বাজারে কেনাকাটা যে কমছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে টানা তিন মাস ধরে জিএসটি থেকে আয় ১ লক্ষ কোটি টাকার নীচেই রয়ে গিয়েছে। অথচ অর্থ মন্ত্রক এই খাতে মাসে ১.১৮ লক্ষ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য স্থির করেছে। সেপ্টেম্বরে আদায় হয়েছিল ৯১,৯১৬ কোটি টাকা। যা ছিল ১৯ মাসে সর্বনিম্ন। অক্টোবরে তা সামান্য বেড়ে ৯৫,৩৮০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। কিন্তু তা-ও ২০১৮ সালের অক্টোবরের তুলনায় সেই অঙ্ক প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা কম।
আদায় কত
• অগস্ট ৯৮,২০২
• সেপ্টেম্বর ৯১,৯১৬
• অক্টোবর ৯৫,৩৮০
* কর সংগ্রহের পরিমাণ কোটি টাকায়
সমস্যা যেখানে
• অর্থ মন্ত্রকের লক্ষ্য মাসে ১.১৮ লক্ষ কোটি জিএসটি আদায়। এই মুহূর্তে যার দেখা নেই।
• টান পড়েছে সেস খাতে রোজগারেও। অক্টোবরে এই আয় ৭৬০৭ কোটি টাকা।
• বিলাসবহুল ও পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক পণ্যে জিএসটি অতিরিক্ত সেস বসিয়ে রাজ্যগুলিকে দেয় ক্ষতিপূরণের টাকা আয় হয়। ক্ষতিপূরণ বাবদ মাসে লাগে প্রায় ১৩,০০০ কোটি টাকা। কিন্তু গত অগস্ট পর্যন্ত সেস ও ক্ষতিপূরণের ঘাটতি প্রায় ২৪,০০০ কোটি টাকা।
অভিযোগ
• পশ্চিমবঙ্গে অগস্ট ও সেপ্টেম্বরে জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ১৪৩৩ কোটি টাকা বাকি ফেলেছে কেন্দ্র।
• জিএসটিতে জালিয়াতি-প্রতারণা বন্ধ করতে ফাঁকফোকর বোজানোর কথা বারবার বললেও কানে তোলা হয়নি।
• কেন্দ্রের থেকে এখনও জিএসটি ক্ষতিপূরণ না মেলায় রাজ্যের কোষাগার থেকে রোজকার খরচ চালানোই কঠিন হয়েছে, দাবি কেরলের।
বিলাসবহুল ও পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক পণ্যের উপর জিএসটি অতিরিক্ত সেস বসিয়ে রাজ্যের ক্ষতিপূরণের টাকা আয় হয়। অর্থ মন্ত্রক সূত্র বলছে, সেই সেস বাবদ আয়েও টান পড়েছে। অক্টোবরে সেস থেকে কেন্দ্রের ঘরে এসেছে মাত্র ৭৬০৭ কোটি। যেখানে রাজ্যগুলিকে জিএসটি ক্ষতিপূরণ মেটাতে মাসে প্রায় ১৩,০০০ কোটি টাকা লাগে। অগস্ট পর্যন্ত সেস বাবদ আয় ও জিএসটি ক্ষতিপূরণের মধ্যে ঘাটতি প্রায় ২৪,০০০ কোটি টাকা। সেই কারণেই রাজ্যের বকেয়া মেটাতে দেরি হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রকের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের জিএসটি আয় আসলে অগস্ট-সেপ্টেম্বরে উৎসবের মরসুমের আগে কেনাকাটার কর থেকে এসেছে। এর অর্থ উৎসবের আগেও বিক্রিবাটা তেমন হয়নি। অক্টোবরে দুর্গাপুজো-দীপাবলিতে জিনিসপত্রের চাহিদা বেড়েছিল কি না, তা নভেম্বরের পরিসংখ্যান এলে বোঝা যাবে।’’
পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের মতে, জিএসটি প্রতারণাও এর বড় কারণ। সরকারি সূত্রের খবর, সোমবারই অমিতবাবু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে এ নিয়ে কড়া চিঠি লিখেছেন। তাঁর দাবি, এ বিষয়ে দ্রুত জিএসটি পরিষদের বৈঠক ডাকা হোক। জিএসটি থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর রাস্তা খুঁজতে সম্প্রতি অফিসারদের নিয়ে কমিটিও তৈরি হয়েছে। অমিতবাবু চিঠিতে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘অফিসাররা কিছু স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ ও ব্যবস্থার উন্নতির সুপারিশ করতে পারেন। তবে তা কি যথেষ্ট?’
চিঠিতে তাঁর অভিযোগ, ‘‘জিএসটিতে জালিয়াতি-প্রতারণা বন্ধ করতে ফাঁকফোকর বোজানোর জন্য বারবার বলেছি। তা সত্ত্বেও জিএসটি পরিষদে কোনও আলোচনা হয়নি। গত দু’এক বছরে এই কেলেঙ্কারি সব সীমা ছাড়িয়েছে। কিছু অসৎ ব্যবসায়ী কাঁচামালে মেটানো করের ভুয়ো বিল দেখিয়ে টাকা দাবি করায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। কিছু রিপোর্ট দেখে মনে হচ্ছে, রফতানিতেও এই প্রতারণা হচ্ছে। অর্থাৎ শুধু কর ফাঁকি নয়, যে ব্যবসা হয়নি তার জন্য কর ছাড় নেওয়া হচ্ছে। অথচ এ নিয়ে কোনও টাস্ক ফোর্স তৈরি হয়নি।’’ অমিতের দাবি, ‘বিজনেস ইন্টেলিজেন্স’ ব্যবস্থা গড়ে প্রতি রাজ্যে এর শাখা তৈরি হোক।