Advertisement
E-Paper

বাজার নামার জেরে ঢালাও সুযোগ লগ্নির

মধ্যবিত্ত বস্তুত কিছুই পায়নি এ বারের বাজেট থেকে। সবচেয়ে বেশি প্রাপ্তিযোগ ঘটেছে প্রবীণ নাগরিক। এঁরা আশার তুলনায় হয়তো একটু বেশিই পেয়েছেন।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪০
অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি

অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি

অনেক দিন পরে শুক্রবার বড়সড় পতন হল শেয়ার বাজারে। আমরা কোনও কোনও সময়ে এমন আঘাত পাই, যা থেকে রক্তপাত একটু দেরিতে হয়। এ বারের বাজেটে যেন একই ঘটনা ঘটল শেয়ার বাজারে। বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণার দিন মাঝপথে এক ঝটকায় বাজার কিছুটা নামলেও পরের দিকে তার অনেকটাই সামলে নিয়েছিল দুই সূচক সেনসেক্স ও নিফ্‌টি। ধস নামল পরের দিন।

মধ্যবিত্ত বস্তুত কিছুই পায়নি এ বারের বাজেট থেকে। সবচেয়ে বেশি প্রাপ্তিযোগ ঘটেছে প্রবীণ নাগরিক। এঁরা আশার তুলনায় হয়তো একটু বেশিই পেয়েছেন।

সূক্ষ্ম বিশ্লেষণের পরে বাজারের ধারণা, বাজেটের নেতিবাচক দিকটি যথেষ্টই ভারী। যে-সব কারণে আমরা দুই সূচকের এক দিনে এত বড় পতন দেখলাম, তা মোটামুটি এই রকম:

• ইকুইটি শেয়ার এবং ইকুইটি নির্ভর ফান্ডে মূলধনী লাভ-কর বসা। ব্যাঙ্কে ক্রমাগত সুদ কমতে থাকায় বহু লগ্নিকারী যখন একটু বেশি আয়ের সন্ধানে শেয়ার এবং ফান্ডে ঝুঁকতে শুরু করেছিলেন, তখন অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাবে তাঁদের উৎসাহে ভাটা পড়বে।

• ইক্যুইটি ফান্ডের ডিভিডেন্ডে করের থাবা। এই কর এড়াতে হলে ফান্ডে ডিভিডেন্ড প্রদানের শর্তে নয়, লগ্নি করতে হবে বৃদ্ধির শর্তে। ছোট লগ্নিকারীরা শেয়ার এবং ইকুইটি ইউনিট এমন ভাবে ভাঙাবেন, যাতে লাভ ১ লক্ষ টাকার মধ্যে থাকে।

• রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখা নিয়ে সংশয়। প্রভাব ভারতের ক্রেডিট রেটিংয়ের উপরও পড়তে পারে।

• কৃষির সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবে মূল্যবৃদ্ধি বাড়লে সুদ কমার সম্ভাবনা হ্রাস।

• উপযুক্ত কারণ ছাড়াই বাজেটের আগে দুই সূচকের দৌড়

অর্থাৎ পতন হওয়ারই ছিল। বাজার ছিল একটি কারণের সন্ধানে। আর বাজেট ঘোষণার মাধ্যমে তা জুগিয়ে দিলেন জেটলি, বাজারের জন্য এই সব নেতিবাচক প্রস্তাবের মাধ্যমে।

তবে বাজারের জন্য বাজেটে কিছুই নেই, তা কিন্তু নয়। মোটা বরাদ্দ করা হয়েছে পরিকাঠামো শিল্পে। বড় আকারের অর্থ বরাদ্দ হয়েছে কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন খাতে। পরোক্ষ ভাবে এই পথে শিল্প অনেকটাই সমর্থন পাবে।

এক ঝলকে

• বদলায়নি ব্যক্তিগত আয়করের স্তর ও হার

• করের উপর ১% সারচার্জ বৃদ্ধি

• এক দশক বাদে ফিরেছে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন। মোট আয় থেকে সর্বোচ্চ ছাড় ৪০ হাজার, যা থেকে বাদ যাবে পরিবহণ ও চিকিৎসা ভাতা

• সংস্থার আয় ৫০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত হলে, কোম্পানি কর ৩০% থেকে কমে ২৫%

• ইকুইটি শেয়ার এবং ইকুইটি ফান্ডে বছরে ১ লক্ষ টাকার বেশি লাভে (১ বছরের বেশি ধরে রাখার পরে) ১০% দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভকর

• ইকুইটি ফান্ডে ডিভিডেন্ডের উপর ১০% হারে ডিভিডেন্ড বণ্টন কর

• প্রবীণদের জন্য ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরের জমায় করমুক্ত সুদের সীমা বৃদ্ধি-সহ কর ছাড়ের একগুচ্ছ সুবিধা

• ১০ কোটি পরিবারের জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে স্বাস্থ্য বিমা

• ভারতীয় রেলের জন্য ১.৪৮ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ

• গ্রামোন্নয়নে বরাদ্দ মোট ১,১২,৪০৪ কোটি

• কিসান ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা মাছচাষ ও পশুপালনেও

• ২.৫ লক্ষ টাকা বা তার বেশি মূল্যের আর্থিক লেনদেনে প্যান দাখিল বাধ্যতামূলক

• শিক্ষা সেস ৩% থেকে বেড়ে ৪%

এ বারের ২৫ শতাংশ কোম্পানি করের হারের সুবিধা পাবে ২৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত আয়, এমন সব সংস্থা। শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ কমবেশি ৮০০টি সংস্থা এতে লাভবান হবে।

বাজার তো এক ঝটকায় এতটা (সেনসেক্স ৮৪০ অর্থাৎ ২.৩৪%) পড়ল। এ বার প্রশ্ন, সামনে কী। বাজার যে-উচ্চতায় উঠেছিল, তাতে আরও কিছুটা পতনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অন্য দিকে কম দামের সুযোগ নিতে বেশ কিছু ক্রেতাও ভিড় জমাবেন বাজারে। ফলে বড় পতনের আশঙ্কা এখনই করা হচ্ছে না।

গত সপ্তাহে যে-ক’টি সংস্থার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তা কিন্তু মন্দ নয়। বাজেটে ২০১৮-১৯ সালের জাতীয় আয় বৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা (৭.২-৭.৫ শতাংশ) ধার্য করা হয়েছে, তা কিন্তু বেশ আশাব্যঞ্জক। এই কারণে বড় মেয়াদে বাজার নিয়ে লগ্নিকারীরা তেমন চিন্তিত নন। তাই হঠাৎ পড়ে যাওয়া বাজারে লগ্নির সুযোগ ছাড়তে চাইবেন না অনেকেই।

বাজারের এখন সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথা অশোধিত তেলের দাম নিয়ে। দাম আরও উঠলে অর্থনীতি এবং শেয়ার বাজার যে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে, তাতে সন্দেহ নেই।

Arun Jaitley share market Investment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy