Advertisement
E-Paper

নিজামির ফাঁসিতে ফুঁসছে পাকিস্তান, তুরস্ক

বাংলাদেশ দুর্বার। ঠেকানোর সাধ্য কার? রুখতে কম চেষ্টা করেনি পাকিস্তান। পারেনি। বার বার পিছু হঠেছে। এ বারেও হঠল। ১০ মে তাদের একান্ত আপনজন জামাত প্রধান মতিউর রহমান নিজামির ফাঁসি হল। যিনি অনুগত প্রজা হিসেবে আমৃত্যু সেবা করেছেন পাকিস্তানের।

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৬ ১৭:০৪

বাংলাদেশ দুর্বার। ঠেকানোর সাধ্য কার? রুখতে কম চেষ্টা করেনি পাকিস্তান। পারেনি। বার বার পিছু হঠেছে। এ বারেও হঠল। ১০ মে তাদের একান্ত আপনজন জামাত প্রধান মতিউর রহমান নিজামির ফাঁসি হল। যিনি অনুগত প্রজা হিসেবে আমৃত্যু সেবা করেছেন পাকিস্তানের। ১৯৪৩-এ পাবনার মোহাম্মদপুরে নিজামির জন্ম হলেও সেখানে তাঁকে সমাধিস্থ করাতে তীব্র প্রতিবাদ। স্থানীয় জনতার দাবি, তাঁর দেহ পাঠানো হোক পাকিস্তানে। সেটাই নিজামির স্বদেশ। বাংলাদেশ নয়।

একাত্তরে তিনি ছিলেন জামাতের ছাত্র সংগঠন নিখিল পাকিস্তান ইসলামি ছাত্র সঙ্ঘের সভাপতি। যার এখনকার নাম ইসলামি ছাত্র শিবির। তাঁর নেতৃত্বেই আল-বদর বাহিনী সেরা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। বাংলাদেশ মুক্তির পরেও তাদের সক্রিয়তা কমেনি। আগে যা প্রকাশ্যে করত, সেই কাজই করতে শুরু করল গোপনে। বাড়ল গুপ্তহত্যা। একাত্তরের ২৩ এপ্রিল ‘দৈনিক পাকিস্তান’-এ বিবৃতি দেন নিজামি। সেখানে তিনি বলেন, ‘আল-বদর একটি নাম, একটি বিস্ময়। আল-বদর একটি প্রতিজ্ঞা। যেখানে মুক্তিবাহিনী, সেখানেই আল-বদর। ভারতীয় চরদের কাছে আল-বদর সাক্ষাৎ আজরাইল।

আল-বদর বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয় রাজাকার বাহিনী। এই বাহিনী গড়ে তোলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর টিক্কা খান। উর্দূতে রাজাকারের অর্থ স্বেচ্ছাসেবক। মানেটা আটপৌরে হলেও কাজটা ছিল চরম নৃশংসতার। তাদের নিষ্ঠুরতাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাৎসিবাহিনীর পোল্যান্ড অভিযানের সঙ্গে তুলনা করা হয়।

আরও পড়ুন: নিজামির ফাঁসিতে ক্ষিপ্ত ইসলামবাদ তলব করল বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে

মুক্তির পরিপন্থী পাকিস্তান অনুগামী ইসলামী ছাত্র সঙ্ঘ, জামাত-ই-ইসলামি, মুসলিম লিগ, পাকিস্তানি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি কাউন্সিল, নিজাম-ই-ইসলামি রক্তের নদী বইয়ে দেয় বাংলাদেশে। ইসলামি ছাত্র সঙ্ঘ আল-বদর নামে আর বাকিরা আল-শামস্ নামে চিহ্নিত। উর্দূভাষীদের বলা হত আল-মুজাহিদ। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও তাদের আগলে রেখেছিল পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রশ্রয়ে ক্ষমতা বাড়িয়েছিলেন নিজামিও। তিনি মন্ত্রীও হয়েছিলেন।

২০১৩’র ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শাহবাগে গণ আন্দোলনের দাবি ছিল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। ২৭ ফেব্রুয়ারি ট্রাইবুনাল যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির নির্দেশ দেয়। প্রতিবাদে হিংসাত্মক আন্দোলনে নামে জামাত। মৃত্যু হয় ৬০ জনের। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও কঠোর হয়ে ওঠেন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইবুনাল আইন পরিবর্তন করা হয়, যাতে সাজা দ্রুত কার্যকরী করা যায়। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল মামলা ৬৪ দিনের মধ্যে শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় ক্যাবিনেট। ফাঁসিদান পর্ব গতি পায়। একের পর এক যুদ্ধাপরাধী ফাঁসিতে ঝুলতে থাকে।

এমনটা যে হবে কল্পনাও করেনি পাকিস্তান। বাংলাদেশের দৃঢ়তায় স্তম্ভিত। তারা ভেবেছিল, জামাত এ সব রুখতে পারবে। দেখা গেল, নিজামির ফাঁসির পরেও হরতাল ডেকে সফল হল না জামাত। পাকিস্তান বিদেশ মন্ত্রক জানাল, নিজামির ফাঁসিতে তারা বেদনার্ত। তাঁর একমাত্র দোষ ছিল তিনি পাকিস্তানের সংবিধানকে উঁচুতে স্থান দিয়েছিলেন। কড়া জবাব দেন বাংলাদেশ বিদেশ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি জানান, নিজামি যে বিশ্বাসঘাতক পাকিস্তানের কথায় তা প্রমাণিত। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে পাকিস্তানের নাক গলানোটা মানা যাবে না। পাল্টা আঘাতে ফুঁসছে পাকিস্তান। কিছু করতে পারছে না। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে নিজামির ফাঁসির বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। ইসলামাবাদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে কড়কেছে পাকিস্তান। জবাবে ঢাকায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ। কূটনৈতিক যুদ্ধে পাকিস্তানের পাশে তুরস্ক। তুরস্কের রাষ্ট্রপতি এরদোগাম জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখবেন না। ঢাকা থেকে তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নীরব আমেরিকা, চিনও চুপ।

Nizami Nizami execution pakistan and turaska Amit Basu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy