অহমদাবাদ বিমান দুর্ঘটনাকাণ্ডে স্তম্ভিত গোটা দেশ। বৃহস্পতিবার, ১২ জুন মাটি ছাড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রীবোঝাই উড়োজাহাজ। এতে মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ২৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। আহত বেশ কয়েক জন। দুর্ঘটনার পর আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করে টাটা গোষ্ঠীর উড়ান সংস্থা। এই ধরনের পরিস্থিতিতে বিমানযাত্রীদের ভ্রমণ বিমার সুবিধা পাওয়ার নিয়ম রয়েছে। কী বলছে সরকারি নিয়ম? আনন্দবাজার ডট কমের এই প্রতিবেদনে রইল তার হদিস।
ভারতে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত বা আহত হলে কখনওই তার দায় এড়াতে পারবে না পরিষেবা প্রদানকারী উড়ান সংস্থা। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, বাধ্যতামূলক ভাবে আর্থিক সাহায্য দিতে হবে তাদের। ১৯৯৯ সালে উড়ান পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে তৈরি হয় ‘মন্ট্রিল কনভেনশন’। এতে স্বাক্ষর করে ভারত। তার পর থেকে ওই কনভেনশনে নেওয়া আন্তর্জাতিক আইনের যাবতীয় বিধিনিষেধ মেনে চলে এ দেশের বিমান পরিষেবা।
মন্ট্রিল কনভেনশন অনুযায়ী, বিমান দুর্ঘটনায় কোনও যাত্রীর মৃত্যু হলে বা শারীরিক আঘাত লাগলে সংশ্লিষ্ট উড়ান সংস্থাকে ১.৫৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য দিতে হবে। তদন্তের পর গাফিলতি প্রমাণিত হলে এই আর্থিক সাহায্যের অঙ্ক আরও বৃদ্ধি পাবে। আন্তর্জাতিক পরিষেবার ক্ষেত্রে এটি বাধ্যতামূলক। ঘরোয়া উড়ান যাত্রার ক্ষেত্রে অবশ্য আর্থিক সাহায্যের অঙ্ক স্থির করে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণে থাকা ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন বা ডিজিসিএ।
উল্লেখ্য, বিমান দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে নিহত যাত্রীর পরিবার বা আহতেরা কত টাকা আর্থিক সাহায্য পাবেন, তা নানা বিষয়ের উপর নির্ভর করবে। এর মধ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট যাত্রীর বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মসংস্থান, শেষ পাওয়া বেতনের পরিমাণ, বৈবাহিক অবস্থা, সাধারণ আর্থিক অবস্থা এবং পরিবারে তাঁর উপর আর্থিক ভাবে নির্ভরশীল সদস্যের সংখ্যা। এই ধরনের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ভ্রমণ বিমার সুবিধাও রয়েছে। তার মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ পাবেন অভিশপ্ত বিমানের হতভাগ্য যাত্রীদের পরিবারের সদস্যেরা।
বিমান দুর্ঘটনায় ভ্রমণ বিমা কী কী ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে, তারও সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। উড়োজাহাজের যাত্রীর মৃত্যু হলে বা শারীরিক ভাবে অক্ষমতা তৈরি হলে এই বিমার আবেদন করা যাবে। এ ছাড়া দুর্ঘটনার জেরে চিকিৎসা খরচের জন্যেও সংশ্লিষ্ট বিমার টাকা পেতে পারেন তাঁরা।
নিয়ম অনুযায়ী, দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে ২৫ লক্ষ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত বিমার টাকা পাবেন নিহত উড়ান যাত্রীর পরিবারের সদস্যেরা। স্থায়ী শারীরিক অক্ষমতার ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলে দৈনিক বিলও ওই বিমার টাকায় দেওয়া যাবে। তবে বিমানে ওঠার আগে যে সমস্ত যাত্রী নিজেদের উদ্যোগে ভ্রমণ বিমার জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করবেন, কেবলমাত্র তাঁদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।