E-Paper

বাংলা কবিতার চরাচর, কবি প্রবালকুমার বসু ও মৃত্যুঞ্জয়কুমার সিংহের এক ভিন্ন স্বাদের আলোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৩ ২৩:৫৩
মৃত‌্যুঞ্জয়কুমার সিংহ এবং প্রবালকুমার বসু

মৃত‌্যুঞ্জয়কুমার সিংহ এবং প্রবালকুমার বসু

প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন ও আখর কলকাতার উদ‌্যোগে ১৩ জুন, কলকাতার ‘দ‌্য কনক্লেভ’-এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ‘বাংলা কবিতার চরাচর’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন কবি, প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক প্রবালকুমার বসু ও হিন্দি ভাষার জনপ্রিয় কবি, গীতিকার ও লোকসঙ্গীত গায়ক মৃত‌্যুঞ্জয়কুমার সিংহ। অনুষ্ঠানের সহ আয়োজক পূর্ব-পশ্চিম নাট‌্য দল। সমগ্র অনুষ্ঠানের ডিজিটাল পার্টনার ছিল আনন্দবাজার অনলাইন।

প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরেই বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত‌্য নিয়ে বহু কাজ করে চলেছে। বাংলা সাহিত‌্যের বিকাশের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে তারা অবদান রেখে আসছে। তবে শুধু বাংলা নয়, ভারতবর্ষের আরও নানা ভাষা নিয়ে এই ফাউন্ডেশন কাজ করে চলেছে। তাদের সৃষ্টি আখর বাংলা, যা বাংলা সাহিত‌্য নিয়ে নানা কাজ করে চলেছে। তবে শুধু বাংলা নয় আখর হিন্দি, আখর মারাঠি, আখর পাঞ্জাবিতেও রয়েছে।

আখর-এর অন‌্যান‌্য অনুষ্ঠানের থেকে এই দিনের আলোচনা ছিল একটু ভিন্ন স্বাদের। দুই কবি তাঁদের নিজেদের ভাষা নিয়ে যেমন আলোচনা করেন আবার দুই ভাষার বিনিময়, তাঁদের মধ‌্যে আদানপ্রদান নিয়েও নানা আলোচনা হয়।

আলোচনার শুরুতেই মৃত‌্যুঞ্জয়কুমার সিংহ, প্রবালকুমার বসুর ‘সীমারেখা’ কবিতাটি পড়ে শোনান। প্রবাল বসুর শৈশব নিয়ে জানতে চান মৃত‌্যুঞ্জয়কুমার সিংহ। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠার প্রভাব, নামকরা সাহিত‌্যিকদের সান্নিধ‌্য তাঁর ওপর কেমন প্রভাব বিস্তার করেছে। ‘প্রথিতযশা কবি ও সাহিত‌্যিকদের সঙ্গ পাওয়ার সব থেকে বড় পাওনা হল দৃষ্টিভঙ্গি। জীবনকে দেখার নজরটা পাল্টে যায়। এঁদের সহচর্যে এসে আমি বুঝতে শিখেছি ঠিক কী ধরনের বই পড়া উচিত। যখন গড়ে ওঠার সময় তখন সঠিক বই নির্বাচন একটি অত‌্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এঁদের সান্নিধ‌্য পেয়ে আমার নিজের ভাবনা-চিন্তা এক অন‌্য দৃষ্টিকোণ পেয়েছে যা আমার চলার পথে সাহায‌্য করেছে।’

মৃত্যুঞ্জয়কুমার সিংহ, কবি ও গীতিকার

মৃত্যুঞ্জয়কুমার সিংহ, কবি ও গীতিকার

এর পরে প্রবালকুমার বসুর সম্পাদিত লিটল ম‌্যাগাজিন ‘যাপনচিত্র’ ও ‘সাইনপোস্ট’ শীর্ষক বইটি নিয়ে আলোচনা হয়। মূলত তরুণদের কবিতা ছাপার একটি মাধ‌্যম তৈরি করে দেওয়া এবং তাঁদের ভাবনার পরিসরকে উন্মুক্ত করে দেওয়াই ‘যাপনচিত্রে’-র মূল ভাবনা। প্রত‌্যেক কবির প্রায় গুচ্ছ খানেক কবিতা ছাপানো হয়, বলেন প্রবাল বসু। তা ছাড়া যাপন চিত্রের একটি ক্রোড়পত্র রয়েছে, যার বিষয় নির্বাচন এমন যা পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত‌্য নিয়ে গবেষণায় ভবিষ‌্যতে কাজে লাগবে।

প্রবাল কুমার বসুর আর একটি প্রামাণ‌্য কাজ ‘সাইনপোস্ট’। স্বাধীনতার পরবর্তী ৫০ বছরের বাংলা সাহিত‌্যের কবিতার ইংরেজিতে অনুবাদ। ‘আমরা পাঁচজন কবিকে নির্বাচন করি এবং তাঁদের কবিতা ছাপা হয়। রূপা পাবলিকেশন থেকে প্রকাশ পায় বইটি ২০০২ সালে। বইটি বহু সমাদৃত। এত বছর পরেও বাংলা কবিতার নির্ভরযোগ‌্য ইংরেজি কালেকশন এখনও অবধি আর একটিও নেই’, বললেন প্রবাল বসু।

এর পরেই আলোচনাটি চলে যায় দুই ভাষার আদানপ্রদানে। বাংলা সাহিত‌্য যে ভাবে হিন্দি সাহিত‌্যে প্রভাব ফেলেছে তা অনস্বীকার্য। বাংলা সংলগ্ন রাজ‌্যগুলির মানুষদের বাংলা ভাষার প্রতি ছিল অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। এই প্রসঙ্গে মৃত‌্যুঞ্জয় সিংহ বলেন, যে বিহারে একসময় শিক্ষিত পরিবারে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ‌্যায়ের বই (হিন্দিতে অনুবাদ করা) রীতিমতো পুজো করা হত। হিন্দি পকেট বুকস থেকে অনুবাদ করে প্রকাশিত হত। কেমন ভাবে বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন বাংলা সাহিত‌্যিকরা হিন্দি ভাষায় প্রভাব বিস্তার করেছে তা নিয়ে দীর্ঘ কথোপকথন চলতে থাকে।

বাংলা ভাষার সঙ্গে হিন্দি ভাষার যে মেলবন্ধন ছিল, তাতে একটা সময়ের পর একটা ছেদ পড়তে থাকল। কবিদের মতে এর জন‌্য বাংলা ভাষার উন্নাসিকতা যেমন দায়ী আবার হিন্দি ভাষীরাও নিজেদের আলাদা করতে শুরু করে দিলেন। হিন্দি ভাষাও এগিয়ে যেতে থাকে। ভাষার আদানপ্রদানের পাশাপাশি কবিতার ছন্দ ও ভাষা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। অনুষ্ঠান শেষে কবি প্রবাল বসু ‘সৌদামিনী আছে’ নামক তাঁর লেখা একটি প্রেমের কবিতা পাঠ করেন ও কবি মৃত‌্যুঞ্জয় সিংহ তাঁর লেখা ‘মেঘদূত: বিরহ কা দূত’ থেকে কিছু অংশ গেয়ে শোনান।

ঈপ্সিতা গঙ্গোপাধ‌্যায় (কবি ও ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা)

ভরপুর সুন্দর একটি সন্ধ‌্যা উপভোগ করলাম। দু’জন কবিই আমার অত‌্যন্ত প্রিয়। আজকের সন্ধ‌্যায় দু’জনের মধ‌্যে এই আলোচনা যেমন প্রাণবন্ত আবার তেমনই শিক্ষণীয়, সব কিছু মিলিয়ে এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান। প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনের উদ‌্যোগে আখর-এর এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই। তাদের এই উদ‌্যোগ আরও বিস্তার লাভ করুক।

দেবেন্দ্র কৌর গিল (পাঞ্জাবি কবি)

অতি মনোরম ও মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান ছিল। দুই ভাষার কবি এত সুন্দর ভাবে নিজেদের কথোপকথন এগিয়ে নিয়ে গেলেন তা দেখে আমি সত‌্যিই মুগ্ধ। হিন্দি সাহিত‌্যে মধ্যে বাংলা সাহিত‌্যের প্রভাব এবং দুই ভাষার আদানপ্রদান এত সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুললেন তা সত‌্যিই প্রশংসনীয়।

মৃত‌্যুঞ্জয় কুমার সিংহ (কবি, সাহিত‌্যিক ও লোকসঙ্গীত গায়ক)

প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন এবং আখর একটি সুন্দর মাধ‌্যম তৈরি করেছে, প্রথমেই তাদের এই প্রয়াসকে অভিনন্দন জানাই। আজকে সবচেয়ে ভাল লাগল যে প্রবাল আর আমার মধ‌্যে যে কথা হয় একটি ভাষার সঙ্গে আরেকটি ভাষার বিনিময়, আদান প্রদান কেমন হওয়া উচিত তারই কিছুটা এই অনুষ্ঠানে আমরা প্রকাশ করতে পেরেছি। ভাষা ভাব বিনিময়ের মাধ‌্যম। সেখানে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও আদানপ্রদান অত‌্যন্ত জরুরি।

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy