Advertisement
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Economy

১৪৫ কোটির দেশে কর দেন মাত্র ৪ কোটি! তাদের জন্য করছাড়ে অর্থনীতির লাভ কতটা, উঠছে প্রশ্ন

প্রশ্ন হল, নির্মলার ঘোষণায় সত্যিই কেনাকাটা বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈষম্য কমবে কি? উত্তর কিন্তু নিশ্চিন্ত করার মতো নয়।

সামগ্রিক ভাবে বাজেট মন কাড়তে পারেনি বাজারের।

সামগ্রিক ভাবে বাজেট মন কাড়তে পারেনি বাজারের। —ফাইল চিত্র ।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৪২
Share: Save:

বাজেট বক্তৃতার শেষ পর্বের আগে পর্যন্ত তেমন চমক ছিল না। অন্তিম লগ্নে ‘শেষ বলে ছয় মারার ঢঙে’ দরাজ হস্তে করছাড় ৫ লক্ষ টাকা বাড়িয়ে মধ্যবিত্তের মন জয় করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বদলে দিলেন করের স্তরও। ফলে ২৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কমছে তার হার। আর এই দুই অস্ত্রেই এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করলেন তিনি। এক দিকে, সাধারণ মানুষের হাতে টাকা জুগিয়ে বাজারে চাহিদা বাড়ানো ও তাতে ভর করে আর্থিক বৃদ্ধিতে গতি আনা। অন্য দিকে দেশে আর্থিক বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকারের তরফে তা কমানোর ইতিবাচক বার্তা দেওয়া। কিন্তু প্রশ্ন হল, নির্মলার ঘোষণায় সত্যিই কেনাকাটা বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈষম্য কমবে কি? উত্তর কিন্তু নিশ্চিন্ত করার মতো নয়।

বস্তুত, বাজেট নিয়ে সব মহল খুশি নয়। কারণ একাংশ বলছেন, কেন্দ্র আয়কর খাতে ১ লক্ষ কোটি টাকা রোজগার ছেড়ে দিয়ে যাঁদের জন্য দরাজ হস্ত হল, তাঁরা মোট জনসংখ্যার অতি ক্ষুদ্র অংশ। প্রায় ১৪৫ কোটি দেশবাসীর কমবেশি মাত্র ৪ কোটি কর দেন। ফলে যাঁরা প্রত্যক্ষ ভাবে করে সুরাহা পেলেন না, নিশ্চিত ভাবে তাঁদের আয় বাড়ানোর তেমন প্রস্তাব চোখে পড়েনি। তা ছাড়া, করছাড়ের সুবিধা মধ্যবিত্তদের পাশাপাশি ধনী ও অতিধনীরাও পাবেন। অথচ আয় না বাড়লেও চড়া দামের বাজারে জিএসটি বাবদ খরচ মেটাচ্ছেন গরিব মানুষরাও। জানুয়ারিতেই কেন্দ্রের জিএসটি সংগ্রহ ১২.৩% বেড়ে হয়েছে ১.৯৬ লক্ষ কোটি টাকা। কাজেই এক শ্রেণির হাতে টাকা বাড়বে বটে। কিন্তু বৈষম্য কমবে বা কেনাকাটা বাড়বে কি না, তা এখনই বলা কঠিন। যাঁদের কর সাশ্রয় হল, তাঁরা অনেকে হয়তো তা দিয়ে পুরনো ঋণ শোধ করবেন। আবার একাংশ ভবিষ্যতের জন্য জমাবেন।

মধ্যবিত্ত অবশ্য খুশি। আশাতীত ভাবে করমুক্ত আয়ের সীমা ৭ লক্ষ টাকা থেকে বেড়ে ১২ লক্ষ হয়েছে (রিবেট সাপেক্ষে)। এ ছাড়াও নতুন কর কাঠামোয় ২৪ লক্ষ পর্যন্ত আয়ে করের হার কমানো হয়েছে বিভিন্ন স্তরে। উপরন্তু চাকুরিজীবীদের জন্যে বহাল ৭৫,০০০ টাকার স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন। প্রবীণ নাগরিকেরা স্বস্তিতে তাঁদের ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুদে উৎসে কর কাটা হবে না জানানোয়। আগে এই সীমা ছিল ৫০,০০০ টাকা। করে ছাড়ের বিশদ তথ্য এখন সকলের জানা। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট করা দরকার। যাঁদের আয় ১২ লক্ষ বা ১২.৭৫ লক্ষ টাকার (স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ধরে) মধ্যে, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে তাঁদের পুরো আয়ই করমুক্ত। আয় এর বেশি হলে তাঁরা ৮৭এ ধারায় এই কর রিবেট পাবেন না। তখন কর কষা হবে করমুক্ত প্রথম ৪ লক্ষ টাকার পর থেকে। যেমন, ১২ লক্ষ পর্যন্ত আয়ে কর বাঁচবে ৮০,০০০। কিন্তু আয় ১৩ লক্ষ হলেই তা নামবে ২৫ হাজারে। যাঁদের আয় ১২ লক্ষ থেকে অল্প কিছু বেশি, তাঁরা কী সুবিধা পাবেন, সেই প্রশ্ন রয়েছে। আয়কর দফতর হয়তো তার ব্যাখ্যা দেবে। নতুন কাঠামোয় করছাড় মেলায় বহু মানুষ পুরনোটি ছাড়তে পারেন।

তবে সামগ্রিক ভাবে বাজেট মন কাড়তে পারেনি বাজারের। বাজেট বক্তৃতার আগে থেকে নানা আশায় ভর করে সূচক তেতে ছিল। বক্তৃতা যত এগোতে থাকে, ততই মুষড়ে পড়ে বাজার। এক সময়ে বেশ খানিকটা তলিয়েও যায়। শেষবেলায় করছাড়ের কথা ঘোষণায় একটু ওঠে। সেনসেক্স ৫.৩৯ উঠে হয় ৭৭,৫০৫.৯৬। কিন্তু নিফ্‌টি খোয়ায় ২৬.২৫ পয়েন্ট।

বিমায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির সীমা ৭৪% থেকে ১০০% করার প্রস্তাবে বিমা সংস্থাগুলির শেয়ার দর প্রথমে বাড়লেও, পরে পড়েছে। মধ্যবিত্তের হাতে খরচের টাকা থাকার আশায় প্রাণ পায় ভোগ্যপণ্য সংস্থাগুলির শেয়ার। তবে রেল ও প্রতিরক্ষা তেমন কিছু না পাওয়ায় হতাশ সংস্থাগুলি। একই হাল ব্যাঙ্কিং ও পরিকাঠামো সংস্থার। মূলধনী এবং প্রতিরক্ষার বরাদ্দ বৃদ্ধি বাজারকে খুশি করেনি। ছোট-মাঝারি শিল্প ও পর্যটনের জন্য কিছু ভাল ঘোষণা আছে। খুলবে কর্মসংস্থানের সুযোগ। তাতে লগ্নিকারীরাও খুশি। তবে দামি গাড়ি, বাইক-সহ কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক ছাঁটাইয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এটা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের শুল্ক-হুমকির জেরে তাঁর মন রাখতে নয়তো?

শনিবার বাজারে ছিল না বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। সোমবার তাদের প্রতিক্রিয়া মিলবে। এ ছাড়াও চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে বিভিন্ন প্রস্তাবের। বাজার এ বার তাকিয়ে সুদ নিয়ে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্তের দিকে। ৫-৭ ফেব্রুয়ারি ঋণনীতি বৈঠক। আশা, শিল্পে গতি আনতে সুদ কমানো হতে পারে। প্রত্যাশা মিললে বাজার চাঙ্গা হবে। নইলে ফের ধাক্কা খেতে পারে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

অন্য বিষয়গুলি:

Union Budget 2025 Budget
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy