান রাখতে চাইছে। ২০০১-এ তাদের তৈরি কমিশনের চেহারা কী হয়েছিল ভাবতেও লজ্জা হয়। এখনকার বিরোধীরা তখন শাসন ক্ষমতায়। তাদের নির্দেশে, ভোটার তালিকায় ঢুকেছিল ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়ো ভোটারের নাম। বর্তমান তালিকায় ভুয়ো ভোটার নেই। সেটা পছন্দ নয় বিরোধীদলের। তারা ভুয়ো ভোটারের ওপর ভরসা করেই নির্বাচন লড়তে চাইছে।
নির্বাচন জিততে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করলে গণতন্ত্রের ভিত নড়ে যাবে। বাংলাদেশ দীর্ঘ সংগ্রামের পর গণতন্ত্রের রাস্তায় পা রেখেছে। সফর শুরু করেই টেক্কা দিয়েছে পাকিস্তানকে। নির্বাচন শুধু সংসদেই আটকে নেই। ছড়াচ্ছে শেকড়ে। তৃণমূলে শাসকের দায়িত্বে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ অভাবনীয়। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন গঠিত নির্বাচনে। ডিসেম্বরে জেলা পরিষদে ভোট। বিরোধীরা লড়াইয়ে ফিরেছে। গণতন্ত্রে বিরোধী দলের ক্ষমতা অসীম। দেশ গঠনে তাদের ভূমিকা কম নয়। শাসক দলকে সুসংহত করে ঠিক পথে রাখার দায়িত্ব তাদের। সরকারের ভুল শোধরানোর কাজটা তারাই করে। নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করলে মানুষই তাদের এক দিন ক্ষমতায় টেনে আনবে। অগণতান্ত্রিক উপায়ের ওপর ভরসা করতে হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy