Advertisement
E-Paper

বসুন্ধরার ডাকে এ রাজ্য থেকে লগ্নি রাজস্থানে

দেখা কলকাতায়। কথা কলকাতায়। লগ্নি রাজস্থানে। বস্ত্র পার্ক গড়তে রাজস্থান সরকারের সঙ্গে সমঝোতাপত্র (মউ) সই করল পশ্চিমবঙ্গের সংস্থা ভিকো ইনফ্রাস্ট্রাকচার। রাজস্থানকে বস্ত্রশিল্পের লোভনীয় গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘বস্ত্র-২০১৫’ আয়োজন করেছে বসুন্ধরা রাজের সরকার।

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:০৭
মউ সই। রাজস্থানের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি বীণু গুপ্ত এবং ভিকো ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ডিরেক্টর এমকে অগ্রবাল। —নিজস্ব চিত্র।

মউ সই। রাজস্থানের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি বীণু গুপ্ত এবং ভিকো ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ডিরেক্টর এমকে অগ্রবাল। —নিজস্ব চিত্র।

দেখা কলকাতায়। কথা কলকাতায়। লগ্নি রাজস্থানে।

বস্ত্র পার্ক গড়তে রাজস্থান সরকারের সঙ্গে সমঝোতাপত্র (মউ) সই করল পশ্চিমবঙ্গের সংস্থা ভিকো ইনফ্রাস্ট্রাকচার।

রাজস্থানকে বস্ত্রশিল্পের লোভনীয় গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘বস্ত্র-২০১৫’ আয়োজন করেছে বসুন্ধরা রাজের সরকার। সোমবার জয়পুরে মউ সই হল তার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবে। এবং মঞ্চ থেকে খোদ মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, এই লগ্নির বীজ পোঁতা হয়েছিল কলকাতায়। সংস্থার ডিরেক্টর এন কে অগ্রবালও বলছিলেন, ‘‘গত ২১ এপ্রিল কলকাতা এসেছিলেন বসুন্ধরা। বলেছিলেন বিনিয়োগ করার কথা। জানতে চেয়েছিলেন, তার জন্য কী কী সুবিধা জরুরি।’’

এমনিতে এক রাজ্যের সংস্থা ব্যবসার কারণে অন্য রাজ্যেও টাকা ঢালবে, এটা স্বাভাবিক। সে ভাবে দেখলে, আকাশছোঁয়া নয় লগ্নির অঙ্কও (৩০০ কোটি টাকা)। কিন্তু তা সত্ত্বেও জন্ম নিচ্ছে জল্পনা। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এই লগ্নি পশ্চিমবঙ্গে ব্যবসা করা রাজস্থানীদের ‘ঘরে ফেরা’র শুরু নয়তো? গত এপ্রিলে শহরে এসে যে-ডাক দিয়ে গিয়েছিলেন বসুন্ধরা। আলাদা করে কথা বলেছিলেন শিল্পপতিদের সঙ্গে। যাঁদের অনেকেরই শিকড় রাজস্থানে। লক্ষ্য ছিল, যাঁরা ‘এ রাজ্যের ধুলোকে সোনা করেছেন’, তাঁদের নিজেদের মাটিতে টেনে নিয়ে যাওয়া।

এমন সম্ভাবনার কথা আরও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না রাজস্থানের শিল্প দফতরের মুখ্যসচিব তথা শিল্পোন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বীণু গুপ্তের সঙ্গে কথা বলার পর। তিনি বললেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ থেকে আরও অন্তত দু’তিনটি সংস্থা রাজস্থানে দ্রুত লগ্নি করতে আগ্রহী। ইতিমধ্যেই জমি দেখেছে তারা। কথাবার্তাও চলছে পুরোদমে।’’

রাজস্থানকে লগ্নির গন্তব্য করে তুলতে নভেম্বরেই ‘রিসার্জেন্ট রাজস্থান’ আয়োজন করছে বসুন্ধরা সরকার। অনেকটা ভাইব্র্যান্ট গুজরাতের আদলে।

অবশ্য শুধু শিকড়ের টানে যে লগ্নি আসে না, তা নতুন করে প্রমাণ করতে এই উটের দেশে ফেলুদার আর উজিয়ে আসার প্রয়োজন নেই। এবং সেটা স্পষ্ট বসুন্ধরা সরকারের শিল্পনীতিতেই। ললিত মোদী আর হালফিলের কয়লা কেলেঙ্কারিতে কিছুটা কোণঠাসা হলেও বসুন্ধরা এ দিন দাপটে বললেন, শিল্পের জন্য পরিকাঠামো প্রয়োজন। দরকার দ্রুত সব ছাড়পত্র। জরুরি ব্যবসার পথ সহজ করে দেওয়া। আর এগুলো তাড়াতাড়ি করতেই হবে। নইলে লগ্নি নিয়ে চলে যাবে পড়শি রাজ্য। তাঁর কথায়, ‘‘অন্য কারও কাছে বিনিয়োগ খোয়াতে ঘৃণা করি আমি। চাই, কোনও লগ্নি প্রস্তাব যেন শুধু সই আর আনুষ্ঠানিকতায় আটকে না-থাকে। বরং সেই প্রকল্প ডানা মেলুক দ্রুত।’’ মুখ্যমন্ত্রী দাবি করলেন, সহজে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে দেশে তাঁরা ছ’নম্বরে। বিদেশি বিনিয়োগের নিরিখে (রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসেব) তিন নম্বর।

অনুষ্ঠানের পরে বীণু গুপ্তের সঙ্গে কথা বলে তার কারণ কিছুটা আঁচ করা গেল। তিনি জানালেন, লগ্নি টানতে কর, ঋণে সুদ ইত্যাদিতে ছাড় তো তাঁরা দেনই, চেষ্টা করেন জমি-সমস্যার সমাধান করে দিতে।

তাঁর কথায়, রাজস্থানে এখন ৩২৮টি শিল্পাঞ্চল রয়েছে। কিন্তু তার ৮০ শতাংশই ভর্তি। অথচ নভেম্বরে রিসার্জেন্ট রাজস্থানের পরে হয়তো লগ্নি প্রস্তাব আসবে। তাই অনেক আগে থেকেই জমি অধিগ্রহণ করে রাখছেন তাঁরা। ৫,০০০ হেক্টর ইতিমধ্যেই সরকারের হাতে রয়েছে। লক্ষ্য, এ বছরের মধ্যে তা ৮,০০০ হেক্টরে নিয়ে যাওয়ার।

বীণুর কথায়, ‘‘বড় শিল্পের জন্য এক লপ্তে অনেকখানি জমি লাগে। তাই তা জোগাড়ের চেষ্টা করে নিগম। বিনিয়োগকারী নিজে জমি কিনলেও জোগানো হয় সব রকম সাহায্য। জমি নেওয়া হয়ে গেলে চেষ্টা করা হয় যত দ্রুত সম্ভব তার চরিত্র বদল করতে। যাতে অযথা সময় নষ্ট না-হয়।’’

তাঁর সঙ্গে কথা বলতে উদ্যোগ ভবনে পৌঁছে দেখা গেল, সময় বাঁচানোর তাগিদে শিল্পোন্নয়ন নিগম, ছোট শিল্পকে ঋণ জোগানোর দফতর, জমিতে পরিকাঠামো তৈরি করে দেওয়ার বিভাগ— সব কিছুকে এক ছাদের তলায় এনেছেন তাঁরা। চালু করেছেন এক-জানলা ব্যবস্থা। ১০ কোটি টাকার উপর বিনিয়োগ করলেই ওই সুবিধার জন্য আবেদন করা যাবে। ছুটি ১১টি দফতরে ছোটাছুটি থেকে।

অগ্রবাল অবশ্য বলছিলেন, তিনি আদতে রাজস্থানের মানুষ হলেও পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। পশ্চিমবঙ্গেও বস্ত্র পার্ক গড়তে টাকা ঢেলেছেন তাঁরা। ২০-২৫ একরের উপর এটি নিছকই একটি ব্যবসায়িক লগ্নি। যেখানে প্রকল্প শেষ হলে কাজের সুযোগ হবে অন্তত ৬,০০০ জনের। গুপ্তও বলেন, পশ্চিমবঙ্গের লগ্নি ভাঙিয়ে নিয়ে আসবেন, এমন কোনও লক্ষ্য তাঁদের নেই।

কিন্তু এক দিকে, পশ্চিমবঙ্গে লগ্নির পায়ে জমি-জটের শেকল। ঊর্ধ্বসীমার বেড়ি। সঙ্গে উপরি পাওনা লাল ফিতের ফাঁস। এত কিছুর পরেও ‘নিজের মুলুক’-এ সুবিধা সমেত লগ্নির সাদর আমন্ত্রণ সত্যিই ফিরিয়ে দেবেন সকলে? টাকা ঢালার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও শুধুমাত্র ছাড়পত্রের অপেক্ষায় দীর্ঘকাল বসে থাকবেন অনিশ্চয়তার মধ্যে? যেখানে এ দিনই রাজস্থানের শিল্পমন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ খেমসার বলছিলেন, টাকা ঢালার আগে সংস্থা আর পাঁচটি জিনিসের পাশাপাশি সরকারকেও দেখে। দেখে তার শিল্পনীতি, জরিপ করে সেই সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিও।

এর পরেও নীতি না-বদলালে, পশ্চিমবঙ্গে এখনই বড় বিনিয়োগ আসবে কি না, তার উত্তর দেবে সময়ই। কিন্তু জটায়ুকে জিজ্ঞেস করলে নির্ঘাত বলতেন, ‘‘হাইলি সাসপিশিয়াস।’’ খুব সন্দেহ আছে।

উটের দেশ জটায়ুকে মনে করালো। আবারও।

resurgent rajasthan vicco infrastructure vico infrastructure rajasthan west bengal company vastra 2015 indrajit adhikari abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy