Advertisement
E-Paper

এই ছেলেটা সন্ত্রাসবাদী! তীব্র বিস্ময় বাংলাদেশে

এই ছেলেটা? একে তো চিনি! আমিও তো চিনতাম! আমার ভাইয়ের বন্ধু ছিল তো এ? নিবরাসকে নিয়ে এখন এমনই বিস্ময় বাংলাদেশে। পরিচিত মহল যেন বজ্রাহত! কিন্তু যাঁরা চিনতেন না, গুলশন উত্তর পর্বে যাঁরা চিনলেন ছেলেটাকে, তাঁরাও কম হতবাক নন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৬ ১৭:০৭
নিবরাস ইসলাম। ছবি: ফেসবুক।

নিবরাস ইসলাম। ছবি: ফেসবুক।

এই ছেলেটা? একে তো চিনি!

আমিও তো চিনতাম! আমার ভাইয়ের বন্ধু ছিল তো এ?

নিবরাসকে নিয়ে এখন এমনই বিস্ময় বাংলাদেশে। পরিচিত মহল যেন বজ্রাহত! কিন্তু যাঁরা চিনতেন না, গুলশন উত্তর পর্বে যাঁরা চিনলেন ছেলেটাকে, তাঁরাও কম হতবাক নন। এমন সম্ভ্রান্ত ঘরের ছেলে এই রকম ঘটনা ঘটাতে পারল?

জিজ্ঞাসা, প্রশ্নচিহ্ন, বিস্ময়, হতাশা, বিহ্বলতা বাংলাদেশের সর্বত্র। সোশ্যাল মিডিয়াতেও আছড়ে পড়েছে সেই ঝড়। নিবরাস ইসলামকে নিয়ে এখন তোলপাড় ঢাকা।

কে এই নিবরাস ইসলাম?

গুলশনের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর গুলিতে যে ৬ জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে, তাদের এক জন এই ঝকঝকে তরুণ। মালয়েশিয়ান মোনাশ ইউনিভার্সিটির পড়ুয়া নিবরাস কুয়ালা লামপুরেই থাকত। ২০১৬-র জানুয়ারি মাস থেকে তাঁর পরিবার আর তার কোনও খোঁজ পায়নি। খোঁজ মিলল প্রায় ৬ মাস পর। গুলশনের রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসবাদী হামলার পর সেনা অভিযানে মৃত জঙ্গিদের তালিকায় তার নাম দেখা গেল।

বাংলাদেশের পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়ায় নিবরাস ইসলাম, রোহন ইমতিয়াজ, শামিম মুবাশির সহ কয়েক জন নিহত জঙ্গির পরিচয় প্রকাশ করেছে। এদের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে বিভিন্ন ছবি তুলে ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছে পুলিশ। এদের যাঁরা চেনেন বা চিনতেন, তাঁদের কাছ থেকে এদের সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে। ফেসবুকেই তথ্য জানাতে বলা হয়েছে।

পুলিশের এই ফেসবুক পোস্টের পরই ঝড় উঠে গিয়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

কানাডার মন্ট্রিয়ল থেকে ফারহানুল ইসলাম নামে এক জন ফেসবুকে নিবরাসের ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘‘এই ছেলেটা হল অন্যতম জঙ্গি নিবরাস ইসলাম। এই যুবক শিক্ষিত, ধনী এবং একটা পরিবারও আছে। কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ ছিল। এই পৃথিবীতে নিশ্চয়ই কোনও গলদ রয়েছে, না হলে এই ছেলেগুলোর মগজধোলাই করা যায় না। সব চেয়ে বিস্ময়কর হল, এই ছেলেটার ফ্রেন্ড লিস্টে এমন অনেকে রয়েছেন, যাঁরা আমার ফ্রেন্ড লিস্টেও রয়েছেন (মিউচুয়াল ফ্রেন্ড)। ভাবতে পারছি না, কাকে বিশ্বাস করব।’’

চৌধুরী জারিয়া ইসলাম নামে এক তরুণী লিখেছেন, ‘‘আমি এটা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। নিবরাস ইসলাম ১ জুলাই, ২০১৬-র হামলাকারীদের এক জন। খুব হ্যান্ডসম, সুদর্শন, শিক্ষিত যুবক সে। এনএসইউ-এর ছাত্র। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। সে এক জন শয়তানে পরিণত হতে পারে কী করে এবং কেন?’’

অন্য এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘‘এই ছেলেটা টার্কিশ হোপ স্কুলে পড়ত। তার পর নর্থ সাউথ উইনিভার্সিটিতে পড়ত। সব শেষে মালয়েশিয়ান মোনাশ ইউনিভার্সিটি। আমরা ভীষণ অবাক হয়েছি। প্লিজ কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করার আগে এ বার জেনে নাও, সে কেমন। নিজের বন্ধুদের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করলেই বাবা-মাকে বল, বড়দের বল।’’

নিবরাসের এক পরিচিত লিখেছেন, ‘‘আমার পারিবারিক ঐতিহ্য যেমন, নিবরাসেরও তেমন। ওকে অনেক দিন ধরে চিনি। ও আমার ভাইয়ের বন্ধু ছিল। আমাদের আশপাশের লোকজনই এই রকম হয়ে উঠছে! বিশ্বাস করতে পারছি না।’’

আরও পড়ুন: দু’বছরে আইএসের বলি ১৩০৯! অধিকাংশই পশ্চিমি নাগরিক

নিবরাস ইসলামের ফেসবুক প্রোফাইল দেখলে সত্যিই বিশ্বাস করা যায় না, সে জঙ্গি হয়ে উঠতে পারে। ঢাকার নামী স্কুল, ততোধিক নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা। তার পর বিদেশে পড়তে চলে যাওয়া। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে রেস্তোরাঁয়-মলে-অ্যামিউজমেন্ট সেন্টারে ঘুরতে যাওয়া, পরিজনদের সঙ্গে উৎসব-অনুষ্ঠানে মেতে ওঠার যে সব ছবি নিবরাসের ফেসবুক প্রোফাইলে রয়েছে, তাতে তার জঙ্গি হয়ে ওঠার আশঙ্কার কথা দুঃস্বপ্নেও মাথায় আসে না।

বলিউড স্টার শ্রদ্ধা কপূরেরও ভক্ত ছিল নিবরাস। কোনও এক অনুষ্ঠানে বা পার্টিতে শ্রদ্ধা কপূরের সঙ্গে দেখাও হয়েছিল তার। শ্রদ্ধার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার ভিডিও নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্টও করেছিল এই তরুণ। শ্রদ্ধার সঙ্গে হ্যান্ডশেকের মুহূর্ত কতটা অসাধারণ ছিল, ভিডিওর ট্যাগলাইনে সে কথা লিখেওছিল নিবরাস।

অর্থাৎ, সম্পন্ন পরিবারের শিক্ষিত, সুদর্শন, হাসিখুশি, সদ্য যুবকের মধ্যে জানুয়ারির আগে পর্যন্তও কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না।

নিবরাসের পরিচিত এবং বন্ধুদের মধ্যে যাঁরা ফেসবুকে তার ছবি শেয়ার করে মন্তব্য করেছেন, তাঁদের মধ্যেও সীমাহীন বিস্ময়। যে ছেলেটা এত হাসিখুশি, এত মিশুকে ছিল, বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে যে জনপ্রিয় ছিল অত্যন্ত ভাল ব্যবহারের জন্য, সে গুলশনে এমন গণহত্যা চালাল! বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশের।

Nibras Islam Dhaka Terror Attack Terrorist
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy