Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সুব্রহ্মণ্যন

ফিতে পাল্টে ৭%, নইলে সাড়ে চারই

সুব্রহ্মণ্যনের দাবি, বর্তমান পদ্ধতিতে কারখানার উৎপাদনে হিসেবের ভুল সব থেকে বেশি।

প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা, অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন।

প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা, অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৯ ০৭:৩৪
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রথম দফাতেই আর্থিক বৃদ্ধি মাপার পদ্ধতিতে বদল আনা হয়েছিল। এর পরে নতুন ভিত্তিবর্ষ অনুযায়ী এক লাফে খানিকটা বেড়ে যায় বৃদ্ধির হার। যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় বিভিন্ন মহলে। এ বার মোদী সরকারেরই প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন দাবি করলেন, ২০১১-১২ থেকে ২০১৬-১৭ সালে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির গড় হার বাস্তবেই ৭ শতাংশের (সরকারি হিসেব) অনেক নীচে। ৪.৫ শতাংশের আশেপাশে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্রে সুব্রহ্মণ্যন দাবি করেছেন, তাঁর নিজের পদ্ধতি অনুযায়ী অর্থনীতির ১৭ রকম সূচক থেকে তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। পরিসংখ্যান মন্ত্রকের অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, রাষ্ট্রপুঞ্জের গৃহীত আধুনিকতম মাপকাটি মেনেই বৃদ্ধির হিসেব কষা হচ্ছে।

সুব্রহ্মণ্যনের দাবি, বর্তমান পদ্ধতিতে কারখানার উৎপাদনে হিসেবের ভুল সব থেকে বেশি। ২০১১ সালের আগে কারখানার উৎপাদন মূল্যের সঙ্গে সরাসরি শিল্পোৎপাদন সূচক ও কারখানার উৎপাদনজাত পণ্য রফতানির সম্পর্ক ছিল। পরে তা ভেঙে যায়। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি সরকারি হিসেবে বৃদ্ধির ভুল হারের উপরে ভিত্তি করেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নিজেদের সুদের হার ঠিক করেছে? রাজকোষ ঘাটতির হিসেবও কি কষা হয়েছে সেই জিডিপি ধরেই? সে ক্ষেত্রে তো আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার, বিশ্ব ব্যাঙ্কের কাছেও বৃদ্ধির ভুল হার পাঠানো হচ্ছে! বিনিয়োগকারীরাও লগ্নির অঙ্ক কষছেন সেটা ধরে নিয়েই। সুব্রহ্মণ্যন নিজেও মন্তব্য করেছেন, ‘‘দেশের নীতির গাড়ি ত্রুটিপূর্ণ। খুব সম্ভবত ভেঙে যাওয়া স্পিডোমিটার নিয়ে চালানো হচ্ছে।’’

সুব্রহ্মণ্যমের সঙ্গে অবশ্য একমত নন দেশের প্রথম মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘যদি আর্থিক বৃদ্ধির হার এতই কম হত, তা হলে সরকারকে ঘাটতি মেটাতে অনেক বেশি সুদে ঋণ নিতে হত।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, দেশের আয় অনেক কারণে বেশি হতে পারে। উৎপাদনের পরিমাণ না বেড়ে গুণগত মান বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদনের মূল্য বাড়তে পারে। যেমন পুরনো মডেলের জায়গায় নতুন ও উন্নততর মডেলের গাড়ি তৈরি হলে আয় বাড়তে পারে। আবার বা মোটা চালের বদলে বাসমতী চাল উৎপাদন হলেও তা হতে পারে। প্রণববাবু বলেন, ‘‘আমার ধারণা, সুব্রহ্মণ্যন এই বিষয়টি বাদ দিয়েছেন।’’ অনেকে আবার বলছেন, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার, বিশ্ব ব্যাঙ্ক এবং বিভিন্ন মূল্যায়ন সংস্থার নিজেদের কষা হিসেবও তো ভারতের সরকারি হিসেবের কাছাকাছি থাকে। সেই সমস্ত পদ্ধতিও কি ভুল?

সুব্রহ্মণ্যন অবশ্য দাবি করেছেন, এই ‘ভ্রান্তি’র পিছনে তিনি কোনও রাজনীতি দেখছেন না। ইউপিএ জমানাতেও ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার বেড়েছে নতুন মাপকাঠিতে। তা সত্ত্বেও অবশ্য রাজনৈতিক বিতর্ক এড়ানো যায়নি। প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার হিসেবকে অস্ত্র করার চেষ্টা করেছে কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, উন্নয়নের বিষয়ে দেশকে অন্ধকারে রাখা উচিত নয়।

প্রশ্ন উঠেছে, সুব্রহ্মণ্যন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা থাকাকালীন কেন এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি? তাঁর যুক্তি, বিভিন্ন ধরনের আর্থিক পরিসংখ্যানের মধ্যে যে স্ববিরোধ রয়েছে, তা নিয়ে তিনি ও তাঁর দফতর মাথা ঘামিয়েছে। সরকারের কাছেও এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arvind Subramanian Economy Growth
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE