Advertisement
E-Paper

শিল্প-রাজনীতির চাঁদের হাট ঝাড়খণ্ড বিনিয়োগ সম্মেলনে

প্রাক্তন কর্মীর সঙ্গে একই মঞ্চ ভাগ করে নিলেন রতন টাটা। একদা টাটা স্টিলের সাধারণ কর্মী রঘুবর দাস রাজনীতির পালাবদলে বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:০০
সম্মেলন-মঞ্চে স্মৃতি ইরানি ও রতন টাটা। বৃহস্পতিবার। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।

সম্মেলন-মঞ্চে স্মৃতি ইরানি ও রতন টাটা। বৃহস্পতিবার। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।

প্রাক্তন কর্মীর সঙ্গে একই মঞ্চ ভাগ করে নিলেন রতন টাটা।

একদা টাটা স্টিলের সাধারণ কর্মী রঘুবর দাস রাজনীতির পালাবদলে বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী। রাঁচীতে আয়োজিত শিল্প সম্মেলন ‘মোমেন্টাম ঝাড়খণ্ড গ্লোবাল ইনভেস্টর্স সামিট’-এ রাজ্যে লগ্নি টানায় প্রথম সওয়াল করার জন্য রতন টাটাকেই বেছে নিলেন তিনি। আর, তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই খনিজসমৃদ্ধ ঝাড়খণ্ডে বিনিয়োগ করার জন্য বৃহস্পতিবার দেশ-বিদেশের শিল্পপতিদের আহ্বান করলেন টাটা গোষ্ঠীর এমেরিটাস চেয়ারম্যান রতন টাটা।

রাজ্য সরকার ও সিআইআইয়ের সহযোগিতায় আয়োজিত রাঁচীর শিল্প সম্মেলনে অবশ্য শুধু রতন টাটাই যে হাজির ছিলেন, তা নয়। বলা যায় একই মঞ্চে যেন শিল্পপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ‘গেট টুগেদার’-এর আসর বসেছিল। এক দিকে উপস্থিত ছিলেন কুমারমঙ্গলম বিড়লা, এসার গোষ্ঠীর শশী রুইয়া, জিন্দল গোষ্ঠীর নবীন জিন্দল, আদানি গোষ্ঠীর রাজেশ আদানি, বেদান্ত গোষ্ঠীর অনিল অগ্রবাল, ফোর্বসের নৌসদ ফোর্বস প্রমুখ। এঁদের অনেকেই আবার ভবিষ্যতে ঝাড়খণ্ডে কারখানা গড়তে কত কোটি টাকার বিনিয়োগ করতে চলেছেন, তার খতিয়ানও আজ দিয়ে ফেললেন। অন্য দিকে, হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, সড়ক উন্নয়ন মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী, বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু, অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী জয়ন্ত সিন্‌হা, বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, যা একেবারে শিল্প-রাজনীতির রাজযোটক।

শিল্পপতিদের উদ্দেশে রতন টাটা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এক নতুন ভারতবর্ষ তৈরি হচ্ছে। সেখানে শুধু পূর্ব ভারতই নয়, সারা দেশের মধ্যে ঝাড়খণ্ড বিনিয়োগের দিক থেকে অনেক রাজ্যের তুলনায় এগিয়ে আছে। শিল্পপতিদের এই রাজ্যে বিনিয়োগের সুযোগ নেওয়া উচিত। সারা দেশের ‘ইন্ডাস্ট্রি সেন্টার’ হতে চলেছে ঝাড়খণ্ড।’’ রতন টাটার বক্তব্যের জের টেনেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, ‘‘দেশের অন্যতম উৎপাদনশীল রাজ্য হিসেবে দ্রুত উঠে আসছে ঝাড়খণ্ড। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এ রাজ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির হার জাতীয় গড়ের থেকেও ৪-৫ শতাংশ বেশি হবে।’’ এখনই তা জাতীয় গড়ের থেকে প্রায় ১% বেশি বলে অর্থমন্ত্রী জানান।

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কেন ঝাড়খণ্ড তার প্রতিবেশী রাজ্যগুলির থেকে এগিয়ে রয়েছে, সে কথা বোঝাতে গিয়ে একটি গল্প বলেন নবীন জিন্দল। তিনি বলেন, ‘‘রাঁচীর কাছেই পত্রাতুতে যখন ইস্পাত কারখানা গড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন জমি দেখতে গিয়েছিলাম। যেখানে কারখানা তৈরি হবে, সেখানে গিয়ে দেখলাম প্রায় হাজার খানেক স্থানীয় যুবক মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভাবলাম, নিশ্চয়ই এরা বিক্ষোভ দেখাবে। কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম, পুরো উল্টো। আমাদের স্বাগত জানাতেই ওরা ভিড় করেছে।’’ জিন্দলের কথায়, ‘‘কারখানা তৈরি করতে গিয়ে এ রকম উষ্ণ অভ্যর্থনা অন্য কোনও রাজ্যে পাইনি। পত্রাতুর কারখানায় এখনই ১৬ লক্ষ টন ইস্পাত উৎপাদন হচ্ছে। আগামী দিনে কারখানার আরও সম্প্রসারণ হবে। আমাদের লক্ষ্য, কয়েক বছরের মধ্যে ৬০ লক্ষ টন ইস্পাত তৈরি করা।’’ জিন্দলের সঙ্গে যেন পাল্লা দিলেন আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর কুমারমঙ্গলম বিড়লা। তিনি বললেন, ‘‘লগ্নির জন্য ঝাড়খণ্ড সব সময়েই আমার প্রিয় জায়গা। পলামুতে আমাদের বিশ্বমানের রাসায়নিক কারখানা রয়েছে। এ রাজ্যে আমাদের এখন বিনিয়োগ ৫০০০ কোটি টাকারও বেশি। বিভিন্ন কারখানায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ২২ হাজার কর্মী কাজ করেন। আগামী কয়েক বছরে আরও ৫৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।’’

দেড় দশক আগে তৈরি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জেটলি বলেন, ‘‘এ রাজ্যের জন্মের পর থেকে কোনও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল না। এখন সেই স্থিতি এসেছে। বিনিয়োগের পরিবেশও তৈরি হয়েছে। দেশের শিল্প-অধিনায়কদের একটি বড় দল রাঁচীতে এসেছেন তাঁদের ভবিষ্যৎ লগ্নির কথা জানাতে।’’ হাজির না-থাকলেও টুইট করে সম্মেলনের সাফল্য চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

অনুষ্ঠানে আগাগোড়া উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা ঝাড়খণ্ডের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। তিনি বলেন, ‘‘ক্রিকেটই হোক বা বাণিজ্য, যে কোনও কিছুতে সফল হতে গেলে ভাল ‘টিম’ প্রয়োজন। ঝাড়খণ্ডে বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ তৈরি হওয়ার কারণ হল, এখন এখানে একটা ভাল টিম রয়েছে। এই রাজ্যের নিরাপত্তাও অন্য যে-কোনও রাজ্যের থেকে ভাল।’’

আর, সবার শেষে মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস বললেন, ‘‘আগামী কাল বেশ কিছু সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হবে। যে-সব শিল্পের বাস্তবায়ন সম্ভব, সেগুলির জন্যই চুক্তি হবে। কোনও অবাস্তব পরিসংখ্যান দেব না।’’

Ratan Tata Smriti Irani Industry Politics Investment Summit Jharkhand
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy