টাকার দাম রোজই নামছে। তার সঙ্গে বাজেটের আগে মোদী সরকারের অর্থ মন্ত্রকের চিন্তাও বাড়ছে। তাদের আশা ছিল, আর্থিক বৃদ্ধির হারে গতি আনতে অর্থমন্ত্রী ১ ফেব্রুয়ারি বাজেটে বেশ কিছু ঘোষণা করবেন। তার পরে একই লক্ষ্যে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমাবে। কিন্তু টাকা যে ভাবে পড়ছে, তাতে সুদ কমানো নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
সরকারি সূত্রের দাবি, পতন রুখতে আরবিআই ডলার বিক্রি করছিল। ফলে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় টাকা পড়ছিল কম। কিন্তু তাতে রফতানির বাজারে ভারতীয় পণ্যের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, সোমবার থেকে আরবিআই হস্তক্ষেপ কমিয়েছে। অথচ অনেকেই ডলার মজুত করছেন। ফলে টাকা আরও তলিয়ে গিয়েছে।
মন্ত্রকের আশঙ্কার কারণ, এতে আমদানির খরচ বাড়ছে। চড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি, অর্থাৎ আমদানি-রফতানির ফারাক। গত নভেম্বরে যা ৩৭৮০ কোটি ডলার ছুঁয়ে নজির গড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি চিন্তা, তেল-গ্যাস, ভোজ্য তেল, ডালের আমদানির খরচ বৃদ্ধি। এতে মূল্যবৃদ্ধি চড়ার আশঙ্কা। ফলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সুদের হার কমানো কঠিন হবে। অথচ সেটা হলে ব্যাঙ্কগুলি ঋণে সুদ কমায়। ফলে অর্থনীতিতে গতি আসে। এই অবস্থায় কেন্দ্রের একমাত্র স্বস্তি, ডিসেম্বরে মূল্যবৃদ্ধির ৫.২ শতাংশে নেমে আসা। এতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে সুদ কমানোর সুযোগ খুললেও টাকার পতন তাতে জল ঢালতে পারে।
ইউপিএ জমানায় টাকার দাম পড়ার সময় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বয়সের সঙ্গে ডলারের দামের তুলনা করে কটাক্ষ করতেন। আজ কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ সেই ইঙ্গিত করে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় মোদীর বয়স ছিল ৬৪ বছর। ডলার ছিল ৫৮.৫৮ টাকা। তিনি টাকাকে আরও মজবুত করার কথা বলেন। তাঁর পূর্বসূরির বয়স তুলে কটাক্ষ করেন। এখন মোদীর বয়স ৭৫ হতে চলেছে। ডলার ৮৬ টাকা ছাপিয়ে গিয়েছে। মোদী নিজের তৈরি বোমার আঘাতে নিজেই উড়ে যাচ্ছেন।’’ কংগ্রেসের কটাক্ষ, টাকার দামের সঙ্গে মোদীর ভাবমূর্তিরও পতন হচ্ছে। কেন্দ্র অর্থনীতিতে যে অব্যবস্থা তৈরি করেছে, তারই ফল দেখা যাচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের অবশ্য যুক্তি, টাকা নামছে ডলারের দাম বাড়ছে বলে। যার কারণ, আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল হওয়া। সে দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদের হার সামান্য কমাবে, এই আশায় বন্ডে আয় বৃদ্ধি। তাই লগ্নি শেয়ার থেকে সেখানে সরছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)