কাদের ছাঁটাই করার যেতে পারে? নির্বাচন করতে সংস্থার ম্যানেজার এবং টিম লিডারদের কাছ থেকে কর্মীদের তালিকা চেয়ে পাঠাল টিসিএস (টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস)। তেমনটাই জানা গিয়েছে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী। এ-ও জানা গিয়েছে, যে ১২ হাজার কর্মীদের ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে এক তৃতীয়াংশ এমন কর্মী ছাঁটাই করা হবে, যাঁদের হাতে বর্তমানে কোনও কাজ নেই বা আগে থেকেই ‘বেঞ্চড’ করে রাখা হয়েছে। বাকিদের ছাঁটাই করা হবে ম্যানেজারদের পাঠানো ওই নির্দিষ্ট তালিকা থেকে।
ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ভারতের সর্ববৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএসে। বিশ্বব্যাপী ১২ হাজারেরও বেশি কর্মী ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টাটা গোষ্ঠীর মালিকানাধীন সংস্থাটি, যা তাদের মোট কর্মীসংখ্যার প্রায় ২ শতাংশ। জানা গিয়েছে, টিসিএসের ছাঁটাইয়ের ফলে চাকরি হারাবেন মোট ১২,২৬১ জন কর্মী, যাঁদের বেশির ভাগই শীর্ষ এবং মাঝারি পদে কর্মরত। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে গোটা প্রক্রিয়াটা শেষ হবে বলে জানা গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিশ্ব জুড়ে হইচই পড়েছে। এর মধ্যেই জানা গিয়েছে, কর্তৃপক্ষের তরফে ছাঁটাই করা হবে এমন কর্মীদের নাম চূড়ান্ত করতে বিভাগীয় প্রধানদের কাছ থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছে।
বর্তমানে টিসিএসের মোট কর্মীর সংখ্যা ৬ লক্ষ ১৩ হাজার। এর দু’শতাংশ, অর্থাৎ সব মিলিয়ে ১২ হাজার ২৬১ জন ছাঁটাই করছে সংশ্লিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। রবিবার বিবৃতি জারি করে টিসিএস জানিয়েছে, সংস্থাকে ‘ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত’ করার বিস্তৃত কৌশলের অংশ হিসাবেই ছাঁটাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে প্রযুক্তি, এআই, বাজার সম্প্রসারণ এবং কর্মী পুনর্বিন্যাসের উপর নজর দেবে সংস্থাটি।
আরও পড়ুন:
কিন্তু কোন কর্মীদের মাথার উপর ছাঁটাই-খাঁড়া ঝুলছে? ইতিমধ্যেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন সংস্থার চিফ এগজ়িকিউটিভ অফিসার বা সিইও কে কৃত্তিবাসন। কোনও সুনির্দিষ্ট দফতর বা এলাকাকে যে নিশানা করা হচ্ছে না তা স্পষ্ট করেছেন তিনি। কৃত্তিবাসনের কথায়, ‘‘শীর্ষপদ থেকে শুরু করে নিচু স্তর পর্যন্ত কর্মীদের একটা পিরামিডের আকারে রাখা হয়েছে। এঁদের মধ্যে একাংশের হাতে কোনও কাজ নেই। দিনের পর দিন তাঁরা বসে থাকছেন। খানিকটা দলের অতিরিক্ত খেলোয়াড়ের মতো। প্রাথমিক ভাবে এঁদেরই বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ এ ব্যাপারে অবশ্য সুনির্দিষ্ট কোনও পদের উল্লেখ করেননি তিনি। একই সঙ্গে কৃত্তিবাসন জানিয়েছেন, ছাঁটাইয়ের কারণ শুধুমাত্র কৃত্রিম মেধা বা এআই নয়, এর নেপথ্যে কর্মীদের দক্ষতার অভাবও রয়েছে। কৃত্তিবাসন বলেছেন, ‘‘এআই-এর কারণে উৎপাদনশীলতা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে বলে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কর্মীদের দক্ষতার অভাবও রয়েছে বা যেখানে আমরা মনে করি আমরা কাউকে মোতায়েন করতে পারিনি, সেখানে এআই ব্যবহার করা হয়েছে।’’
আরও পড়ুন:
হঠাৎ ছাঁটাইয়ের অভূতপূর্ব প্রকৃতির কথা স্বীকার কৃত্তিবাসন এ-ও আশ্বাস দিয়েছেন যে, পুরো বিষয়টি খুব ‘সহানুভূতি’র সঙ্গে পরিচালনা করা হবে। চাকরিহারা কর্মীরা কী কী আর্থিক সুযোগ সুবিধা পাবেন, তারও বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন কৃত্তিবাসন। তিনি জানিয়েছেন, ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের নোটিস পিরিয়ডের টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হওয়ার কারণে অতিরিক্ত বিচ্ছেদকালীন টাকা পাবেন তাঁরা। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের বিমার সুরক্ষা সম্প্রসারণ করতে পারে টিসিএস। তাঁরা যাতে দ্রুত অন্য জায়গায় চাকরি পান, সে ব্যাপারেও সাহায্য করবে দেশের সর্ববৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা।
অন্য দিকে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক সূত্রের খবর, তারাও পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে। যোগাযোগ রাখছে টাটা গোষ্ঠীর সংস্থাটির সঙ্গে। বুঝতে চেষ্টা করছে কেন এই পরিস্থিতি। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, এখন আর্থিক কর্মকাণ্ডের গতি বাড়াতে কর্মসংস্থানে জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। নতুন নিয়োগে চালু হয়েছে উৎসাহ ভাতা। ফলে টিসিএসের ঘটনা সরকারের কাছেও উদ্বেগের।